মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

বান্দার কাঁধে বসানো আল্লাহর সিসি ক্যামেরা

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

বান্দার কাঁধে বসানো আল্লাহর সিসি ক্যামেরা

দুর্নীতিতে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি বারবার। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ মুসলিম দেশ হিসেবে এটি সত্যিই আমাদের জন্য অনেক বড় লজ্জার। কথা ছিল আমাদের দেখে মানুষ দুর্নীতিমুক্ত হতে শিখবে। আফসোস! আজ আমরাই দুর্নীতির কালো থাবায় জর্জরিত হয়ে পড়েছি।

অফিস-আদালত, বাসাবাড়ি, স্কুল-কলেজ এক কথায় দেশের প্রতিটি সেক্টর দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য সরকার নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও কোনোভাবেই সফল হচ্ছে না। সফল হবেই বা কীভাবে, প্রতিটি মানুষের পেছনে তো আর গোয়েন্দা লাগিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তা ছাড়া গোয়েন্দা কর্মকর্তাও তো একজন মানুষ। তিনিও যে দুর্নীতির থাবায় কাবু হবেন না এ কথা এখন আর অবিশ্বাস্য নয়। তাহলে কি দেশকে দুর্নীতির মরণব্যাধি থেকে বাঁচানো সম্ভব নয়? মানুষের লোভের মুখে লাগাম পরানোর কোনো উপায় কি নেই? মানুষের লোভের মুখে লাগাম পরানোর একটিই উপায় আছে। তা হলো মানুষের মনে আল্লাহর ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া। অন্তরে এ কথা জাগিয়ে তোলা যে, দুনিয়ার সিসিটিভি ক্যামেরা ও আইনের মারপ্যাঁচে বেঁচে গেলেও আল্লাহতায়ালা যে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে রেখেছেন তোমার মনে এবং দুই কাঁধে কিরামান কাতিবিন এবং হাফিজিন নামক ফেরেশতাদের থেকে বাঁচার কোনো সুযোগই তোমার নেই। আল কোরআন থেকে জানা যায়, কিরামান কাতিবিন অর্থাৎ দুজন সম্মানিত ফেরেশতা মানুষের সার্বক্ষণিক কর্মকা- রেকর্ড করে যাচ্ছেন। সূরা তারিকে আরও একজন ফেরেশতার কথা বলা হয়েছে, যিনি আলাদাভাবে মানুষের কর্মকান্ড রেকর্ড করছেন। সূরা আদিয়াত থেকে জানা যায়, মানুষ নিজেও নিজের কর্ম সম্পর্কে সবচেয়ে বড় সাক্ষী। সূরা ইয়াসিন থেকে জানা যায়, মানুষের হাত-পা অর্থাৎ শরীরে সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তার কাজকর্মের সাক্ষী। সূরা জিলজাল থেকে জানা যায়, সে যেখানে বসে যা যা করে আশপাশের জড়াজড় সবকিছু তার কাজকর্মের নিখুঁত ভিডিও করে যাচ্ছে। তো কিয়ামতের দিন এতসব প্রমাণ যখন সামনে হাজির করে তাকে বলা হবে, ‘ইকরা কিতাবাকা কাফা বিনাফসিকাল ইয়াওমা আলাইকা হাসিবা’। ‘পড়, এসব সাক্ষ্য-প্রমাণ পড়ে দেখ। আজ তোমার হিসাবের জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট। সাক্ষ্য-প্রমাণ পড়েই তুমি বুঝতে পারবে তুকি কি জান্নাতের উপযোগী নাকি জাহান্নামের যোগ্য।’

বান্দা যখন তার কাজকর্ম দেখবে, হাত-পা তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, পৃথিবীর স্থানগুলো তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, মদের গ্লাস, অপরাধের ছোরা তার বিরুদ্ধে বলবে, তখন সে হতবাক হয়ে যাবে। এমন সব অপরাধের কথা সেদিন সে জানতে পারবে যেগুলোর কথা সে ভুলেই গিয়েছিল। তখন সে অবাক হয়ে বলবে, ‘মালি হাজাল কিতাব? লা ইউগাদিরু সাগিরাতান ওয়ালা কাবিরাতান ইল্লা আহসাহা?’ ‘আশ্চর্য! এটা কেমন সাক্ষ্য-প্রমাণের ফিরিস্তি! এখানে ছোট কথাও বাদ যায়নি বড় কথাও বাদ যায়নি। সবই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সংরক্ষণ করা আছে।’ তখন পাপী বান্দা হতাশ হয়ে পড়বে। সে নিজের জন্য জাহান্নাম ছাড়া কিছুই দেখবে না। আফসোস! আমরা নিজেদের ধর্মবিশ্বাসী, কোরআনবিশ্বাসী, নামাজি এবং আল্লাহভীরু বলে দাবি করি, অথচ আমাদের কাজকর্ম দেখে শয়তানেরও বিশ্বাস হবে না আমাদের হƒদয়ে আল্লাহর ভয় আছে। যদি থাকত তাহলে এত খোদায়ী ক্যামেরা উপেক্ষা করে কীভাবে আমরা অপরাধের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছি! আমাদের অপরাধের ফিরিস্তি এত বড় যে, আমাদের দেখে মনেই হয় না এ জীবন মাত্র অল্প কদিনের। আমাদের কোটি কোটি টাকা, চুরির টাকায় গাড়ির পর গাড়ি বাড়ির পর বাড়ি কেনা দেখে মনে হয় এটাই বুঝি আমাদের চিরস্থায়ী আবাস। আল্লাহ আমাদের দীনের সহি বুঝ দিন।  তাঁর ভয় আমাদের অন্তরে জেগে উঠুক। আখিরাতময় হোক আমাদের জীবন।

লেখক : মুফাস্সিরে কোরআন।

সর্বশেষ খবর