রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

মানুষ হত্যা কবিরা গুনাহ

মো. আবু তালহা তারীফ

মানুষ হত্যা কবিরা গুনাহ

খুনাখুনি ও রক্তপাত ইসলাম পছন্দ করে না, আল্লাহতায়ালা কেয়ামতে সর্বপ্রথম খুনের বিচার করবেন। সেদিনের খুনের বিচার হবে খুব কষ্টদায়ক। তিরমিজিতে উল্লেখ রয়েছে, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন নিহত ব্যক্তি তার হত্যাকারীর চুলের মুঠি ও মাথা ধরে আল্লাহর দরবারে এমন অবস্থায় হাজির হবে যে, তখন তার রগগুলো থেকে রক্ত পড়তে থাকবে। সে ফরিয়াদ করবে- হে আমার প্রভু! এ ব্যক্তিই আমাকে হত্যা করেছে। এ কথা বলতে বলতে সে আরশের নিকটবর্তী হয়ে যাবে।’ অন্য হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি আসমান-জমিনের প্রত্যেকেই কোনো মোমিন হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে প্রত্যেককেই জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।’ তিরমিজি।

সুরা ত্বিনে আল্লাহ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হিসেবে মানুষকে উল্লেখ করেছেন।  তাদের জীবনের নিরাপত্তার কথা ইসলামে আলোচনা করা হয়েছে। বিদায় হজের ভাষণে সাহাবিদের উপস্থিতিতে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের রক্ত তথা জীবন ও সম্পদ পরস্পরের জন্য হারাম এবং অন্যের জানমালের ক্ষতিসাধন করাও নিষিদ্ধ।’ কাউকে অহেতুক হত্যা করা সামাজিক অনাচার ও জুলুমের অন্তর্ভুক্ত। তাই শান্তির ধর্ম ইসলামে সব ধরনের হত্যা, রক্তপাত, সন্ত্রাস  কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শরীরের পেশিশক্তি, বংশের বড়াই করে সহিংসতা, নৃশংসতা, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, বিপর্যয়, হানাহানি, উগ্রতা, বর্বরতা, খুন-খারাবিসহ যে-কোনো অশান্তি সৃষ্টি করা সম্পূর্ণভাবে অন্যায়। এ ব্যাপারে কোরআনে সুস্পষ্ট আলোচনা রয়েছে। কোরআন বলছে, ‘নরহত্যা কিংবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করা ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত ৩২)

খুন-খারাবি, সমাজে অরাজকতা তৈরি থেকে নিজকে রক্ষা করতে হবে। অন্যের ক্ষতি হয় এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে নিয়োজিত রাখা খুবই জরুরি। মনে রাখবেন, দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। দুনিয়া থেকে চলে যেতে হবে। তাই পরকালে শান্তিতে থাকার কর্ম করতে হবে। অন্যকে হত্যা করলেই জাহান্নামের মধ্যে চিরস্থায়ীভাবে থাকতে হবে। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মোমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত ৯৩)

প্রিয় পাঠক! একটু ভাবুন, কাউকে হত্যা করলে পরিবারের একজন সদস্য অকালে নিহত হয়। তার নিহত হওয়ায় পুরো পরিবারেই শোকের ছায়া নেমে আসে। খুন হওয়া ব্যক্তির আদর-স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয় পরিবার ও আত্মীয়রা। কলিজার টুকরা সন্তানরা এতিম হয়ে যায়। স্ত্রী স্বামীহারা, স্বামী স্ত্রীহারা হয়ে যায়। পরিবারে অর্থনৈতিক সমস্যা চেপে বসে। একটি অন্যায় হত্যা  বিশ্বমানবতাকে হত্যার সমতুল্য বলা হয়েছে। এজন্যই রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সে আমার উম্মত নয় যে আমার অন্য কোনো উম্মতকে অবৈধভাবে হত্যা করে।’ (আবু দাউদ)

 

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর