বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ

বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় অনেক বড়

মোস্তফা মতিহার

বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় অনেক বড়

রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সুদেষ্ণা সান্যাল রুদ্র। কবিগুরুর প্রেম, প্রকৃতি ও পূজা-পার্বণের গানসহ প্রায় সব ধরনের পরিবেশনায়ই মুনশিয়ানার ছাপ রেখেছেন এই গুণী শিল্পী। বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার আমন্ত্রণে সম্প্রতি ‘ঊনত্রিংশতম রবীন্দ্রসংগীত উত্সব’-এ সংগীত পরিবেশন করেছেন তিনি। ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেন সুদেষ্ণা সান্যাল রুদ্র।

 

বাংলাদেশে এলেন, গাইলেন আর জয় করলেন এদেশের মানুষের হৃদয়। অভিজ্ঞতার কথাটা বলুন।

বাংলাদেশকে আমি আমার নিজের দেশই মনে করি। এদেশে এলে মনে হয় না অন্য কোনো দেশে এসেছি। কবিগুরুর ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার ’পরে ঠেকাই মাথা’ গানটির কথা মনে পড়ে। বিশ্বমাতা আমার জন্য মনে হয় যেন এদেশে আঁচল পেতে রেখেছে। দেশটাকে আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়। এদেশে গান গাওয়াটাও আমার কাছে স্বপ্নের মতো। বাংলাদেশের মানুষের যে ভালোবাসা আর আতিথেয়তা তা খুবই উপভোগ করি। এদেশে আসতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। এখানকার মানুষের হৃদয় বড়। এদেশের মানুষ অনেক উদার। আমরা এখনো সেরকমটা হতে পারিনি। ভালোবাসার সবকিছুই যেন এদেশে ছড়িয়ে রয়েছে।

 

প্রেম, প্রকৃতি ও পূজা-পার্বণসহ রবীন্দ্রনাথ বিভিন্ন ধরনের গান লিখেছেন। এর মধ্যে কোন ধরনের গানগুলো গাইতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?

রবীন্দ্রনাথের সব গানই আমার কাছে একরকম লাগে। আলাদা কিছু নেই। বিশেষ করে কবিগুরুর নৃত্যনাট্য ও গীতিনাট্যের গানগুলো আমাকে খুবই আকর্ষিত করে। নৃত্য, সুর আর অভিনয়ের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ নৃত্যনাট্য ও গীতিনৃত্যনাট্যে এই ধরনীতে যে অসাধারণ শৈল্পিকতা ছড়িয়ে দিয়েছেন তা খুবই অনুভবের বিষয়। ভাষায় প্রকাশ করার মতো কোনো বিষয় নয়।

 

এপার বাংলা-ওপার বাংলা দুই বাংলার শিল্পীরাই রবীন্দ্রনাথের গানের চর্চা করে থাকেন। পরিবেশনাগত কোনো ধরনের পার্থক্য আছে কী?

দুই বাংলার রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীদের মাঝে আমি তেমন কোনো পার্থক্য লক্ষ্য করি না। বাংলাদেশের অনেক শিল্পীর গান শুনেই আমি বড় হয়েছি। এদেশের শিল্পীরা নিঃসন্দেহে অনেক ভালো গায়। এপার বাংলা আর ওপার বাংলা যেটাই বলুন সবাই রবীন্দ্রনাথের গানটাই গাইছে। এ জায়গায় তো মিল একই থাকবে। স্বরলিপি, তাল, লয় আর সুরে দুই বাংলায় রবীন্দ্রনাথ একই রকম। কেউ রবীন্দ্রনাথে নিবেদিত হয় আর কেউ সমর্পিত হয়। এদেশের শিল্পীদের সঙ্গে একই মঞ্চে যখন ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ জাতীয় সংগীত গাইলাম তখন কি যে ভালো লেগেছিল তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।

 

রবীন্দ্রনাথের গান পরিবেশনার ক্ষেত্রে কখনো কখনো সুর বিকৃত করার প্রবণতা দেখা যায়। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

রবীন্দ্রনাথ যেটা করে গেছেন সেটা ভাঙচুরের কোনো সুযোগ নেই। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকে আধুনিকতার নামে বিকৃত করার চেষ্টা করাটাও ধৃষ্টতা। রবীন্দ্রনাথ যেটা করে গেছেন সেটাই আধুনিক।

রবিঠাকুরও বলেছিলেন, ‘যা পেয়েছি প্রথম দিন, সে-ই যেন পেয়েছি শেষে, দু’হাত দিয়ে বিশ্বেরে ছুঁই, শিশুর মতো হেসে’। অর্থাৎ তিনি যা করে গেছেন সেটাই আধুনিক। তাঁর সৃষ্টিকে তাঁর মতো রাখা হলেই রবীন্দ্রনাথের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হবে।

 

বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতাই কবিগুরু। তো এই বিষয়টা কীভাবে দেখেন?

জাতীয় সংগীত আমাদের মায়ের মতো। এপার বাংলা-ওপার বাংলা দুই বাংলার জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ভালোবাসার সেতুবন্ধ রচনা করেছেন। ভারত আর বাংলাদেশ রবীন্দ্রনাথের ডান হাত আর বাম হাতের মতো।

 

রবীন্দ্রনাথের শুদ্ধ ও সঠিক চর্চায় কি কি করণীয় রয়েছে বলে মনে করেন?

রবীন্দ্রনাথকে পড়তে হবে, জানতে হবে এবং রবীন্দ্রনাথে নিবেদিত হয়ে তাকে শ্রদ্ধা করতে হবে। তাহলেই রবীন্দ্রনাথের সঠিক ও শুদ্ধ চর্চাটা করা যাবে। বেশি বেশি করে রবীন্দ্রনাথের গান শুনতে হবে।

 

বাংলাদেশ ও ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’-এর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ

আপনাকেও ধন্যবাদ। এদেশের রবীন্দ্রানুরাগী, শ্রোতা ও শিল্পী সর্বোপরি এদেশের সব মানুষের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ। সবাই রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গেই থাকুন।

সর্বশেষ খবর