রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

নবীজির আদর্শ ধারণ করলে পরিচ্ছন্ন উম্মত হওয়া যাবে

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

নবীজির আদর্শ ধারণ করলে পরিচ্ছন্ন উম্মত হওয়া যাবে

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং সুন্দর ও উত্তমরূপে চলা ইসলামী জিন্দেগির শিক্ষা। হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিচ্ছন্ন থাকা ও উত্তম বেশভূষা ধারণ করাকে একজন মুসলিমের বিশেষ প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেছেন; যার মাধ্যমে চেনা যাবে যে, সে একজন মুসলমান। এক সফরে তিনি তাঁর সাহাবিদের বললেন, (যারা নিজেদের ভাইদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন) ‘তোমরা তোমাদের ভাইদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছো। তাই নিজেদের বাহন ও আসবাবপত্র ঠিকঠাক ও পরিপাটি করে নাও এবং সুন্দর ও উত্তম বেশভূষা ধারণ কর; যেন মানুষের মাঝে তোমাদের আলাদা করে চেনা যায়।’ সুনানে আবু দাউদ।

আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার কয়েকজন সাহাবি ঘরের দরজায় রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা করলেন। তখন আমি লক্ষ্য করলাম, ঘরের একটি বালতিতে রাখা পানিতে তিনি চেহারা দেখছেন এবং নিজের চুল ও দাড়ি পরিপাটি করে নিচ্ছেন। এ দেখে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল! আপনিও এমনটি করেন! জবাবে তিনি বললেন, অবশ্যই করি। প্রত্যেক ব্যক্তিরই উচিত যখন  সে তার ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের ইচ্ছা করে তখন নিজেকে পরিপাটি করে নেওয়া। কেননা, আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্যকেই ভালোবাসেন। ইতেলালুল কুলুব। মিসওয়াকের প্রতি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুবই যতœবান ছিলেন। হাদিসে এসেছে, তিনি যখন মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর, বার বার ঠাণ্ডা পানিতে হাত ভিজিয়ে চেহারায় মুছছিলেন, আর বলছিলেন, ‘নিশ্চয়ই মৃত্যু অনেক যন্ত্রণাময়।’ তখনো তিনি মিসওয়াকের কথা ভোলেননি। এমনকি অন্যের কাছ থেকে মিসওয়াক চেয়ে নিয়ে মিসওয়াক করেছেন। অসুস্থতার কারণে তাঁর শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তিনি নিজে মিসওয়াক চিবোতে পারছিলেন না। হজরত আয়েশা (রা.) তা চিবিয়ে নরম করে দিয়েছেন। এরপর তিনি মিসওয়াক করেছেন। বুখারি।

মিসওয়াকের প্রতি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন আগ্রহী ছিলেন, একইভাবে তিনি উম্মতকেও নির্দেশ দিয়েছেন যতেœর সঙ্গে মিসওয়াক করার। তিনি বলেন, ‘যদি আমার উম্মতের জন্য কঠিন না হতো, তাহলে প্রতি নামাজের সময় মিসওয়াক করাকে আমি বাধ্যতামূলক করে দিতাম।’ মুসলিম। আরেক বর্ণনায় এসেছে, ‘কঠিন না হলে, প্রতি অজুর সময়ই আমি মিসওয়াকের নির্দেশ দিতাম।’ ইবনে হিব্বান।

মিসওয়াক তথা দাঁত-মুখ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ইসলামের স্বভাবজাত বিষয়। মুসলিমের এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘ইসলামের স্বভাবজাত আচরণ দশটি, যার অন্যতম প্রধান হলো মিসওয়াক করা।’ আরেক হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা মিসওয়াক কর। কেননা, তা মুখের পবিত্রতার উপায় ও আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের মাধ্যম।’ ইবনে মাজাহ। অজু-নামাজ ছাড়াও ঘুমানোর আগে এবং পরে মিসওয়াক তথা দাঁত ও মুখের পরিচ্ছন্নতার প্রতি যতœবান হওয়া আমাদের কর্তব্য। একইভাবে কোনো কিছু খাওয়ার পরও মিসওয়াক করা কর্তব্য। এতে ওই খাবারের কণা দাঁতে লেগে থেকে মুখে দুর্গন্ধ তৈরি করতে পারবে না। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে ঘুম থেকে ওঠার পর মিসওয়াক দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতেন। বুখারি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতদিনের যখনই ঘুম থেকে জাগ্রত হতেন অজুর আগে মিসওয়াক করে নিতেন। সুনানে আবু দাউদ। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে ঢুকেই সবার আগে মিসওয়াক করতেন। মুসলিম। এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, ঘরে পরিবার-পরিজনের কাছে যাওয়ার পর প্রথমে নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নেওয়া উচিত। জায়েদ বিন খালেদ (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজের জন্য ঘর থেকে বের হওয়ার সময় মিসওয়াক করে নিতেন। আল মুজামুল কাবির।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি নামাজের আগে, ঘরে ঢুকতে-বেরোতে, কারও সঙ্গে কথা বলার আগে দাঁত পরিষ্কার করে নিতেন। মুখ থেকে যেন দুর্গন্ধ না আসে সে বিষয়ে সজাগ সতর্ক থাকতেন। আমরা যারা ইসলামের অনুসারী, নবীর উম্মত, আমাদের এ বিষয়ে খুব যতœবান হতে হবে। কোনোভাবেই যেন মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয়ে কারও কষ্টের কারণ না হই। হাদিসে এসেছে, মুখের দুর্গন্ধের কারণে ফেরেশতা পর্যন্ত কাছে ভেড়ে না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে দাঁত ও মুখ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে সুস্থতা বজায় রাখার তাওফিক দিন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কুরআন ও  গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি।

          www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর