২০১২ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয় লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে। ষাট দশকের মধ্যভাগে যিনি পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি অফিসার ও সৈনিকদের বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সংগঠিত করেন। বিষয়টি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার নজরে পড়ে। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয় কমান্ডার মোয়াজ্জেম ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে। জড়ানো হয় তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়। সে মামলার প্রধান আসামি ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে পাকিস্তানের সেনাপতি শাসক ফিল্ড মার্শাল আইউব খান শেখ মুজিবসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে বাধ্য হন।
বলছিলাম কমান্ডার মোয়াজ্জেমের কথা। ২০১২ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার ঘোষণার পরপরই ২০ মার্চ বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদকীয় পাতায় ‘শহীদ এক স্বাধীনতাসংগ্রামীর কথা’ শীর্ষক আমার একটি লেখা ছাপা হয়। তাতে কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনের সঙ্গে কিশোর বয়সেই আমার জড়িয়ে পড়ার তথ্য ছিল। লেখাটি প্রকাশের দিনই জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলীর ফোন পাই। বলেন কমান্ডার মোয়াজ্জেমের সঙ্গে তাঁরও অনেক স্মৃতি রয়েছে। চায়ের নিমন্ত্রণও জানান তিনি। দুই বা তিন সপ্তাহ পর দেখা হয় কর্নেল শওকতের সঙ্গে। তাঁর কাছেই জানতে পারি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে বাঙালি অফিসার ও সৈনিকদের নিয়ে তাঁরা যে বিপ্লবী পরিষদ গঠন করেছিলেন, তার একাংশকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জড়ানো হলেও অন্যরা ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাঁদের একজন ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের তৎকালীন জুনিয়র অফিসার মাহবুবুর রহমান। যিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল এবং সেনাপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত হন বিচারপতি হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে।
ডেপুটি স্পিকার কর্নেল শওকতের কাছ থেকে জানার পর জেনারেল মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে পরিচয়ের জন্য উন্মুখ হয়ে উঠি। আমার আগ্রহের কথা বলি বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিএনপি বিটের দায়িত্বে থাকা স্নেহভাজন মাহমুদ আজহারকে। যার বাড়ি বৃহত্তর দিনাজপুরের পঞ্চগড়ে। আজহার বললেন, ‘স্যারের বাসায় যাওয়া কোনো সমস্যা নয়।’ হঠাৎ একদিন তিনি বলেন, ‘জেনারেল মাহবুব স্যার অতীশ দীপঙ্কর সম্পর্কে লেখা পাঠিয়েছেন।’ লেখাটি ছাপার সপ্তাহখানেক পর বাংলাদেশ প্রতিদিন অফিসে আসেন তিনি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের আগেই ১৯৬৬-৬৭ সালের দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে তাঁরা যে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তা নিয়ে অনেক কথা হয়। কথা হয় চীন প্রসঙ্গে। যে দেশে তিনি বাংলাদেশের মিলিটারি অ্যাটাচে হিসেবে ছিলেন দীর্ঘদিন। এসব বিষয়ে তাঁকে লেখার অনুরোধ করি। আমার ও স্নেহভাজন সহকর্মী ড. শেখ মেহেদী হাসানের অনুরোধে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদকীয় পাতায় লেখা শুরু করেন এই ‘মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল’।
দুই. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বলতে অনেকে একাত্তরের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কে সামনে আনেন। একাত্তরে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি তা নিছক ৯ মাসের নয়, ২৩ বছরের অক্লান্ত সংগ্রামের ফসল। একাত্তরের অনেক আগেই শুরু হয়েছিল দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম সংঘটিত হয়েছে রাজনৈতিক নেতৃত্বে এবং এ বিষয়ে তাঁদের কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। এর পাশাপাশি অপ্রকাশ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার ও সৈনিকদের একাংশের সংগঠিত হওয়ার বিষয়টিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা জড়িয়ে পড়েছিলেন দেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে।
রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রথম পূর্ব পাকিস্তানের ন্যায্য হিস্সা ও স্বায়ত্তশাসনের দাবি উপেক্ষিত হলে পশ্চিম পাকিস্তানকে ‘আসসালামু আলাইকুম’ জানাবার হুমকি দেন। ১৯৫৭ সালের ৬ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের কাগমারীতে আওয়ামী লীগের সম্মেলন ডাকেন মওলানা ভাসানী। সে সম্মেলনে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কাছে পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও আমেরিকার সামরিক জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানান। স্মর্তব্য, ১৯৫৬ সালে রিপাবলিকান দলের সঙ্গে জোট বাঁধে আওয়ামী লীগ। দলের নেতা শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে গঠিত হয় মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রাদেশিক সরকার। পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ছিল অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু এ দলের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ভিন্ন ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। আতাউর রহমান খানের ভূমিকাও ছিল আপসমূলক। যা মেনে নিতে পারেননি দলের সভাপতি মওলানা ভাসানী। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন। গঠন করেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামের রাজনৈতিক দল। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর হাতে শেখ মুজিবের রাজনীতিতে হাতেখড়ি। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল মওলানা ভাসানীর। মতাদর্শগতভাবেও মুজিব ছিলেন মওলানার কাছের মানুষ। স্বাধিকারের প্রশ্নে তাঁদের অবস্থান ছিল এককাতারে। কিন্তু এ নিয়ে দলে ভাঙন চাননি শেখ মুজিব। মওলানা ভাসানী দল ত্যাগ করলেও তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতি কখনো হয়নি।
তিন. পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে স্বাধীনতা অর্জনের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর বাঙালি অফিসার এবং সৈনিকদের একাংশ সংগঠিত হওয়া শুরু করে ষাট দশকের প্রথমার্ধে। যাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর স্বাধীনতাকামী বাঙালি অফিসার ও সৈনিকদের লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন। ধরা না পড়া বিপ্লবী অফিসারদের একজন হলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের জুনিয়র অফিসার মাহবুবুর রহমান। ১৯৬৩ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে স্বাধীনতার জন্য গঠিত বিপ্লবী গ্রুপটির সঙ্গে জড়িত হন। এই গ্রুপের সঙ্গে বিভিন্ন সভায় সক্রিয়ভাবে অংশও নেন। ১৯৬৭ সালে বিপ্লবী গ্রুপটির একাংশ ধরা পড়লেও মাহবুবুর রহমানসহ কয়েকজন থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মাহবুবুর রহমান পাকিস্তানে আটকা পড়েন। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের সহযোগিতায় দেশে ফিরে আসেন। যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। ১৯৯৬ সালের ২০ মে তিনি সেনাপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত হন। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি দিনাজপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য পদেও অধিষ্ঠিত হন তিনি। ২০১৯ সালে অসুস্থতার জন্য রাজনীতি থেকে অবসর নেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য যেসব বাঙালি অফিসার ও সৈনিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে বিপ্লবী গ্রুপ গড়ে তুলেছিলেন তাঁদের অবদানকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কেন তাঁরা এমন ঝুঁকি নিয়েছিলেন এ প্রসঙ্গে লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমানের বক্তব্য, ষাট দশকেই বাঙালিদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানিদের অবহেলা ও বঞ্চনা তাঁকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পেছনেও ছিল স্বাধীনতার স্পৃহা। ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র থাকাকালে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানিদের অবহেলা ও বৈষম্যমূলক আচরণকে আরও কাছে থেকে দেখার সুযোগ পান। এ অবস্থায় কুমিল্লা সেনানিবাসে অর্ডিন্যান্স কোরের বাঙালি অফিসার ক্যাপ্টেন শওকত আলী (পরবর্তী সময়ে কর্নেল ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার) এবং মেডিকেল কোরের আরএমও ডা. ক্যাপ্টেন শামসুল আলমের (পরবর্তী সময়ে কর্নেল) সঙ্গে পরিচয় হয়। তাঁরা নবীন অফিসার হিসেবে মাহবুবুর রহমানকে স্নেহ করতেন। ক্যাপ্টেন শওকত ও শামসুল আলম বাঙালিদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাংলাদেশকে স্বাধীন করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সুযোগ পেলেই চুপিসারে অনেক কথা বলতেন। তাঁদের সঙ্গে মতবিনিময়ের একপর্যায়ে মাহবুবুর রহমান বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য হন। ক্যাপ্টেন শওকতের সঙ্গে কুমিল্লা শহরের ভিতরে ও বাইরে বেশ কয়েকটি বৈঠকেও তিনি অংশ নেন। কান্দিরপাড় এলাকায় কারও বাসায় বৈঠকগুলো হতো।
১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। পাকিস্তানি শোষণ ও বঞ্চনা থেকে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষার জন্য এ কর্মসূচি দেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর স্বাধীনতাকামী বাঙালি সদস্যদের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ গড়ে ওঠে। লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমানের ভাষ্য, ক্যাপ্টেন শওকত বলতেন, তাঁদের পেছনে শেখ সাহেব আছেন। কুমিল্লায় ১৯৬৬ সালের দিকে লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেমের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, দেশকে স্বাধীন করার পরিকল্পনার পেছনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ মুজিব। বিভিন্ন সেনানিবাসে স্বাধীনতাকামী বিপ্লবী গ্রুপের কার্যক্রম দ্রুত সম্প্রসারণের ওপর তিনি জোর দেন। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে থাকাকালে মাহবুবুর রহমান বেশ কিছু সেনাসদস্য ও জুনিয়র অফিসারকে স্বাধীনতাসংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেন। প্রয়োজনীয় সংকেত পেলে তাঁরা তাঁদের ওপর নির্দেশিত কর্মকাণ্ড শুরু করবেন এমন প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। স্বাধীনতাকামী গ্রুপটির পরিকল্পনা ছিল উপযুক্ত সময়ে একটি নির্দিষ্ট রাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সব কটি ক্যান্টনমেন্টে একসঙ্গে অভ্যুত্থান ঘটানো। কমান্ডো স্টাইলে পশ্চিম পাকিস্তানি ইউনিটগুলোর কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে তাঁদের বন্দি করা। তারপর দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
ইতোমধ্যে ১৯৬৭ সালে মাহবুবুর রহমানকে রিসালপুর মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়। প্রশিক্ষণ শেষে পাঞ্জাবের ঝিলাম সেনানিবাসে তিনি নিয়োগ পান। ওই সময় তাঁর বিয়ে ঠিক হয়। ছুটি নিয়ে দেশে এসেই জানতে পারেন ক্যাপ্টেন শওকতকে আটক করা হয়েছে। যে কোনো সময় গ্রেপ্তার করা হতে পারেন এই আশঙ্কায় ভুগতে থাকেন তিনি। বিবাহিত জীবনে আরেকজনকে বিপদে ঠেলে দেওয়া ঠিক হবে কি না, এ প্রশ্নও মনে দেখা দেয়। হবু স্ত্রীকে এ বিষয়টি অভিহিত করেন। মাহবুবুর রহমানের হবু স্ত্রী তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্সের ছাত্রী। সবকিছু শুনে বিচলিত না হয়ে তাঁকে সাহস জোগান। বলেন, ‘তোমরা তো দেশের জন্য কাজ করছ। এটা তো গর্বের কথা।
ইঞ্জিনিয়ার কোরের একজন তরুণ জুনিয়র অফিসার বিপ্লবী গ্রুপের সঙ্গে জড়িত এ বিষয়টি জানার পর পাকিস্তানি সেনা গোয়েন্দারা ক্যাপ্টেন শওকত ও ক্যাপ্টেন আলমের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়। কিন্তু তাঁরা কোনো তথ্যই দেননি। কর্নেল শওকত আলী তাঁর বই ‘সত্য মামলা আগরতলায়’ লিখেছেন ‘রাওয়ালপিন্ডিতে তিন সপ্তাহের জিজ্ঞাসাবাদের সময় আমার বারবার মনে হয়েছিল যে শেষ পর্যন্ত হয়তো আমাকে সব কথাই স্বীকার করতে হবে। কারণ আমার জানা এমন কোনো তথ্য ছিল না, যা জিজ্ঞাসাবাদকারীরা ইতোমধ্যে জানে না...। যাই হোক আমি কিছুটা গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করছি যে দৈহিকভাবে যতক্ষণ সম্ভব ততক্ষণ পর্যন্ত বাস্তব ঘটনার অস্বীকৃতির সংকল্প আমি অক্ষুণ্ন রেখেছি এবং কর্তৃপক্ষের কাছে এমন একটি ঘটনাও জানাইনি যা তারা জ্ঞাত ছিল না। এ কারণেই...মাহবুবসহ আরও অনেকে যাঁদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল কিন্তু বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততা কর্তৃপক্ষের অজানা ছিল, তাঁদের নাম আমি প্রকাশ করিনি। আমার চেয়ে অধিক নিষ্ঠুর নির্যাতনের স্বীকার হয়েও আরও অনেকে জিজ্ঞাসাবাদকারীদের কাছে সঠিক তথ্য প্রকাশ করেননি।’
লেখক : সিনিয়র সহকারী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন
ইমেইল : [email protected]