রবিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সৌদি আরবে ফেলে আসা স্মৃতি

আতাউর রহমান

সৌদি আরবে ফেলে আসা স্মৃতি

একটি হাস্যরসাত্মক গল্প দিয়েই না হয় এ লেখাটা শুরু করা যাক। জনৈক আমেরিকান নাগরিক এক বছরের জন্য সৌদি আরবে কাজ করতে এসেছিলেন। কিন্তু মাত্র এক মাস পরই তিনি স্বদেশে ফিরে যেতে উদ্যত হলে তার সৌদি সহকর্মীরা কারণ জানতে চাইলেন। ‘আমার এখানে থেকে লাভ নেই।’ প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, ‘তোমাদের দেশ তো আইবিএম দ্বারা বেশ ভালোই চলছে।’ সৌদিরা প্রথমে সে আইবিএম বলতে বিশ্বখ্যাত International Business Machine (IBM) Company কর্তৃক নির্মিত কম্পিউটার বোঝাচ্ছে মনে করে খুব খুশি হলেন। কিন্তু তিনি যখন ব্যাপারটা পুরোপুরি বুঝিয়ে বললেন, তখন তারা চুপসে গেলেন।

আমেরিকানটি বলতে লাগলেন, ‘আমি আই দিয়ে ইনশা আল্লাহ, বি দিয়ে বুক্য়া ও এম দিয়ে মালিশ বুঝিয়েছি। তোমাদের দেশে অফিস-আদালতে কোনো কাজে গেলে তোমরা তখন বল ইনশা আল্লাহ বুক্য়া; অর্থাৎ আল্লাহ চাহে তো (হবে), আগামীকাল (এসো)। এভাবে কয়েক দিন ঘুরিয়ে অবশেষে বল, মালিশ অর্থাৎ (ব্যাপারটা) ভুলে যাও। এজন্য আমি বলেছি, তোমাদের দেশ আইবিএম দ্বারা খুব ভালোই চলছে। হা-হা-হা!’

গল্পটা আমাদের বলেছিলেন নব্বইয়ের দশকে আমি যখন রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসে লেবার কাউন্সিলর হিসেবে নিয়োজিত তখন সেখানকার কিং ফয়সাল স্পেশালিস্ট হাসপাতালের ক্যান্সার সেকশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত বর্তমানে কানাডায় বসবাসরত আমার একদা সহপাঠী ও আত্মীয় ড. এম এ হান্নান। তিনি আরও বলেছিলেন, সৌদিরা যখন ইনশা আল্লাহ বলেন তখন বুঝতে হবে- আমি করব না, তবে আল্লাহতায়ালা করে দিলে আমার কোনো আপত্তি নেই। আর মিসরীরা যদি ইনশা আল্লাহ বলেন তাহলে বুঝতে হবে- আমি তো করবই না, দেখি আল্লাহ মিয়া কীভাবে করে দেন। এবং যেহেতু মানুষের মৌলিক চরিত্রের পরিবর্তন কদাচিৎ হয়ে থাকে, অতএব, এ অবস্থান আজ অবধি অপরিবর্তিত আছে বলেই মনে করাটা সংগত। সে যাকগে। বিচিত্র এই পৃথিবী আর বিচিত্র এই পৃথিবীর মানুষ! তাই সৌদি আরবে মোট আড়াই বছর প্রেষণে লেবার কাউন্সিলর পদে কাজ করতে গিয়ে (সৌদিরা আমাকে বলতেন ‘আবু উম্মাল’ অর্থাৎ শ্রমিকদের পিতা) আমার অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে। বর্তমান নিবন্ধে বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাঠকদের সঙ্গে সেই অভিজ্ঞতার খানিকটা শেয়ার করতে চাই।

দেশের জন্য অতি মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অর্জন ও বেকারত্ব প্রশমনের লক্ষ্যে বিদেশে দক্ষ-অদক্ষনির্বিশেষে মানবসম্পদ প্রেরণের ভদ্রস্থ নাম হচ্ছে জনশক্তি রপ্তানি। তবে কে যেন একে ব্যঙ্গ করে এই ব্যবসায় নিয়োজিত লোকদের নাম দিয়েছিল ‘আদম বেপারি’, আর তাতেই যত অনর্থের সূত্রপাত। প্রতিষ্ঠিত আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন লোকেরা মুখ ফেরালেন এবং যেহেতু প্রকৃত শূন্যতাকে ঘৃণা করে তাদের স্থলাভিষিক্ত হলেন কিছু (সবাই নয়) অসাধু ব্যবসায়ী। এর মধ্যে এমন লোকও আছেন, যিনি হিপোক্রিটিসের শপথনামা পাঠ করে ডাক্তার ডিগ্রিধারী; তবে ডিগ্রি পাওয়ার আগে তাকে নাকি লিখিত অঙ্গীকারনামা দিতে হয়েছে যে, তিনি কখনো প্র্যাকটিস করবেন না, কারণ তাহলে তিনি সব রোগী মেরে ফেলতে পারেন। আর তিনি ও তার মতো অনেকেই আমি রিয়াদে থাকতে স্বাভাবিকভাবেই ‘স্যার’ সম্বোধন করতেন কিন্তু পরে দেশে চলে এলে চিনতেই পারেননি। অবশ্য এটা মোটেই অপ্রত্যাশিত নয়; কারণ বাংলা ভাষায় কতকগুলো মারাত্মক প্রবচন আছে, যেমন (১) বাঁদীর ঠেঙে ধরি না, কাজের ঠেঙে ধরি ও (২) ঘাট পাড়ি দিলে পর খেওয়ালী (খেয়ার মাঝি) কার শালা? ইত্যাদি।

আর আমাদের দেশে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের কারণে এ দেশের লোকজন বিদেশে যাওয়ার জন্য যেন একপায়ে দাঁড়ানো। যে কারণে একবার নাকি এ দেশের এক যুবককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- সে কি ক্যাপিটালিস্ট না সোশ্যালিস্ট? তখন সে জবাব দিয়েছিল, ‘মিড্ল ইস্ট’। আর আমি হিসাব করে দেখেছি, একটি গ্রামের ছেলে বৈধভাবে বিদেশে শ্রমিক হিসেবে কাজের জন্য যেতে মোট যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে, তাতে সে একটি পয়সাও উপার্জনের আগেই তার বিদেশ গমনহেতু সাতটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আর্থিক সুবিধা পেয়ে যায়- (১) এলাকার যে দালাল তাকে রাজধানীতে রিক্রুটিং এজেন্টের অফিসে নিয়ে আসে (২) রিক্রুটিং এজেন্ট (৩) ট্রাভেল এজেন্ট (৪) এয়ারলাইনস (৫) বাংলাদেশ সরকার- ডকুমেন্ট এটেস্টেশনকালে (৬) রিক্রুটিং এজেন্টের সেই দেশস্থ প্রতিনিধি, যে ওখানে কাজের ভিসা সংগ্রহ করে এবং (৭) কাজের ভিসা বিক্রেতা সৌদি নাগরিক।

তা একবার আমি এক সৌদি ভিসা বিক্রেতাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তোমরা কাজের ভিসা বিক্রি করে পয়সা নাও কেন? রাষ্ট্র ও ধর্ম দুই তরফেই তো এটা হারাম তথা নিষিদ্ধ। প্রত্যুত্তরে সে আমাকে বলল, ‘আমরা প্রথম পর্যায়ে তো কোনো পয়সা নিতাম না, ভিসা ফ্রিই দিতাম। শ্রমিক আসার পর প্রশ্ন করে জেনেছি, আমাদের নাম করে পয়সা নেওয়া হয়েছে। অতঃপর আমরা পয়সা নিতে শুরু করেছি।’ আমি তখন তাকে বললাম, পত্রিকায় পড়েছি, আমাদের (নরসিংদী) কিছু ছেলে ব্যাঙ ধরে খেয়ে ফেলেছে এই অজুহাতে যে আমাদের দেশের ব্যাঙ ফ্রান্সে গিয়ে ফাইভ স্টার হোটেলে সার্ভ করা হয়। অথচ ব্যাঙ খাওয়া ইসলামে হারাম। তোমাদের ব্যাপারও দেখা যাচ্ছে অনেকটা তা-ই। সে আর কিছু না বলে চুপ থেকেছে। দিন কয়েক আগে পত্রিকায় দেখলাম, সৌদি আরবে যেতে একজন শ্রমিকের নাকি এখন ১০-১২ লাখ টাকা লেগে যায়। হায় খোদা! অতি সম্প্রতি ওমরাহ পালনকালে হারাম শরিফে কর্মরত স্বদেশি ঝাড়–দারদের জিজ্ঞাসা করে জেনেছি, সে প্রতি মাসে ২০-২২ হাজার টাকার মতো পায়। নব্বইয়ের দশকে ছিল মাত্র ৫ হাজার এবং মূলত টাকার অবমূল্যায়নের ফলে এটা বেড়েছে। তবে ওই ১০ লাখ টাকা জোগাড় করতে তাকে দেশে কী কী সম্পদ বেচতে হয়েছে এবং ১০ লাখ কত দিনে সে তুলবে, কর্তাপক্ষের লোকেরা সে কথাটা কখনো চিন্তা করেছেন কি? পরম পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, সৌদিরা যখন ইউরোপ, আমেরিকা কিংবা অস্ট্রেলিয়া থেকে কোনো লোক সংগ্রহ করেন তখন তারা এসব জায়গার রিক্রুটিং এজেন্টকে তাদের হয়ে উপযুক্ত লোক বাছাই করার জন্য ‘কমিশন’ দিয়ে থাকেন। অথচ আমাদের বেলায় ঠিক উল্টোটা ঘটতে দেখা যায়। উপরন্তু সে দেশে বিদেশি শ্রমিকদের পারিশ্রমিক নির্ধারিত হয় কাজের ওপর ভিত্তি করে নয়, বরং তার পাসপোর্টের ওপর- একই কাজের জন্য ভারত-বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানের কেউ যে পারিশ্রমিক পান, একজন আমেরিকান পাসপোর্টধারী পাবেন তার অন্তত পাঁচ গুণ। ‘মুসলিম ভ্রাতৃত্ব’ ইত্যাদি যে বলা হয়, ওগুলো হচ্ছে বাও-কা-বাও।

পাছে ভুল বোঝাবুঝি হয়, এজন্য এখানে আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, সৌদিরা অধিকাংশই সার্বিক বিচারে শরিফ ও ধার্মিক বটে, তবে যারা আদম ব্যবসায়ে তথা কাজের ভিসা বিক্রির কাজে লিপ্ত, তাদের ব্যাপার আলাদা। মানুষের আচার-আচরণে তার পেশা ও হালাল-হারাম রুপির প্রভাব পড়তে বাধ্য। একবার এক সৌদি নিয়োগকর্তা আমার কাছে বাংলাদেশি সংগ্রহকারীসহ ‘ডিমান্ড লেটার’ এটেস্টেশনের জন্য এলে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম এ বাবদ কোনো টাকা-পয়সা সে নিয়েছে কিনা। সে কসম কেটে বলল, ওল্লাহি, ওল্লাহি! ‘আই হ্যাভ নট টেকেন এনি মানি’, অর্থাৎ আল্লাহর কসম! আল্লাহর কসম! আমি কোনো টাকা-পয়সা নিইনি। পরে যখন তার বুক-পকেটে ৬০ হাজার রিয়ালের চেক ধরা পড়ল, তখন সে সাফাই গাইল, ‘আমি কসম করে বলেছি টাকা-পয়সা নিইনি, চেক নিইনি এটা তো বলিনি।’ কী পাজির পাজি!

হাদিসে কুদসিতে আছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা তিন দল লোকের বিপক্ষ হবেন- (১) যারা তাঁর নামে কসম করে সেটার খেলাপ করেছে (২) যারা স্বাধীন লোককে পরাধীন করে বিক্রি করেছে ও (৩) শ্রমিকের পাওনা যথাসময়ে পরিশোধ করেনি। আমি ওটার ফটোকপি করে আমার টেবিলে গ্লাসের নিচে রেখে দিয়েছিলাম এবং যেসব সৌদি শ্রমিকের বেতন দিতে মাত্রাতিরিক্ত গড়িমসি করত তারা দূতাবাসে এলেই ওটা দেখিয়ে দিতাম। এতে অনেক সময় কাজ হতো। তবে একবার এক বেয়াড়া সৌদি টেবিল চাপড়ে জোরে কথা বলায় আমার পায়ের খুন মাথায় চড়ে গিয়েছিল। তাকে উদ্দেশ করে বললাম, ‘জেনেভা কনভেনশন অনুসারে এই দূতাবাস অঙ্গনটি বাংলাদেশেরই অংশ, যেমনভাবে ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাস অঙ্গন সৌদি আরবের অংশ। এখানে টেবিল চাপড়িয়ে কথা বলার অধিকার কেবল বাংলাদেশিরই। এই অশোভন আচরণের জন্য ক্ষমা না চাইলে তোমাকে দূতাবাসের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের হাতে তুলে দেব।’ শেষমেশ সে তা-ই করাতে সে যাত্রা রক্ষা পেল।

আরবি ভাষায় একটি কথা আছে, ‘আল হাব্বুল অতনু মিনাল ইমান’, অর্থাৎ দেশপ্রেম হচ্ছে ইমানের অঙ্গ। যার ইমান আছে, তার দেশপ্রেমও আছে। আর সরকারি অফিসে ‘প্লে সেইফ’ বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। আমি দেশপ্রেম দেখিয়েও বেশি কাজ করতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে এনেছিলাম। পরপর দুজন দেশপ্রেমিক ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাট, যাদের আমি রাষ্ট্রদূত হিসেবে পেয়েছিলাম, আমার কাজের যথার্থ মূল্যায়ন করেছিলেন। অতঃপর রাষ্ট্রদূত পদে যোগদান করলেন এক রাজনৈতিক নেতা। তিনি বলে বেড়াতেন যে, তিনি বিচারকের চাকরি ছেড়ে চোঙা ফুঁকতে ফুঁকতে এদ্দুর এসেছেন, কিন্তু পরে দেশে এসে জানলাম তিনি চাকরি ছাড়েননি, চাকরিই বরং তাকে ছেড়েছে। আর তিনি দেশে ফিরে ইলেকশন করবেন এবং তা করতে প্রচুর টাকা-পয়সার প্রয়োজন। তাই বোধকরি আমার পদের প্রাচুর্যের প্রতি তার প্রত্যাশা একটুখানি বেশিই ছিল। কিন্তু আমি তার সে প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে সাম্প্রতিক টিভির একটি বিজ্ঞাপনের ভাষায় আদর্শ ও কাপড় দুটোতেই দাগ লাগাতে হতো। তাই কিছু অসৎ ম্যানপাওয়ার ব্যবসায়ী বোধগম্য কারণে আমার প্রতি বৈরীভাবাপন্ন ছিলেন- তিনি তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাকে মেয়াদ পূর্তির আগেই উপড়ে ফেললেন। আমি অবশ্য দেশে ফেরার আগে এক কাজ করেছিলাম- মক্কায় ওমরাহ করতে গিয়ে কাবাঘরের দরজা ধরে সর্বোচ্চ বিচারকের আদালতে বিচার প্রার্থনা করে এসেছিলাম। হাদিস গ্রন্থে আছে, তিনজন লোকের প্রার্থনা খুব তাড়াতাড়ি কবুল হয়- মজলুম, মুসাফির ও পিতা বা মাতার। সেই মুহূর্তে আমি ছিলাম মজলুম ও মুসাফির এবং মহান আল্লাহর আরেক নাম আদিল তথা ন্যায়বিচারক। তাই পরে দেখা গেছে, ঠিক ন্যায়বিচারই হয়েছে। তা সে যা হোক। আকাশে ঘনকালো মেঘের চারপাশে প্রায়ই একটা রুপালি বর্ডার থাকে। তাই তো কবি বলে গেছেন, ‘মেঘ দেখে তোরা কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে/হারা শশীর হারানো হাসি, অন্ধকারেই ফিরে আসে’। ঠিক তেমনি হাজারো মনোবেদনা আর কষ্ট-যন্ত্রণার মধ্যেও মাঝে মাঝে প্রচণ্ড রকমের সুখানুভূতিও ছিল। এই যেমন একদিন দূতাবাসে আমার অফিসকক্ষে বসে কাজ করছি, এমন সময় এক প্রবাসী বাঙালি ছেলে আমার কাছে এলো। ওর সমস্যা ছিল ওর পাসপোর্টের মেয়াদ দুই দিন পরই উত্তীর্ণ হতে যাচ্ছে এবং ওর কফিল (নিয়োগকর্তা) বলে দিয়েছেন দূতাবাস থেকে মেয়াদ বাড়িয়ে আনতে, নতুবা পাসপোর্টে ‘খরুজ’ (Exit) লাগিয়ে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেবেন। সে দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল; কিন্তু পাসপোর্টে যেহেতু সিল মারা ছিল সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া মেয়াদ বাড়ানো যাবে না তাই তিনি সেই মুহূর্তে তাকে কোনো সাহায্য করতে অপারগতা প্রদর্শন করেছেন। রাষ্ট্রদূতের সাময়িক অনুপস্থিতিতে আমি উপরাষ্ট্রদূতকে গিয়ে বোঝালাম, ‘আমাদের ডিস্ক্রিশন করার সুযোগ আছে। আমরা কেন ছয় মাসের জন্য মেয়াদ বাড়িয়ে অতঃপর সংস্থাপনে লিখি না? তাতে সাপও মরবে এবং লাঠিও ভাঙবে না।’ তিনি আমার সঙ্গে সহমত পোষণ করায় ছেলেটির ফাঁড়া কেটে গেল। দিন দুই পর হঠাৎ দেখি ছেলেটি আমার কক্ষে প্রবেশ করে আমার পা জড়িয়ে ধরেছে এবং বলছে, ‘স্যার, আপনার ঋণ আমি জীবনে শোধ করতে পারব না।।’ তার চোখে আনন্দের অশ্রু এবং তা দেখে আমার চোখেও পানি এসে গিয়েছিল। এ ধরনের ঘটনা চাকরিজনিত সব গ্লানি মুহূর্তে ধুয়েমুছে সাফ করে দেয়। এমনকি অহেতুক ‘ইলজাম’ তথা অপবাদের বোঝা মাথায় নিয়ে অসময়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন-পরবর্তী দুঃসহ স্মৃতিকেও ম্লান করে দেয়।

লেখক : রম্য সাহিত্যিক, সাবেক মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ডাক বিভাগ।

সর্বশেষ খবর