ফল বিপর্যয় ঘটল এইচএসসি পরীক্ষায়। গড় পাসের হার ৫৭ দশমিক ১২ শতাংশ। পরীক্ষা দিয়েছিলেন প্রায় সাড়ে ১০ লাখ শিক্ষার্থী। কৃতকার্য হয়েছেন প্রায় ৬ লাখ। সাড়ে ৪ লাখই অকৃতকার্য। গত ২১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফল এটা। এ বছর শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমে গেছে। কিন্তু শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। বড় ধাক্কা লেগেছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোতে। কারণ বিশ্লেষণ করে শিক্ষকদের কেউ কেউ বলেছেন, উল্লেখযোগ্য সময়ে আন্দোলনসহ নানা কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ক্লাস হয়নি। নিরবচ্ছিন্ন পাঠদান বিঘিœত হয়েছে। ফলাফল প্রকাশের পর সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বছর এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল অনেককে বিস্মিত করেছে। পাসের হার ও জিপিএ-৫ আগের বছরগুলোর তুলনায় কম। প্রশ্ন উঠেছে, কেন? এর উত্তর জটিল নয়, বরং সহজ কিন্তু অস্বস্তিকর।’ তাঁর মতে, এ পর্যায়ে আজকের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক স্তর থেকেই শেখার ঘাটতি তৈরি হয়। সেই ঘাটতি বছরের পর বছর সঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু নীতিনির্ধারকরা দীর্ঘদিন এ বাস্তবতার মুখোমুখি হতে চাননি। বরং এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তোলা হয়েছিল, যেখানে সংখ্যাটাই মুখ্য হয়ে উঠেছিল। পাসের হারই সাফল্যের প্রতীক এবং জিপিএ-৫-এর সংখ্যা ছিল সন্তুষ্টির মানদন্ড। ফলাফল ভালো দেখাতে গিয়ে শিক্ষার প্রকৃত সংকট আড়াল করা হয়েছে। বস্তুত এদের অনেকটা গিনিপিগ বানিয়ে শিক্ষা নিয়ে নানা অপরিকল্পিত, অবিবেচনাপ্রসূত পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয়েছে। একপর্যায়ে দেখা গেছে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের যেভাবে যা শেখাতে বলা হচ্ছে- তাদের শিক্ষকরাই সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখেন না। এই দায়িত্বহীন সংস্কৃতির পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানও আক্ষেপ করে বলেন, ‘এই যে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী ফেল করল, এটা কাক্সিক্ষত ছিল না। কাউকে পাস-ফেল কমবেশি করার কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। কিন্তু যা হয়েছে, তাতে কোথাও না কোথাও গলদ আছে। সেই গলদের জায়গাগুলো ঠিক করতে হবে। সে দায়িত্ব শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সবার।’ এসব বিশ্লেষণ এবং উপলব্ধি যতই অর্থপূর্ণ হোক; অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের জীবনের একটা বছর হারানোর ক্ষতি তার চেয়ে অনেক মর্মস্পর্শী, অপূরণীয়। তাদের মানসিক আঘাত আরও গভীর। পরিবারগুলোর আশা-আকাক্সক্ষা-বিনিয়োগ ধূলিসাৎ। অনেকে হয়তো শিক্ষাজীবন থেকেই ঝরে পড়বে। উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীসংকট দেখা দিতে পারে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো হোঁচট খাবে। সব মিলে ফলাফল দুঃখজনক। এর পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রকৃত করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে শিক্ষা প্রশাসনের সুচিন্তিত, কার্যকর পদক্ষেপ কাম্য।