রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

আসুন আমরা মনের পশুটা জবাই করি

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আসুন আমরা মনের পশুটা জবাই করি

বছর ঘুরে আবার আমাদের মাঝে এসেছে ঈদুল আজহা। ঈদ মানে উৎসব। আজহা মানে ত্যাগ বা উৎসর্গ। অন্যের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া, ত্যাগ করা, উৎসর্গ করার আনুষ্ঠানিক উৎসবকেই মুসলমানরা ঈদুল আজহা বা ত্যাগের উৎসব হিসেবে পালন করে আসছে যুগ যুগ ধরে। মুসলমানমাত্রই অন্যের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেবে। শুধু যে মানুষের জন্য বিলিয়ে দেবে তা নয়, একটি পিঁপড়ের জন্যও মুসলমানকে ত্যাগ করতে হয়। এটাই ইসলামের মূল শিক্ষা। ছোটবেলায় একটি কবিতা পড়েছিলাম। কবিতার মূল কথা মোটামুটি এ রকম-গাছের দিকে তাকাও। কোনো গাছ কি কখনো নিজের ফল খেয়েছে? নদী কখনো নিজের জল পান করেছে? সূর্য কার জন্য আলো দেয়? পাখি গান গায় কার জন্য? প্রকৃতির একটি উপাদানও নিজের ভোগের জন্য ব্যস্ত নয়। সবাই অন্যের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে। তো প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মানুষকেও নিজের জন্য নয়, পরের জন্য বিলিয়ে দিতে হবে নিজেকে। এই যে পরের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া, এটা সহজ কথা নয়। যুগে যুগে যত নবী-রসুল এসেছেন, যত ধর্মগ্রন্থ নাজিল হয়েছে, সবকিছুর সারমর্ম এই একটি কথাতেই লুকিয়ে আছে- ‘পরের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দাও।’ অন্যের জন্য না ভেবে, অন্যের জন্য না কেঁদে কোনো মানুষের পক্ষেই একা একা বেহেশতে যাওয়া, মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। এজন্যই ইসলাম বৈরাগ্যবাদকে কঠিনভাবে হারাম করেছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার ধর্মে যারা শুধু নিজের কথা ভাববে, তাদের কোনো স্থান নেই।’ ইসলামের প্রতিটি ফরজ ইবাদত সংঘবদ্ধভাবে আদায় করতে হয়। নামাজ জামাতে পড়া, হজ একসঙ্গে করা, রোজা একসঙ্গে রাখা, জাকাতও একই সময়ে দেওয়া ইত্যাদি। এ থেকে সহজেই বোঝা যায়, ইসলামের উদ্দেশ্য হলো, সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে ভালো থাকবে। এই মিলেমিশে ভালো থাকার যে উৎসব তাকেই শরিয়ত ঈদ বলেছে। আফসোস! ঈদ আসে ঈদ যায়, কিন্তু সবাই একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভালো থাকার শপথ নেওয়া হয় না। অন্যের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার সবক মুসলমানরা নেয় না আজ। এজন্য জাতীয় কবি বড় আফসোস করে বলেছেন, এই মেকি উৎসব ছেড়ে তোমরা সত্যি উৎসবের চর্চা কর। ভাইয়ের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, বন্ধুর সঙ্গে অভিমান, প্রতিবেশীর সঙ্গে বিবাদভরা মন নিয়ে তুমি ঈদগাহে এসেছ খোদার রাহে সিজদায় লুটাতে? নামাজ শেষে লোক দেখানো কোলাকুলি করে আবার ভাইয়ের বিরুদ্ধেই হিংস্র ষড়যন্ত্রে মেতে উঠবে? তোমার সিজদা, তোমার এ উৎসব আল্লাহ কবুল করবেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত মনের সব কালো ত্যাগের ছুরিতে জবাই করতে না পারবে, ভাইয়ের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার শপথ নিতে না পারবে, তত দিন ঈদ আসবে যাবে, কিন্তু ঈদের আনন্দ ত্যাগের উৎসবে ভাসতে পারবে না। হায়! আমাদের কী হলো, আমরা পশু জবাই করি, পশুর মাংসও সাধ্যমতো বিলিয়ে দিই কিন্তু কোরবানির শিক্ষা নিজের ভিতর ধারণ করতে পারছি না কেন? কেন আমাদের মনের ভিতর ঘাপটি মেরে থাকা লোভ-হিংসা, রাগ-বিদ্বেষ, অহংকার-অভিমান নামক পশুর গলায় ছুরি চালাতে পারছি না। দেশের এই চরম সংকটের সময়ে মনের পশুকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা অতি জরুরি।

 

লেখক : বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

সর্বশেষ খবর