রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

সিনেমা হল বন্ধ হলে কোনো ক্ষতি হবে না

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা ও নির্মাতা ফেরদৌস। বর্তমান ব্যস্ততা এবং সম্প্রতি প্রদর্শকদের দেওয়া সিনেমা হল বন্ধের আলটিমেটাম প্রসঙ্গে তার বলা কথা তুলে ধরা হয়েছে-

শোবিজ প্রতিবেদক

সিনেমা হল বন্ধ হলে কোনো ক্ষতি হবে না

প্রথমেই আপনার ব্যস্ততা সম্পর্কে জানতে চাই-

এই মুহূর্তে দুই বাংলায় অনেক ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। এখানে অবশ্য কাজের পরিমাণ বেশি। যেমন ‘বিউটি সার্কাস’, ‘গাঙচিল’, ‘জ্যাম’, ‘যদি আরেকটু সময় পেতাম’, ‘চট্টলা এক্সপ্রেস’ প্রভৃতি। এর মধ্যে যদি আরেকটু সময় পেতাম ছবিটি লন্ডন প্রবাসী বাঙালি পুরুক আহমেদ আর চট্টলা এক্সপ্রেস চট্টগ্রামের রায়হান নির্মাণ করবেন। এসব ছবির কাজে এপ্রিলের মধ্যেই লন্ডন ও চট্টগ্রাম যেতে হবে। ওপার বাংলায় শরৎচন্দ্রের ‘দত্তা’ ছবিতে অভিনয় করব। এ ছবির কাজেও শিগগিরই সেখানে যাব। তাছাড়া গাঙচিল ছবিটি প্রযোজনা করছি। পাশাপাশি দেশ বিদেশে বিভিন্ন স্টেজ প্রোগ্রাম, টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা নিয়েও বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি।

 

সিনেমা হল মালিকরা সম্প্রতি সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়ার আলটিমেটাম দিয়েছেন- এতে চলচ্চিত্রের অবস্থা কী দাঁড়াবে?

কোনো ক্ষতিই হবে না। সিনেমা হলে দর্শক ছবি দেখতে যায় না, কারণ এগুলো আধুনিক নয়, পরিবেশও নেই। সিনেমা হল মালিকরা শুধু নির্মাতা আর শিল্পীদের নানাভাবে দোষারোপ করে কিন্তু নিজেরা দায়িত্ব পালনে সচেতন নয়। ব্যবসা করতে চায় অথচ প্রজেক্টর স্থাপন ও পরিবেশের উন্নয়ন করে না। প্রযোজকদের প্রাপ্য নিয়ে ছয়-নয় করে। ফলে এসব সিনেমা হল বন্ধ হলে দর্শক বা নির্মাতার কিছু যায় আসে না।

 

তাহলে ছবি প্রদর্শন কোথায় হবে?

কেন, সিনেপ্লেক্সে। পরিবেশ উন্নত বলে দর্শক সিনেপ্লেক্সে ছবি দেখতে যায় এবং প্রযোজকরাও এখান থেকে যথাযথভাবে অর্থ পায়। সরকারিভাবে ৬৪ জেলায় সিনেপ্লেক্স নির্মাণ এবং প্রজেক্টর স্থাপনসহ আধুনিকায়ন হয়ে গেলে আর কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। তা ছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো আমাদের পাশে আছেন। তিনি সবার সুখ-দুঃখ দেখছেন এবং দেখবেন।

 

প্রদর্শকরাতো উপমহাদেশীয় ছবি আমদানির ওপর বেশি জোর দিচ্ছে?

এদেশের মানুষ নিজেদের কৃষ্টি কালচারকে ভালোবাসে। তাদের ভিনদেশি ছবি দিয়ে সিনেমা হলে ফেরানো যাবে না। বরং এখানে এখনো অনেক করপোরেট হাউস, বিদেশি অর্থলগ্নিকারক আর চলচ্চিত্র শিল্পীরা ছবি নির্মাণ করতে আগ্রহী। তাদের যদি সিনেমা হল মালিকরা অর্থ ফেরত পাওয়ার মিনিমাম গ্যারান্টি দেয়, তাহলে স্থানীয় ছবির অভাব বলে আর কিছুই থাকবে না। বিদেশি ছবির প্রয়োজন নেই।

 

নির্মাতার লোকসানের জন্য শুধু প্রদর্শকরাই দায়ী?

না, প্রদর্শক এবং প্রযোজকের মধ্যে থাকা মধ্যস্বত্বভোগীরা সবচেয়ে বেশি দায়ী। তারা প্রযোজকদের রীতিমতো জিম্মি করে রেখেছে। চলচ্চিত্রশিল্প ধ্বংসের জন্য তারাই বেশি দায়ী। এসব মধ্যস্বত্বভোগরিা ছবি রিলিজ দিতে গেলে অযৌক্তিকভাবে প্রযোজকের কাছ থেকে লাখে দশ হাজার টাকা করে দাবি করে বসে। না দিলে ছবি প্রদর্শন করতে দেয় না। এই মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে অনেক প্রযোজক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ছবি নির্মাণ করতে পারছেন না। আর সিনেমা হল মালিকরা যে প্রতিনিধি সিনেমা হলে প্রেরণ করে তাদেরও হল মালিকরা প্রভাবিত করে প্রযোজককে প্রকৃত টিকিট বিক্রির চিত্র থেকে বঞ্চিত করে।

 

এত প্রতিকূলতা নিয়ে দেশীয় চলচ্চিত্র কীভাবে এগুবে?

প্রতিকূলতা কাটানো কোনো ব্যাপার নয়, এর জন্য সময়, রেভুলেশন এবং সঠিক সুযোগ দরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চলচ্চিত্র শিল্পের মানুষদের প্রতি খুবই আন্তরিক। তার উদার হস্তক্ষেপ আর একজন প্রযোজক সিনেপ্লেক্স, টিভি, ইউটিউব আর স্পন্সর থেকে অর্থ প্রাপ্তি এবং ই-টিকিটিং-এর ব্যবস্থা চালু হলে আমাদের গর্বের চলচ্চিত্রশিল্প ছিল, আছে এবং থাকবে। কারও হুমকি দিয়ে লাভ নেই। এ শিল্প নিয়ে সংশয়ের কোনো কারণ নেই।

সর্বশেষ খবর