ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও কর্মসংস্থানসংকটের ফাঁদে পড়েছে নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠী। এই দুইয়ের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। কষ্টের দিন যাপন করছে নারী শিশু বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষ। এমন তথ্যই উঠে এসেছে বিশ্বব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার আবার বাড়ছে। মূল্যস্ফীতির চাপ, কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতা আর স্থবির বিনিয়োগ মিলিয়ে নতুন করে বিপাকে বিত্তহীন শ্রমজীবী এবং নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠী। তথ্য বলছে, গত এক বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে ২১ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এ সময়ে শ্রমশক্তির হার কমে প্রায় ৫৯ শতাংশে নেমেছে। গত এক বছরে অন্তত ৩০ লাখ কর্মক্ষম মানুষ শ্রমবাজারের বাইরে ছিটকে পড়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২৪ লাখই নারী। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। যা আগস্টের তুলনায় বেশি। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে এ বৃদ্ধি আরও বেশি বলে মনে করেন বিদগ্ধজনরা। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নগর দরিদ্রদের জীবনে সবচেয়ে বড় এবং দুঃসহ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্মাণ, আবাসনসহ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রের স্থবিরতায় দিনমজুরের কাজ পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। এ শ্রেণির সঞ্চয় থাকে না। ফলে ঋণের দায় বাড়ছে। চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে সেই ঋণ। যা তাদের চরম অনাকাক্সিক্ষত ভয়াবহ মানবিক ও মানসিক বিপর্যয়ে দিকে ঠেলে দিতে পারে। উল্লেখযোগ্য যে গ্রামীণ দরিদ্ররা যেমন সহায়তার দাবিদার, নগরের মানুষও এখন অনেকটাই সেই জায়গায় চলে এসেছে। কারণ প্রতিদিনই মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। তারা শহরে এসে প্রথমেই অনিশ্চয়তার অকুল পাথারে পড়ছে। গবেষণা বলছে, শহরের দরিদ্ররা সরকারি সুরক্ষা কর্মসূচির মাত্র ৫ ভাগের ১ ভাগ সুবিধা পায়। অতিদরিদ্রদের মধ্যে এই বঞ্চনা আরও বেশি। বস্তিতে মানবেতর পরিবেশে থাকা মানুষ বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত। শিশুদের অধিকাংশই স্কুলে যেতে পারে না। অল্প বয়সে শ্রমে নিযুক্ত হতে হয়। পরিবারগুলো দারিদ্র্যের চক্র ভাঙার সুযোগ হারায়। যা জুলাই বিপ্লবোত্তর নতুন বাংলাদেশে জনপ্রত্যাশার বিপরীত। এই কঠিন নেতিবাচক বাস্তবতায় ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি না করতে পারলে, মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে তার মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। দারিদ্র্য বৃদ্ধির সূচক আরও বাড়বে। সমাজে ছোটবড় অপরাধ বৃদ্ধি পাবে। সামাজিক শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিঘিœত হবে। যা সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেগ পেতে হবে। যার কিছু আলামত ইতোমধ্যেই লক্ষ করা যাচ্ছে। অধোগতির এ যাত্রায় অবিলম্বে লাগাম টানা দরকার।