বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
বিচিত্রতা

কৃষি থেকে শিল্প অর্থনীতি

বাংলাদেশের অর্থনীতি একসময় ছিল প্রায় শতভাগ কৃষিনির্ভর। এখন শিল্পের হিস্সাই বেশি। দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও শিল্প খাতের অবদান অনস্বীকার্য। আশার কথা তিন দশক ধরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে নীরব বিপ্লব সংঘটিত হচ্ছে বাংলাদেশে। তারই সুফল হিসেবে ঢাকার কামরাঙ্গীর চরে ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছে শিল্পকারখানা। প্রসাধনসামগ্রী থেকে শুরু করে বাইসাইকেল, খেলনা, চামড়া ও প্লাস্টিকের জুতা-স্যান্ডেল, এমনকি সিরামিকের তৈজসপত্র পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে সেখানে। পুরান ঢাকার জিন্দাবাহার এলাকার তৈরি কয়েক শ ধরনের দেয়ালঘড়ি এখন বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। যাত্রাবাড়ীর মীরহাজিরবাগ, মাতুয়াইল, পাগলা, জুরাইনসহ পুরান ঢাকার মহল্লায় মহল্লায় গড়ে উঠেছে নানা ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান। কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও ধারকাছের ৬-৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প। তাওয়াপট্টি, টিনপট্টি, আগানগর, বাঁশপট্টি, কাঠপট্টি, থানাঘাট, ফেরিঘাট এলাকার বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে গড়ে উঠেছে প্রায় ২ হাজার ক্ষুদ্র ও হালকা শিল্পের কারখানা। ফ্লাস্ক থেকে মোবাইল ফোন সেট পর্যন্ত সবই তৈরি হচ্ছে এখানে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মালামাল তৈরি করছেন লেখাপড়া না জানা কারিগররা। স্থানীয়ভাবে তাদের ‘ইঞ্জিনিয়ার’ নামেই ডাকা হয়। সারা দেশে স্থানীয় পর্যায়ে গড়ে তোলা ক্ষুদ্র, হালকা ও মাঝারি আকারের শিল্পকারখানা রয়েছে ৮৭ হাজারের বেশি। ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের হালকা প্রকৌশল শিল্পে প্রতি বছর টার্নওভার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ খাত থেকে সরকার রাজস্ব পায় ২৫০ কোটি টাকার বেশি। এসব শিল্পকারখানার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৩৫ লাখ কর্মীসহ দেড় কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা। ঢাকার বাইরে বগুড়া, যশোর, পাবনায় গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র মেশিনারিজ শিল্পের বিশাল পল্লী। এসব ক্ষুদ্র শিল্পকারখানার অভাবনীয় মেধার খুদে কারিগরদের দক্ষতা সত্যিকার অর্থেই অবাক করার মতো। মেধাবী এসব কারিগরের দাবি, সরকারি অনুমোদন ও পুঁজি সহায়তা পেলে তারা অত্যাধুনিক ড্রোন-রোবটও তৈরি করতে সক্ষম হবেন। বর্তমানে জিনজিরা-কেন্দ্রিক খুদে কারখানাগুলোয় বছরে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। জিনজিরাকে অনুসরণ করে দেশজুড়ে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার শিল্পকারখানা। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে শিল্পায়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

এম জামিলউদ্দিন

সর্বশেষ খবর