বুধবার, ১১ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

সংকটের কল্পনাতে হয়ো না ম্রিয়মাণ

ওয়াহিদা আক্তার

সংকটের কল্পনাতে হয়ো না ম্রিয়মাণ

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের একটি প্রোগ্রামে শ্রীলঙ্কা ভ্রমণের সুযোগ পাই। মাঠ প্রশাসনে কাজ করার সময় শিক্ষার মানোন্নয়নে উদ্বুদ্ধকরণ বক্তব্যে শ্রীলঙ্কার উদাহরণ টেনেছি। জীবনমানের নানা সূচকে শ্রীলঙ্কা ছিল অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে। শ্রীলঙ্কার শিক্ষার হার অনেক আগেই প্রায় শতভাগে পৌঁছে। প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভে বন্দরনায়েক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার নাম শ্রদ্ধা নিয়ে মনে রেখেছি। ১৯৪৮ সালে স্বাধীন হওয়া দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় তামিল টাইগার্সদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় গৃহযুদ্ধ বিশ্বে বহুল আলোচিত ছিল। এ ছাড়া জনপ্রিয় ক্রিকেটার অর্জুনা রানাতুঙ্গা, জয়সুরিয়া, দর্শনীয় স্থান অ্যাডামস পিকসহ ভারত সাগরের কোলঘেঁষে অপরূপ শ্রীলঙ্কার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের জন্য ছিল আকর্ষণীয়। এসব কারণে শ্রীলঙ্কার প্রতি আমার এক ধরনের আকর্ষণ ছিল। ওই সময় বহুল আলোচিত হামবানতোতা গভীর সমুদ্রবন্দর পরিদর্শন করি। জনমানবহীন ও কোলাহলবিবর্জিত বিশাল স্থাপনা হামবানতোতার কাছেই বিশাল সাংরিলা হোটেল অবস্থিত। প্রচুর চাইনিজ লোক দেখেছিলাম। সে তুলনায় দুই দিনের সফরে অধিকসংখ্যক শ্রীলঙ্কান দেখতে পাইনি। চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সমুদ্রের ভিতর পাথর ফেলে ভূমি পুনরুদ্ধার করে কীভাবে কলম্বো পোর্ট সিটি নির্মাণ করছে সে কার্যক্রমও দেখে আসি। চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কর্মকর্তারা জানান, এয়ারপোর্ট থেকে কলম্বো সিটি পর্যন্ত রোডও তাদের করে দেওয়া। তখনো এক ধরনের গুঞ্জন ছিল যে এ মেগা প্রকল্পগুলো দেশের অর্থনীতিতে সহসা কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না।।

ক্যান্ডি যাওয়ার পথে অপরিসর রাস্তায় দীর্ঘ যানজটে পড়ি। বাঁ দিকে ট্রাফিক জ্যামে পড়ে আছে শত শত গাড়ি, ডান দিকে অন্যদিক থেকে কোনো গাড়িই আসছে না, একেবারে ফাঁকা। কিন্তু কোনো গাড়িই ওভারটেক করে ডান দিকে কেটে বের হচ্ছে না। এ ঘটনায় আমি শ্রীলঙ্কানদের মনে মনে প্রশংসা করি। তখনো শ্রীলঙ্কার তেমন কোনো উন্নয়ন নজরে পড়েনি। শ্রীলঙ্কার অধিকাংশ নাগরিককে শ্রমজীবী মানুষ হিসেবে দেখতে পাই।

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর দেশটি এমন ভয়াবহ সংকটে পড়বে তা কেউ কল্পনা করতে পারেনি। গুঁড়া দুধ নেই, রান্নার জন্য এলপি গ্যাস নেই, বিদ্যুৎ নেই, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ। কারণ বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে প্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় মেটাতে দেশটি ব্যর্থ হয়েছে। বিদ্যুৎ নেই দেখে হাসপাতালের জরুরি সার্জারি কার্যক্রম আটকে আছে। জরুরি ওষুধ সংকটে পড়েছে জনগণ। খাবারের জন্য সাধারণ মানুষ দক্ষিণ ভারতে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কাগজ কালি আমদানি না হওয়ায় সংবাদপত্র ছাপানো বন্ধ। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকছে মানুষ।

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য রাস্তাঘাটের আলো বন্ধ রাখা হয়েছে। মুদ্রার অবমূল্যায়নে ১ ডলারের বিপরীতে ৩০০ শ্রীলঙ্কান রুপি পাওয়া যাচ্ছে। ১টি ডিম ৩৪ টাকা, ১ কাপ চা ২৯ টাকা, ১ কেজি চাল ২৫১ টাকা, ১ কেজি চিনি ২৭৪ টাকা, ১ লিটার পেট্রোল ৩৫০ টাকা। সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায়। এ দুরবস্থা এক দিনে সৃষ্টি হয়নি। বিশ্লেষণ করতে গেলে অর্থনীতিবিদ না হয়েও অনুমান করতে কারও কষ্ট হওয়ার কথা নয়। যেসব কারণ চিহ্নিত হয়েছে তার মধ্যে ২০১৯ সালে রাজস্ব আয়ের উৎস ভ্যাট ১৫% থেকে কমিয়ে ৮% করা, এতে রাজস্ব আয় কমে যায় শতকরা ২৫ ভাগ। করোনার কারণে অন্যতম আয়ের উৎস পর্যটনশিল্পে ধস নামে। রাসায়নিক সারের ও কীটনাশকের উচ্চমূল্য হওয়ায় বা অন্য কোনো কারণে হোক আমদানি নিষিদ্ধ করে শতভাগ অর্গানিক সার ব্যবহারের সিদ্ধান্ত ছিল আত্মঘাতী। এতে কৃষিজ উৎপাদন ২০% কমে যায়, একসময় চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশটি ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের চাল আমদানি করতে বাধ্য হয়। চা রপ্তানিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। করোনার কারণে প্রবাসী শ্রীলঙ্কানদের পাঠানো রেমিট্যান্সও উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। তার ওপর মেগা প্রকল্পগুলোর বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতায় দেশটির পুনরায় ঋণ চাহিদা বেড়ে যায়। সরকার আরও ঋণ নিতে বাধ্য হয়। এ ঋণ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ উৎস থেকে নিতে বাধ্য হয় দেশটি।

এসব খবর পড়ে এক ধরনের খারাপ লাগা অনুভূতি কাজ করছে। সাগরকন্যা শ্রীলঙ্কার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ। ভারত সাগরের এ দ্বীপদেশটির প্রধান আয়ের উৎস পর্যটনশিল্প। করোনার কারণে লকডাউনে পৃথিবীর সব দেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া নিত্যপণ্য সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে দেশটির পর্যটনশিল্প ঝুঁকিতে পড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধেও পৃথিবীতে শক্তির মেরুকরণের শিকার হয়েছে শ্রীলঙ্কা। তার ওপর শতভাগ অর্গানিক কৃষি উৎপাদনের মতো উচ্চাকাক্সক্ষা করতে গিয়ে কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কৃষি উৎপাদন ব্যাহত না হলে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে এত বেহাল দশা হতো না বলে মনে হয়।

দীর্ঘ দুই বছর বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি দাপিয়ে বেড়িয়েছে। বিশ্বের তাবৎ উন্নত দেশগুলোকে লাশের বোঝা টানতে দেখেছি। করোনা আতঙ্ক থেকে বের হতে না হতেই শুরু হয়ে গেল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ যুদ্ধের প্রভাব সারা বিশ্বেই পড়ছে, কারণ পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বিভিন্ন দেশ পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্বের ৪৫টি দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করে নিজ দেশের চাহিদা মেটায়। খাদ্য, জ্বালানি, সারের মতো অতি প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ বিঘিœত হচ্ছে। সমুদ্রপথে পরিবহন খরচ বেড়েছে বহুগুণ। মূল্যস্ফীতি দেখা দিচ্ছে দেশে দেশে। খাদ্য ও জ্বালানি সংকটে মূল্যস্ফীতি ঘটছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে দরিদ্র দেশগুলোয় সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। করোনা মহামারি-পরবর্তী এ যুদ্ধ অনেক দেশের অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। আমাদের দেশেও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল ও সার আমদানি বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে ধারণাতীত বহুগুণ। প্রতিদিন খবরের শিরোনাম হচ্ছে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। এরই মধ্যে আমাদের দেশের কিছু দেশপ্রেমিক মানুষ শ্রীলঙ্কার অবস্থা থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। সমসাময়িক কোনো দেশের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় নীতিনির্ধারকদের ব্যর্থতার গল্প থেকে শিক্ষা নেওয়াই যায়। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে এ অমূলক দুশ্চিন্তা পরিহার করাই হবে সমীচীন। যে কোনো সংকট বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা দিয়ে উদ্ভাবনী পন্থায় মোকাবিলা করেন।

প্রথমেই লক্ষ্য করা যায় বাংলাদেশ বিশ্বের ছোট বড় উন্নত-অনুন্নত সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে আত্মমর্যাদা নিয়ে চলে। বলা যায় উদীয়মান আত্মবিশ্বাসী দেশ বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুনির্দিষ্ট ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনামাফিক দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। রূপকল্প-২০২১, এসডিজি অর্জন-২০৩০, পরিকল্পনা-২০৪১ ও ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এর মতো ধারাবাহিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশে মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্প প্রণয়নে সম্ভাব্যতা যাচাই, পরিবেশ সংরক্ষণ, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, সংস্কৃতি সবকিছুই বিবেচনায় নেওয়া হয়। দেশের পরিকল্পনাবিদ-পরামর্শকদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে নেওয়া মেগা প্রকল্প থেকে দেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের সুবিধা আসবে তা পর্যালোচনা করা হয়। চাপিয়ে দেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত বা অনুরোধে ঢেঁকি গেলার সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে এসেছে। বিশ্বের সব ধরনের পরিবর্তনের সঙ্গে বাংলাদেশ যেন পা মেলাতে পারে তার পূর্বপ্রস্তুতি ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেমন ডিজিটাল বাংলাদেশ, মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের পর যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হতে পারে সে বিষয়ে নির্দেশনাসহ প্রস্তুতি গ্রহণ, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশল; রপ্তানি খাত বৃদ্ধি, আমদানিবিকল্প পণ্য উৎপাদন, আয়ের পরিধি বাড়ানো সম্ভাব্য শিল্পের বিকাশ, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে অর্থনৈতিক কূটনীতিকে উৎসাহিত করা এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বিষয়গুলো নিরলসভাবে মনিটরিং করে।

বাংলাদেশের যুবশক্তির দক্ষতা উন্নয়ন, বিভিন্ন দেশে চাহিদা-ভিত্তিক জনশক্তি রপ্তানি খাত বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মানুষের গড় আয় বৃদ্ধি, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে শতভাগ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রাপ্তি মানুষের জীবনমানে পরিবর্তন এনেছে। ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ সুবিধা বৃদ্ধি করে বিদেশি বিনিয়োগ আহ্বান করা হচ্ছে। রিজার্ভে টাকা থাকায় আমদানি ব্যয় মেটানো, সময়মতো ঋণ মওকুফ ও প্রয়োজনীয় ক্রয় পরিকল্পনা করা যাচ্ছে।

যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন অর্থনীতির চাকাকে আরও গতিশীল ও সচল রেখেছে। কৃষি উৎপাদনে রাসায়নিক সার ও বীজ আমদানি, সরবরাহ ও ভর্তুকিমূল্যে বিতরণ যে কোনো মূল্যে অব্যাহত রাখা হয়েছে। শতভাগ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প, বাংলার দামাল ছেলেদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স ও বাংলার কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বুক পেতে আগলে রেখেছে। বাংলাদেশ প্রয়োজনে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিচ্ছে বহুপক্ষীয় উৎসকে এর দীর্ঘমেয়াদি নগণ্য সুদহারের কারণে। উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়ার ইতিহাস বাংলাদেশের নেই। এ ছাড়া দেশ স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশের প্রাপ্ত সহায়তার প্রায় শতভাগ ছিল অনুদান। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ অনুদান-নির্ভরশীলতা থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এসেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করা দেশটি এখন বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প নিজ অর্থে বাস্তবায়ন করে সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।

শ্রীলঙ্কার তরুণ শিল্পী ইয়োহোনির ডি সিলভা যার ‘মানিকে মাগে হিতে’ একটি গানের জন্য বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ ভক্ত রয়েছে। নিজ দেশকে স্বর্গ দাবি করে এ সংকটে গভীর অনুভূতি নিয়ে শ্রীলঙ্কার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ভক্তদের তিনি আকুল আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর অনুভূতির সঙ্গে আমরাও একাত্মতা প্রকাশ করছি। বন্ধুপ্রতিম শ্রীলঙ্কার আকাশ থেকে অর্থনৈতিক দুর্যোগের ঘনঘটা কেটে যাক- এ প্রত্যাশা রইল বাংলাদেশের জনগণের।

            লেখক : অতিরিক্ত সচিব।

সর্বশেষ খবর