প্রথম অধ্যায়
ব্যবসায়ের মৌলিক ধারণা
উদ্দীপক : নিতাই বাবু একজন ব্যবসায়ী। তিনি ভারত থেকে চাল আমদানি করে প্রক্রিয়াকরণের পর ইংল্যান্ডের বিভিন্ন বিপণিতে বিক্রয় করেন। গত বছর তিনি যে চাল আমদানি করেছেন, তা দুই মাস পর ইংল্যান্ডে বিক্রয় করলে অনেক বেশি লাভ পেতেন। কিন্তু আমদানিকৃত চালের জন্য জায়গার ব্যবস্থা না থাকায় লাভের জন্য অপেক্ষা না করে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বিক্রয় করতে বাধ্য হলেন।
ক. পণ্য বিনিময় কী? ১
খ. সামাজিক ব্যবসায় ভিন্ন ধরনের ব্যবসায় কেন? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. নিতাই বাবু কোন ধরনের বাণিজ্য করেন? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. নিতাই বাবু কেন তাঁর পণ্য নির্দিষ্ট সময়ের আগে বিক্রয় করতে বাধ্য হলেন? মতামত দাও। ৪
উত্তর :
‘ক’ মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পণ্য ও সেবাকর্ম ক্রয়-বিক্রয় কাজকে পণ্য বিনিময় বলে।
উত্তর :
‘খ’ যে ব্যবসায় গড়তে ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ মূলধন দেয় কিন্তু তার পেছনে মুনাফা অর্জন বা লভ্যাংশ প্রাপ্তির কোনো উদ্দেশ্য থাকে না; বরং সমাজের কল্যাণ ও দারিদ্র্য দূরীকণের উদ্দেশ্যই থাকে মুখ্য, তাকে সামাজিক ব্যবসায় বলে।
প্রধানত মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে ব্যবসায় গঠিত হয়। মালিকদের উদ্দেশ্যই থাকে মুনাফার সর্বাধিকরণ। কিন্তু সামাজিক ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য থাকে সমাজের কল্যাণ। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী শুধু বিনিয়োগই ফেরত নেন, মালিকানা দাবি করেন না। ব্যবসায়টি সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে থাকে। তাই দেখা যায়, সামাজিক ব্যবসায় সাধারণ ব্যবসায় থেকে ভিন্নতর।
উত্তর :
‘গ’ নিতাই বাবু বৈদেশিক বাণিজ্য করেন।
এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের বা এক দেশের ব্যবসায়ীর সঙ্গে অন্য দেশের ব্যবসায়ীর যে ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদিত হয় তাকে বৈদেশিক বাণিজ্য বলে। বিদেশ থেকে পণ্য কিনে আনাকে আমদানি এবং বিদেশে পণ্য বিক্রয় করাকে রপ্তানি বলে। কিনে কোনোরূপ প্রক্রিয়াজাত না করে বিক্রয় করলে তাকে পুনঃ রপ্তানি ব্যবসায় বলা হয়ে থাকে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, নিতাই বাবু ভারত থেকে চাল আমদানি করে প্রক্রিয়াকরণের পর ইংল্যান্ডের বিভিন্ন বিপণিতে বিক্রয় করেন। দেশের মধ্যে থেকে বিদেশের দোকানে বিক্রয় রপ্তানির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই তিনি একদিকে আমদানিকারক এবং অন্যদিকে রপ্তানিকারক। ফলে তাঁর বাণিজ্য বৈদেশিক বাণিজ্য।
উত্তর :
‘ঘ’ নিতাই বাবু গুদামজাতকরণ সুবিধার অভাবে নির্দিষ্ট সময়ের আগে চাল বিক্রয়ে বাধ্য হলেন।
উৎপাদন ও ভোগের মধ্যবর্তী সময়ে বিনষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য ব্যবসায়ীরা পণ্য সংরক্ষণের যে ব্যবস্থা গড়ে তোলে তাকে গুদামজাতকরণ বলে।
কৃষক আলু উৎপাদন করে, যা ভোগ হয় সারা বছর। এভাবে উৎপাদনের সময় ও ভোগের সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে পণ্যের গুণাগুণ সুরক্ষায় গুদামজাতকরণ ভূমিকা রাখে।
মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পণ্য ও সেবাকর্ম ক্রয়-বিক্রয় কাজকে পণ্য বিনিময় বলে
নিতাই বাবু গত বছর যে চাল আমদানি করেন তা দুই মাস পর ইংল্যান্ডে বিক্রয় করলে অনেক বেশি লাভ পেতেন; কিন্তু আমদানিকৃত চালের জন্য জায়গার ব্যবস্থা না থাকায় তিনি লাভের জন্য অপেক্ষা করতে না পেরে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই তা বিক্রয় করতে বাধ্য হন। অর্থাৎ গুদামজাতকরণ সুবিধার অভাবেই তিনি চাল বিক্রয়ে বাধ্য হয়েছেন।
ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় গুদামজাতকরণ সুবিধা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ উৎপাদন বা ক্রয় এবং বিক্রয় বা ভোগ এ দুই সময়ের মধ্যে পার্থক্য হতেই পারে। স্বাভাবিক কারণের বাইরেও ক্রয়-বিক্রয়ের মাঝখানের সময়ে আরও সময় গুদামজাতকরণ আবশ্যক হওয়া অসম্ভব নয়। তাই এর ব্যবস্থা না করতে পারলে ব্যবসায়ীকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। উদ্দীপকে সেটাই ঘটেছে।
দ্বিতীয় অধ্যায়
ব্যবসায় পরিবেশ
১. মানবসম্পদ কোন ধরনের পরিবেশের উপাদান?
উত্তর : অর্থনৈতিক পরিবেশের উপাদান।
২. দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোন ধরনের পরিবেশের মধ্যে পড়ে?
উত্তর : রাজনৈতিক পরিবেশ।
৩. জাতীয়তা কোন পরিবেশের উপাদান?
উত্তর : সামাজিক পরিবেশ।
৪. কোন ধরনের পরিবেশের ওপর মানুষের নিয়ন্ত্রণক্ষমতা সীমিত?
উত্তর : প্রাকৃতিক পরিবেশ।
৫. ব্যবসায় পরিবেশ কী?
উত্তর : যে প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে একটা অঞ্চলের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে ওঠে, তাকে ব্যবসায় পরিবেশ বলে।
৬. অর্থনৈতিক পরিবেশ কী?
উত্তর : জনগণের আয় ও সঞ্চয়, অর্থ ও ঋণব্যবস্থা, বিনিয়োগ, মূলধন ও জনসম্পদ ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে কোনো দেশে যে পরিবেশের সৃষ্টি হয়, তাকে অর্থনৈতিক পরিবেশ বলে।
৭. সামাজিক পরিবেশ কী?
উত্তর : কোনো সমাজের বা জাতির মানুষের সংখ্যা, তাদের ধর্ম, বিশ্বাস, চিন্তাধারা, শিক্ষা-সংস্কৃতি, রীতি-নীতি ও দেশীয় ঐতিহ্য মিলিয়ে যে পারিপার্শ্বিকতা গড়ে ওঠে, তাকেই সামাজিক পরিবেশ বলে।
৮. রাজনৈতিক পরিবেশ কী?
উত্তর : দেশের সার্বভৌমত্ব, সরকারের স্থিতিশীলতা, দৃষ্টিভঙ্গি, রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ও তাদের চিন্তাভাবনা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ইত্যাদি মিলিয়ে যে পারিপার্শ্বিকতার জন্ম নেয়, তাকে রাজনৈতিক পরিবেশ বলে।