একা একা অনেক দূর চলে যাই। জিন্দাবাহার থার্ড লেনের পুব দিকে পানির ট্যাংকির কাজ চলছে। আমার তখন ঢাকা আর বিক্রমপুর মিলিয়ে জীবন। ঢাকার কোনো প্রাইমারি স্কুলে পড়া হয়নি। মেদিনীমণ্ডলের পাশের গ্রাম কাজির পাগলা এটি ইনস্টিটিউশনে ক্লাস টুতে ভর্তি হয়েছি। নানির কাছে থেকে পড়ি। ছুটিছাটায় জিন্দাবাহারে চলে আসি। অনেক সময় ছুটি না থাকলেও আসি। পানির ট্যাংকির ওদিককার গলি দিয়ে লায়ন সিনেমার উত্তর-দক্ষিণের রাস্তায় গিয়ে উঠি। উত্তরে খানিক এগোলেই ছোট্ট একটা বাঁক। বাঁকের মুখে ‘ইউনিভার্সেল প্রেস’। সারাক্ষণ ছাপার কাজ চলছে। প্রেস বাড়িটি দোতলা। ও পথে নয়াবাজারের দিকে যেতে যেতে প্রেস বাড়িটির দিকে তাকাতাম। রাস্তার দুই পাশের নর্দমায় নোংরা ময়লা জমে আছে। আমার বয়সি শিশুরা নর্দমার ধারে বসে মল ত্যাগ করছে। হাওয়ায় বাজে গন্ধ। সে-ই জীবনের তিরিশ-পঁয়ত্রিশ বছর পর এই ইউনিভার্সেল প্রেসের বাড়িটিতে বেশ কয়েকবারই গিয়েছি। প্রেসের মালিক কবি শামসুর রাহমানের পরিবার। শামসুর রাহমান দোতলায় থাকেন। সালেহ চৌধুরী, হুমায়ুন আজাদ ও হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে এই বাড়ির নিচতলার বসার ঘরে অনেক বিকাল সন্ধ্যা শামসুর রাহমানের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে কাটিয়েছি। ইসলামপুর এলাকায় শামসুর রাহমানের শ্বশুরপক্ষেরও বাস ছিল। আওলাদ হোসেন লেনে বিখ্যাত কাজীবাড়ি। সে-ই বাড়ির কাজী জহুরুল হক ১৮৮৯ সালে এন্ট্রান্স পাস করেছিলেন। ভিক্টোরিয়া পার্কের পূর্ব পাশে ‘ঢাকা মুসলিম হাই স্কুল’। ১৮৯৩ সালে কাজী জহুরুল হক সাহেব এই স্কুলের প্রথম হেডমাস্টার হিসেবে নিয়োজিত হয়েছিলেন। তিনি শামসুর রাহমানের দাদাশ্বশুর। এই তথ্য পাওয়া যায় নাজির হোসেন সাহেবের ‘কিংবদন্তির ঢাকা’ গ্রন্থে।
ওদিক দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমি চলে যাই নয়াবাজারের সামনের চৌরাস্তার মোড়ে। ডান দিকে গেলে তাঁতিবাজার। বাঁ-দিকে নয়াবাজার। বাজারে সারি সারি টিনের ঘর। পশ্চিমে আরও দূর গেলে কয়েকটি কাগজের দোকান। একটি মিষ্টির দোকান। ঘিয়ের গন্ধে ম-ম করে দোকানটির আশপাশ। তারপর আরমানিটোলার মাঠ। থার্ড লেনের পশ্চিম দিককার গলি দিয়ে উত্তরে সোজা এলেও নয়াবাজারে যাওয়া যায়। এই গলির একটা বাড়ি খুব সুন্দর। সে-ই বাড়িতে কয়েকজন বিদেশির বাস। মোটা ফর্সা ফর্সা পুরুষ-মহিলারা কোন ভাষায় কথা বলে বুঝতে পারি না। বাড়ির ভিতর সব সময় লাল একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। আরেকটু এগিয়ে গেলে বাঁ-দিকে আরেকটা সরু গলি। ওই গলি গিয়ে শেষ হয়েছে আরমানিটোলা মাঠের কোণে। এই মাঠেও ছেলেরা ফুটবল ক্রিকেট খেলে। মাঠের পশ্চিমে ‘শাবিস্তান সিনেমা’ হল। তার আগে পুরনো একটা পানির ট্যাংক। ও দিককার যে রাস্তাটি দক্ষিণে চলে গেছে, সে-ই জায়গাটার নাম বাবুবাজার। এই এলাকায় আর্মেনিয়ানদের বাস ছিল। এই জন্য আরমানিটোলা নাম। তাদের প্রাচীন গির্জাটা এখনো আছে। আমার গনিমামা জগন্নাথ কলেজে নাইট শিফটে পড়েন। দিনের বেলায় কোথায় যেন চাকরি করেন। থাকেন আরমানিটোলা মাঠের উত্তর দিককার গলির বাঁ-দিকে ঢুকে যাওয়া অতি সরু একটা গলির শেষ মাথার মেসবাড়িতে। তাঁর বয়সি বেশ কয়েকজন যুবক থাকে মেসবাড়িতে। একতলা দুটো পুরনো দালান বাড়িতে। সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হয়। আমাদের জিন্দাবাহারের বাড়ির মতোই সোঁদা গন্ধে ভরা। প্রায়ই সে-ই মেসবাড়িতে চলে যাই আমি। আরমানিটোলায় আছে ‘আনন্দময়ী গার্লস হাই স্কুল’। আমার পুনুখালা সে-ই স্কুলে কিছু দিন পড়েছেন। ‘আরমানিটোলা হাই স্কুল’ খুবই বিখ্যাত। শিক্ষিত নামি পরিবারগুলোর ছেলেরা এই স্কুলে পড়ত। অনেক পরে জেনেছি পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী উৎপলা সেনদের বাড়িও এই আরমানিটোলায়। মাঠের পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে একতলা দালানের ক্লাবঘর। ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন’-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর। নাম ছিল ‘ঢাকা টেলিভিশন’। সন্ধ্যাবেলা দুই ঘণ্টা করে প্রচারিত হতো। সপ্তাহে এক দিন প্রচার বন্ধ থাকত। সোমবার। আরমানিটোলা মাঠের ক্লাবঘরে একটা টেলিভিশন কেনা হয়েছে। এলাকার শত শত মানুষ টেলিভিশন দেখতে ভিড় করে। গনিমামা আমাকে একদিন ওখানে টেলিভিশন দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। ছোট বাক্সটির ভিতর সিনেমার মতো দৃশ্য। কী বিস্ময়কর!
নয়াবাজারে বাজার করতে যেতেন আব্বা। আমি যেতাম তাঁর পিছন পিছন। বাজারের দক্ষিণ পাশে একটা পার্ক। তখনই প্রায় পরিত্যক্ত। দু-চারটা ফুলের ঝোপঝাড় আছে। ম্লান হয়ে যাওয়া পাতাবাহারের ঝোপ আছে। বড় বড় কয়েকটা গাছ আছে ছড়ানো ছিটানো। পার্কের ভিতর দিয়ে পায়ে চলা পথ। ওই পথে আমরা যাই বাজারে। নয়াবাজারে দুয়েকটা একতলা দালান। সে-ই দালানে বড় কারবারিদের দোকান। অন্য দোকানপাট সবই টিনের ঘরের। বাজারের পুব পাশের রাস্তার ওপারে কাঠের আড়ত। করাতকলও আছে দুয়েকটা। এই রাস্তা দিয়ে উত্তরে গেলে আমার শফিউদ্দিন দাদার মেসবাড়ি। তিনি আব্বার চাচা। ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটিতে চাকরি করেন। তিনিই আব্বাকে এনে মিউসিপ্যালিটিতে কেরানির চাকরি দিয়েছেন। হঠাৎ হঠাৎ দাদার মেসে চলে যাই। দাদা বাকরখানি আর চা খাওয়ান। ঘন দুধের অপূর্ব চা। মেসবাড়ির কাজের ছেলেটি অ্যালুমিনিয়ামের পুরনো কেটলিতে করে দু’আনার চা কিনে আনে। তাতে দু’কাপ চা হয়। আর দু’আনা দিয়ে আনে চারটা বাকরখানি। দাদার সঙ্গে ভাগ করে খাই। চায়ে বাকরখানি ভিজিয়ে খাওয়ার যে কী আনন্দ, কী স্বাদ! ওই বয়স ছাড়া জীবনে কখনোই অতি সামান্য খাবারের এ রকম মূল্যবান স্বাদ বোঝা যায় না।
আমাদের সে-ই সময়কার জীবনের ঢাকার তিনটি উৎসবের কথা খুব মনে পড়ে। ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস। দুপুরের পর পর সেদিন বুড়িগঙ্গায় হতো নৌকাবাইচ। লম্বা লম্বা ছিপ নৌকা। একেক নৌকায় একেক রঙের পোশাক পরা লোক। লাল নীল হলুদ সবুজ। একতালে বইঠা ফেলছে তারা। একজন মানুষ সামনের দিককার গলুইয়ের কাছে দাঁড়িয়ে এমনভাবে দুলছে, সে-ই দুলুনির ভঙ্গিটা এমন, যেন তিনি আসলে নৌকাটিকে ধাক্কা দিচ্ছেন। ধাক্কা দিয়ে দিয়ে নৌকা এগিয়ে নিচ্ছেন। এপাড়ে সদরঘাট ওপাড়ে জিঞ্জিরা। বুড়িগঙ্গার দুই তীরে শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে নৌকাবাইচ দেখছে আর সমানে চিৎকার করছে। আনন্দে ফেটে পড়া দিন। আমাদের সে-ই নৌকাবাইচ দেখতে নিয়ে গেছেন আব্বা।
দুর্গাপূজার সময় বিশাল আয়োজন হয় শাঁখারিবাজার আর তাঁতিবাজারে। ঢাকের আওয়াজে মুখর হয় চারদিক। আব্বা আমাদের নিয়ে যান পূজামণ্ডপ দেখাতে। যাওয়াটা হয় সন্ধ্যার পর। দিনের বেলায় আমি কখনো একা একা চলে যাই। দুর্গাপূজা উপলক্ষে মিষ্টির দোকানগুলোতে সাজ সাজ রব। লাড্ডু আর আমৃতি সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিস্তর। চিনি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে হাতি-ঘোড়া, বাঘ-ভালুক। শিশুদের খেলনার মতো, ছোট ছোট। জিনিসটা শুধুই চিনি। চিনি গুলিয়ে ছাচে ফেলে তৈরি করা হয়েছে। আমার যে কী লোভ ছিল ওই সব জিনিসের! দশমীর দিন মূর্তি ডোবানো হবে বুড়িগঙ্গায়। ঠেলাগাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দুর্গামূর্তি। চারপাশে অজস্র মানুষ। আমিও ভিড়ের ভিতরে ঢুকে গেছি। আশুরার দিন মিছিল আসত হোসেনী দালানের ওদিক থেকে। সবার মুখে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’। দুই ঈদের কোনোটাই তখনো পর্যন্ত ঢাকায় করা হয়নি আমাদের। ঈদের সময় গ্রামে থাকতাম আমরা। ওই বয়সে শবেবরাতের উৎসবেও ঢাকায় থাকা হয়নি। জিন্দাবাহার থেকে গেন্ডারিয়ায় চলে যাওয়ার পর শবেবরাত আর দুটো ঈদই ঢাকায় করেছি। সে-ই উৎসবের কথা গেন্ডারিয়া পর্বে বলব।
রমনা রেসকোর্সে রেসের খেলা হতো রোববার। ঘোড়া দৌড়ের বাজির খেলা। আমাদের আবেদীন নানা, অর্থাৎ বীনা খালার বাবা বোধ হয় ওয়াপদায় সরকারি চাকরি করতেন। রেসের মাঠের টিকিট কাউন্টারেও কাজ করতেন রোববার দুপুরের পর থেকে। এ কথা শুনেছি মায়ের মুখে। আমার খুব রেস দেখার শখ। ভূঁইমালি আজিজ আমাকে খুব ভালোবাসে। আব্বার প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। কারণ আব্বাই তাকে ভিক্টোরিয়া পার্কে ভূঁইমালির কাজটা দিয়েছেন। শাঁখারিবাজারের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই ভিক্টোরিয়া পার্কে। আজিজ আমাকে নানা রকমের গাছ চেনায়। আপেল চারা, নাশপাতি চারা, আঙুরলতা, কমলার চারা। ওই সব গাছের চারা দেখে স্বপ্নের মতো মনে হয় আমার। এত সব মহার্ঘ ফলের চারা লাগিয়েছে আজিজ? নিশ্চয় একদিন ফল ধরবে। গাছে গাছে ঝুলবে লাল লাল আপেল। সাদা বড় নাশপাতি। হলুদ হলুদ কমলা আর থোকা থোকা আঙুর। আজিজ বিয়ের জন্য উতলা হয়েছে। গ্রামে তার জন্য পাত্রী ঠিক হয়েছে। ভিক্টোরিয়া পার্কে এক দুপুরে আজিজ আমাকে একটা তেজপাতাগাছ দেখাল। কচি একটা পাতা ছিঁড়ে আমার হাতে দিয়ে বলল, ‘দেখ কী সুন্দর গন্ধ। নতুন বউয়ের শরীরে এ রকম কাঁচা তেজপাতার গন্ধ হয়।’ সে-ই বয়সে কথাটার অর্থ বুঝিনি। ঘটনাটা লিখেছিলাম ‘মায়ানগর’ উপন্যাসে। আজিজ আমাকে এক রোববারে নিয়ে গিয়েছিল রমনার রেসকোর্স ময়দানে। কাঠের ঘের দেওয়া মাঠ। বহু উৎসাহী মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। একসময় উত্তর দিক থেকে কাঠের ঘেরের ভিতর দিয়ে স্বপ্নের মতো দৌড়ে আসতে লাগল অনেকগুলো ঘোড়া। পিঠে বসে আছে রঙিন পোশাক পরা ‘জকি’। তারা ঠিক বসে নেই। ঘোড়ার পিঠের হাতখানেক ওপরে তাদের পশ্চাৎদেশ। ঘোড়াগুলো পাগলের মতো ছুটছে। কে কার আগে যাবে। অনেকটা নৌকাবাইচের মতো। আজ এত এত বছর পরও দৃশ্যটা আমার চোখে লেগে আছে।
তত দিনে একটু বোধ হয় পেকেও উঠেছি। একা একা অনেক দূর যাওয়ার সাহস করি। গ্রাম থেকে হামিদ মামা এসেছেন। তাঁর খুব শখ চিড়িয়াখানা দেখার। ঢাকার রাস্তাঘাট কিছুই চেনেন না। কে নিয়ে যাবে চিড়িয়াখানা দেখাতে? ঢাকা চিড়িয়াখানাটি তখন এখনকার নতুন হাইকোর্টের উত্তর-পশ্চিম পাশটাতে। আমি বাহাদুরি করে বললাম, ‘আমি নিয়ে যাব। আমি সব চিনি। চিড়িয়াখানার পর রমনা পার্ক। সে-ই পার্কও চিনি।’ এক দুপুরের পর রওনা দিলাম হামিদ মামাকে নিয়ে। তখন এত বাস নেই ঢাকায়। সদরঘাট থেকে বাস যায় গুলিস্তান পর্যন্ত। ভিক্টোরিয়া পার্কের দক্ষিণ পাশে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড। ট্যাক্সি নিয়ে যাওয়া যায়। রিকশায়ও যাওয়া যায়। কিন্তু আমরা অত পয়সা পাব কোথায়? হেঁটে রওনা দিলাম। নয়াবাজারের পুব পাশের রাস্তাটা দিয়ে সোজা উত্তরে। কাজী আলাউদ্দিন রোড ছাড়িয়ে ডান পাশে ফুলবাড়িয়া স্টেশন। সোজা নাক বরাবর চললে হাতের বাঁ-দিকে কার্জন হল। আরও এগোলে হাইকোর্ট। হাইকোর্ট বাঁয়ে রেখে এগিয়ে গেলে চিড়িয়াখানা। বড় রাস্তার পাশে গ্রিল দেওয়া সাইকেল চালানোর পথ। তারপর ফুটপাত। চিড়িয়াখানায় ঢুকতে পয়সা লাগে না। অনেকটা বেলা থাকতেই হামেদ মামাকে নিয়ে পৌঁছে গেলাম চিড়িয়াখানায়। অনেকক্ষণ ঘুরে ঘুরে চিড়িয়াখানা দেখলাম। কিছু দিন আগে আব্বা আমাদের নিয়ে একদিন চিড়িয়াখানা আর রমনা পার্কে বেড়াতে এসেছিলেন। রাস্তাটা আমি চিনে রেখেছিলাম। অনায়াসে চলে এসেছিলাম হামিদ মামাকে নিয়ে। আমার প্রতিভায় মামা বিরাট খুশি। বাসায় ফিরে মা আর আব্বার কাছে আমার যে কী প্রশংসা! এইটুকু ছেলে এত দূরের রাস্তা চিনিয়ে নিয়ে গেছে! অবাক কাণ্ড।
চিড়িয়াখানা দেখে আমরা চলে গিয়েছিলাম রমনা পার্কে। দক্ষিণ দিক দিয়ে ঢুকে সোজা উত্তরে গিয়েছি। শিশুদের খেলার জায়গাটায় দোলনায় চড়লাম, সিøপারে চললাম। শেষ বিকেলে ধরেছিলাম বাড়ির পথ। উত্তর থেকে ফিরছি। মাঝামাঝি জায়গায় আট-দশ হাত চওড়া একটা নালার মতো। পশ্চিম দিককার লেক থেকে নালাটা পূর্ব দিকে চলে গেছে। সেখানে একটা কালভার্ট।
কালভার্টের কোনায় বসে একটা লোক ছোট একটা ছিপ দিয়ে অবিরাম পুঁটিমাছ ধরছে। তার হাতের কাছে একটা অ্যালুমিনিয়ামের পুরনো লোটা আর ছোট একটা বাটিতে রোয়া রোয়া ভাত। একটা করে ভাত ছোট্ট বড়শিতে গেঁথে নালায় ফেলছে আর টানে টানে পুঁটিমাছ উঠছে। দৃশ্যটা আজও আমার চোখে লেগে আছে। মগবাজারে থাকার সময় বিকালবেলা হাঁটতে যেতাম রমনা পার্কে। সে-ই কালভার্টের ওদিকটায় গেলেই পুঁটিমাছ ধরার দৃশ্যটা মনে পড়ত। কত দিনকার কত গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি চোখ থেকে, মন থেকে মুছে গেছে। কিন্তু ওই যে ছেলেবেলার এক বিকালে রমনা পার্কের নালার ধারে বসে একটা লোককে পুঁটিমাছ ধরতে দেখেছিলাম, সে-ই স্মৃতি ভুলিনি। জীবনস্মৃতির খেলাটা বোধ হয় এ রকমই। অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি মুছে যাবে, অতি সামান্য কোনো স্মৃতি মনে রয়ে যাবে।
লেখক : কথাসাহিত্যিক