আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে আরও ঋণের জন্য সহযোগিতা চেয়েছে সরকার। নতুন করে ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ চাওয়া হয়েছে। সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনায় চলতি মাসেই ছয় দিনের ঢাকা সফরে আসছে সংস্থাটির প্রতিনিধিদল। ২৪ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা সফর করবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও আইএমএফ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ইতোমধ্যে আইএমএফের সাথে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কার্যক্রম চলমান। যার শর্ত পূরণে সংস্কার কার্যক্রম চলছে। আর এই ঋণের তিনটি কিস্তির ২৩০ কোটি ৮২ লাখ ডলার ইতোমধ্যে ছাড় হয়েছে। ৭টি কিস্তিতে পুরো অর্থ মিলবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত।
নতুন ঋণের জন্যও আর্থিক খাতের দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখতে চায় এই বহুজাতিক সংস্থা। স্থিতিশীলতার জন্য এসময় অর্থের বিকল্প নেই বলে মত বিশ্লেষকদের।
পরিবর্তিত অবস্থায় অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে গত ২৯ আগস্ট আইএমএফ উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সেখানে চলমান ঋণ বর্ধিত করার প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনায় এ মাসেই ছয় দিনের ঢাকা সফরে আসছে আইএমএফ স্টাফ মিশন।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, এগুলো যেন বাণিজ্যিক ঋণ না হয়, কেননা সরকার বাণিজ্যিক ঋণ নেয়ার পরিস্থিতিতে নেই। ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধের একটি কাটামোতে আমরা ঢুকেছি। যত সহজ শর্তই হোক, ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধের কাঠামোটা ভালো লক্ষণ না। বরং এটি একটি দুষ্টু চক্রের ইঙ্গিত দেয়।
ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক খাতের সংস্কার উদ্যোগকে গুরুত্ব দেয় আইএমএফ। এক্ষেত্রে ব্যাংক খাতের সুশাসন, রাজস্ব খাতের অটোমেশন, পুঁজিবাজারে স্বস্তি, বিনিয়োগ পরিবেশ, অর্থের ব্যবহারসহ নানাদিক গুরুত্ব পায়। ঋণের অঙ্ক বাড়লে পরিশোধেও বাড়বে চাপ। কিন্তু এই সময়ে অর্থের বিকল্প নেই।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আইএমএফের নীতির সঙ্গে প্রো-বিজনেস, প্রো-রিফর্মের এক ধরনের সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১ মাসের মধ্যে ব্যাপক ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় বেশকিছু ইতিবাচক সংস্কার করার চেষ্টা করেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ব্যাংকগুলোকে রিফর্ম করার উদ্যোগ নেয়া এবং একইসাথে এনবিআরের রিফর্ম আমরা দেখতে পাচ্ছি। রাজস্ব খাতে সংস্কার উদ্যোগ হাতে নেয়া গেলে বাড়ানো সম্ভব অভ্যন্তরীণ আয়।
এ নিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আইএমএফ আফ্রিকার কয়েকটি দেশকে নিয়ে যেটা করেছে, কর প্রশাসনকে যদি শক্তিশালী করা যায়, সেভাবে অটোমেশন করা গেলে জিডিপির ২-৩ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধি করা সম্ভব।
এদিকে, গত শুক্রবার ওয়াশিংটনে প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইএমএফের যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক জুলি কোজ্যাক বলেন, ‘আইএমএফের পক্ষ থেকে আমরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং স্টাফ মিশন হিসেবে এবং সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করবে। মিশনটি বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সম্ভাব্য অর্থায়ন চাহিদা পর্যালোচনা করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে এবং আইএমএফ কর্মসূচির আওতায় দেশটির জনগণকে সহায়তা করতে আমরা সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংস্কার এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কার্যক্রম অব্যাহত রাখব।’
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত