আজকের বিশ্বে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সে জাতিই এগিয়ে থাকার সুযোগ পায় যারা বিনিয়োগবান্ধব নীতির মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে পারে। বাংলাদেশ এখন দ্রুততম সময়ের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে উঠে আসার চেষ্টা করছে। চলতি শতাব্দীর প্রথমার্ধেই উন্নত দেশগুলোর পর্যায়ে পৌঁছানোর উচ্চাভিলাষও ঘোষণা করা হয়েছে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে। এ উচ্চাভিলাষের বাস্তবায়ন কঠিনসাধ্য হলেও অসম্ভব নয়। বিশ্বের সেরা অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলেছেন বাংলাদেশের দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এটি আশার কথা হলেও হতাশার বিষয় হলো দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা অপরিহার্য শর্ত হিসেবে বিবেচিত হলেও সে ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। স্বয়ং অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং সচিবদের কাছে লেখা চিঠিতে এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ১৪ দফার একটি সুপারিশও করেছেন। এতে রাজনৈতিক এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যবসায় ব্যয় কমানোর কর্মকৌশল প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছেন তিনি। অবকাঠামো উন্নয়ন বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে বিদেশি কোম্পানির অংশগ্রহণ সহজ করতে দেশের প্রচলিত আইন ও শর্তাবলী শিথিল করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে ১৪ দফার সুপারিশে। সমুদ্র অর্থনীতির সদ্ব্যবহার ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সমুদ্র বন্দরভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠারও কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করা এবং বাংলাদেশ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ যারা পণ্য আমদানি করে তাদের যৌক্তিক শর্তগুলো যথাযথভাবে পূরণেরও তাগিদ দেওয়া হয়েছে অর্থমন্ত্রীর আলোচিত সুপারিশমালায়। চীন, জাপান, ভারত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশে যখন বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছে, তখন সে আগ্রহকে সিদ্ধান্তসূচক অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীর সুপারিশগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস। পাশাপাশি টেকসই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য কিভাবে সংঘাতের রাজনীতিকে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করা যায় এবং সমঝোতার রাজনীতির উন্মেষ ঘটানো যায় সে ব্যাপারে সরকার, বিরোধী দল, ব্যবসায়ী সমাজ এবং বড় মাপে সব সামাজিক শক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে।