জমে উঠেছে ১১তম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার-২০২৪। শুক্রবার সকাল থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আগমনে মুখর ছিল ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) মেলা প্রাঙ্গণ। আকর্ষণীয় ছাড় ও উপহারের কারণে ক্রেতারা স্টলে ভিড় করছে, কেউ কেউ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটছে। মেলায় ছাড় দেওয়ায় ক্রেতারা যেমন খুশি, তেমনি বিক্রি বেশি হওয়ায় বিক্রেতারাও আনন্দিত।
আয়োজকরা বলছেন, বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় পর্যটন বিচিত্রার আয়োজনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও ট্যুরিস্ট পুলিশ বাংলাদেশের সহযোগিতায় এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলার প্রবেশমূল্য ৩০ টাকা, প্রবেশ কুপনের বিপরীতে র্যাফল ড্র বিজয়ীদের জন্য থাকছে এয়ারলাইনস টিকিটসহ বেড়ানোর আকর্ষণীয় গিফট ভাউচার। মেলায় রয়েছে পর্যটন মৌসুমে দেশ-বিদেশে বেড়ানোর বিভিন্ন আকর্ষণীয় ভ্রমণ অফার, হোটেল, রিসোর্ট বা প্যাকেজ বুকিংসহ বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা। এ ছাড়া পর্যটনবিষয়ক সেমিনার, শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) মিটিং ও চায়না, ফিলিপিন্স এবং বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দেশে-বিদেশের বিভিন্ন ভ্রমণ নিয়ে হাজির বিক্রেতারা
মেলায় দেশি-বিদেশি ছোট-বড় অনেক স্টলের দেখা পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে দেশের ভেতরে বিভিন্ন ভ্রমণ নিয়ে ছোট ট্যুর গ্রুপগুলো মেলায় হাজির হয়েছে। এই গ্রুপগুলোর একটি হলো ট্যুর গ্রুপ বিডি। তারা টাঙ্গুয়ার হাওর, সেন্ট মার্টিন ও সাজেক ভ্রমণের পরিকল্পনা নিয়ে মেলায় হাজির হয়েছে।
ট্যুর গ্রুপ বিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাফসানজনি বলেন, ‘অনলাইন ট্যুরিজমের প্রচারটি আমরা মেলার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। টাঙ্গুয়ার হাওরে বোর্ড ৬০ হাজার থেকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া দেওয়া হয়। ব্যক্তিমাফিক ভ্রমণে চার হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়ে থাকে। মেলায় যারা সরাসরি বুকিং করছে তাদের ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে।’
নদী ভ্রমণ নিয়ে মেলায় হাজির হয়েছে ঢাকা ডিনার ক্রুজ।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘আমরা মেলায় শীতলক্ষ্যা, মেঘনা ও বুড়িগঙ্গায় নৌভ্রমণ নিয়ে এসেছি। আপনারা জানেন, আমাদের দেশের ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের বেশির ভাগই নদীপথে ঘুরতে পছন্দ করে। আমরা ঢাকার আশপাশের তিনটি নদীতে স্বল্পমূল্যে ভ্রমণ নিয়ে এসেছি। আমরা প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। মানুষ আসছে আমাদের সঙ্গে কথা বলে আগ্রহ প্রকাশ করছে।’
এ ধরনের ভ্রমণের পাশাপাশি শুধু নারীদের ভ্রমণ নিয়ে মেলায় এসেছে লেডি বার্ড। প্রতিষ্ঠানটির ব্যাবসায়িক উন্নয়নের নির্বাহী ফেরদৌসী রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেক নারী একা কিংবা কয়েকজন মিলে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। কিন্তু বেশির ভাগ সময় তাঁদের ছেলেদের সঙ্গেই ট্যুরে যেতে হয়। কারণ ট্যুর গ্রুপগুলো ছেলে-মেয়ে উভয়কে নিয়েই ট্যুর আয়োজন করে থাকে। বেশির ভাগ নারী সেই গ্রুপগুলোতে ভ্রমণ করতে নিরাপদ মনে করেন না। সে জন্য তাঁরা ভ্রমণ থেকে বিরত থাকেন। আমরা তাঁদের জন্য দেশে-বিদেশে ভ্রমণের ব্যবস্থা করে থাকি।’
এসব গ্রুপের পাশাপাশি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, মালদ্বীপ, চায়না, ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম, ভুটান, সিঙ্গাপুরের কয়েকটি ভ্রমণ গ্রুপ ও প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ছাড় দিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছেন। তারাও প্রচুর সাড়া পাচ্ছে বলে জানিয়েছে।
ছাড় দেওয়ায় খুশি ক্রেতারা
স্ত্রীসহ মেলায় প্রবেশ করতেই কক্সবাজারের ভ্রমণ বুকিং করেন বেসরকারি চাকরিজীবী নাজমুল হাসান। কাঙ্ক্ষিত ছাড় পেয়ে আবার তিনি মালদ্বীপের ভ্রমণের বিষয়েও আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘মেলা উপলক্ষে ভালো ছাড় পেয়েছি। এ উপলক্ষে ভাবলাম, আগে কক্সবাজার যাই, এরপর মালদ্বীপ। এমন মেলা অন্তত ছয় মাস পর পর হওয়া উচিত।’
পাঁচ দিনের সফরে মালদ্বীপের টিকিট নিয়েছেন রাজধানীর বেসরকারি মো. নাফিস ইমতিয়াজ। মেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মেলার শুরুর দিন আসতে পারিনি; তাই আজকের দিনটা মিস করলাম না। মালদ্বীপের টিকিট নিয়েছি। সাধারণত এ সময় কোনো ডিসকাউন্ট থাকে না, তার পরও মেলায় এসে ভালো একটা ডিসকাউন্ট পেয়েছি।’
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন