শুক্রবার, ১৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

পূর্বাণী হোটেল থেকে মুম্বাই কাঁপানো সেই অক্ষয়

পূর্বাণী হোটেল থেকে মুম্বাই কাঁপানো সেই অক্ষয়

বলিউড খিলাড়ি অক্ষয় কুমার। কোনো ধরনের থিয়েটার অভিনয় কিংবা ফিল্মি ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়াই রুপালি জগতে তার পদার্পণ। জিরো থেকে হিরো বনে যাওয়া অক্ষয় আজ বলিউড ইন্ডাস্ট্রির দেবদূততুল্য। এ সংগ্রামী সুপার স্টারের জীবনের বিভিন্ন বাঁক ও কর্ম নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

ঢাকার পূর্বাণীর সেই হোটেলবয়

অক্ষয় পরিবারসহ মুম্বাইয়ের কোলিবারায় আসেন ছোটবেলায়। পড়াশোনা করেন ‘ডন বস্কো’ স্কুলে। তারপর মুম্বাইয়ের গুরু নানক খালসা কলেজে এডমিশন নেন। তবে, শিক্ষাগত দিক দিয়ে তিনিও একজন ড্রপ আউট। এক বছর যেতে না যেতেই তার মার্শাল আর্ট শেখার আগ্রহ হয়। বলা যায় ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন মার্শাল আর্ট শেখার। তায়কোয়ান্দোতে ব্লাক বেল্ট পাওয়ার পর তিনি আরও মার্শাল আর্ট শেখার জন্য ব্যাংককে পাড়ি জমান। অক্ষয় বলেন, ‘মাধ্যমিক পেরোনোর পর বাবাকে বললাম, মার্শাল আর্ট নিয়ে আমি আরও দূর যেতে চাই। বাবাও আমার ইচ্ছা পূরণ করার জন্য খুব কষ্ট করলেন। একটু একটু করে টাকা জমিয়ে আমাকে ব্যাংককে পাঠালেন। সেখানে পাঁচ বছর কারাতে শিখেছি। মার্শাল আর্ট শিখেছি, থাই বক্সিং শিখেছি। আর শিখেছি রান্না। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, ব্যাংককে টিকে থাকতে হলে আমাকে হয় রান্না শিখতে হবে, নয়তো ‘না খেয়ে থাকা’ শিখতে হবে। আমি রান্নাটাই বেছে নিয়েছিলাম। এরপর কলকাতা গিয়েছি, সেখানে কিছুদিন কাজ করেছি। ঢাকা গিয়েছি। ঢাকার পূর্বাণী হোটেলে শেফের কাজ কিছুদিন করেছি। কলকাতায় কাজ করতাম একটা ট্রাভেল এজেন্সিতে। ব্যবসাও করেছি। দিল্লি থেকে গয়না কিনে বম্বেতে বিক্রি করতাম।’

 

কে এই রাজিব হরি ওম ভাটিয়া

১৯৬৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পাঞ্জাবের অমৃতসরে জন্ম নেন অক্ষয়। পারিবারিক ডাকনাম রাজু। তবে তার প্রকৃত নাম রাজিব হরি ওম ভাটিয়া। অমৃতসরে জন্ম নিলেও তার বেড়ে ওঠা ও শৈশব পার হয় পুরনো দিল্লিতে। অক্ষয় দুই ভাই বোনের মধ্যে বড়। তার বোনের নাম আল্কা ভাটিয়া। অভিনেত্রী টুইঙ্কল খান্না অক্ষয়ের সহধর্মিণী। তিনি অভিনেতা রাজেশ খান্না ও ডিম্পল কাপাডিয়ার জামাতা। সংসারে রয়েছে পুত্র আরাভ ও কন্যা নিতারা। এ খিলাড়ী নায়ক নাচিয়ে হিসেবে বেশি পরিচিত ছিলেন। অক্ষয়ও ছোটবেলা চাইতো বড় হয়ে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে। সেটা আর হয়নি। মুম্বাইয়ে স্থানান্তর হওয়ার আগে তিনি দিল্লির চাঁদনিচকে থাকতেন।

 

তিনি স্রেফ অক্ষয় কুমার

‘আমি অমিতাভ নই, দিলীপ কুমার নই, নই কোনো স্টারের সন্তান। আমি স্রেফ অক্ষয় কুমার।’- নিজের সম্পর্কে বলা এমন আত্মœবিশ্লেষণধর্মী বাক্যটি দিয়েই তার পরিচয় পাওয়া যায়। অক্ষয়ের জীবনটাই যেন একটা সিনেমার চিত্রনাট্য। জীবনে অনেক কিছু করার পর অক্ষয় শেষমেশ থিতু হয়েছেন অভিনয়ে। আর তাই তো ইন্ডাস্ট্রিতে এত বছর পেরোলেও খান এবং কাপুরদের দাপটের বিপরীতে অক্ষয় যেন একাই একশ! এখনো বছরে চার-পাঁচটা ছবি করেন তিনি। ইন্ডাস্ট্রিতে তার নেই কোনো গডফাদার। নেই ‘খান’ বা ‘কাপুর’ পদবিও। শুধু প্রতিভা, পরিশ্রমের জোরেই আজ বলিউডে খানেদের সঙ্গে সমোচ্চারিত হয় অক্ষয়ের নাম। অক্ষয়ের নামে লগ্নি করলে যে ছবি ১০০ কোটির শিবিরে ঠাঁই পাবেই জানেন তাবৎ প্রযোজক। প্রচন্ড রুটিনমাফিকভাবে সাজানো একটা জীবন অক্ষয়ের। ভোর ৪টায় ঘুম থেকে ওঠেন তিনি। তখন থেকেই শুরু হয় ব্যায়াম। ৫৩ ছুঁই ছুঁই এ অভিনেতার ফিট বডির পেছনের রহস্যটা হলো এ শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন। এখনো অক্ষয় কুমারকে বলা হয় ভারতের সবচেয়ে ‘ফিট’ নায়ক। বলিউডে ‘খান’দের রাজত্বে তিনি উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। তার উঠে আসার গল্প তরুণদের জন্য হতে পারে দারুণ অনুপ্রেরণাদায়ক। খুব শান্তশিষ্ট স্বভাবের হলেও শুটিং চলাকালে সেটের সবাইকে মাতিয়ে রাখেন এ মানুষটি। 

 

যেভাবে বলিউড খিলাড়ি হলেন

যখন তিনি মুম্বাইয়ে ফিরে আসেন, তখন তিনি মার্শাল আর্ট শেখানো শুরু করেন। তার এক ছাত্র, ফটোগ্রাফার, অক্ষয়কে মডেলিং করার জন্য পরামর্শ দেয়, যা তার চলচ্চিত্রে অভিষেকের প্রথম সোপানটি তৈরি করে দেয়। তখনো তাকে নায়ক বানানোর কথা কেউ ভাবেনি।

মহেশ ভাটের ‘আজ’ সিনেমায় মার্শাল আর্ট ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে ছোট্ট একটা চরিত্র দিয়ে বলিউডে অভিষেক হয় তার। নিজের সিনেমায় স্ট্যান্টম্যান ব্যবহার করতে পছন্দ করেন না অক্ষয়, বেশিরভাগ স্ট্যান্ট তার নিজেরই করা।

এরপর ১৯৯১ সালে প্রথম তিনি বড় পর্দায় আসেন ‘সৌগন্ধ’ ফিল্মের মাধ্যমে। এরপর আব্বাস মাস্তান পরিচালিত ‘খিলাড়ি’ মুভি করে তিনি বলিউডে শক্ত স্থান দখল করে আছেন। ‘খিলাড়ি’ ওই বছরের অন্যতম বিগ হিট ফিল্ম ছিল। পরপর ‘খিলাড়ি’ নামের মোট আটটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। সেই থেকে বলিউডে তার আরেক নাম খিলাড়ি বলে সবাই চেনেন। প্রতিবছর গড়ে তিন-চারটি সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি।

 

বলিউডের ব্যাডবয়

পর্দায় যদি অক্ষয়ের পরিচয় হয় খিলাড়ি, তবে ব্যক্তিগত জীবনে তিনিই ছিলেন বলিউডের সবথেকে জনপ্রিয় ক্যাসানোভা। আয়েষা জুলকা, রাবিনা ট্যান্ডন, পূজা বাত্রা, শিল্পা শেঠির সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সম্পর্কে জড়িয়েছেন তিনি। বারবার বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে অক্ষয় যখন বলিউডের ব্যাডবয়, সে সময়ই তার জীবনে আসেন টুইঙ্কেল খান্না। বিয়ের পর প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক হলেও ধোপে টেকেনি সেসব গুজব। টুইঙ্কেলের সঙ্গে তার বিয়েটাও অদ্ভুত এক ঘটনা। ফিল্মফেয়ার ম্যাগাজিনের কভারের জন্য ফটোশুট করতে গিয়ে টুইঙ্কেলের সঙ্গে পরিচয় হয় অক্ষয়ের। দেখেই প্রেমে পড়ে যান তিনি। ২০০০ সালে টুইঙ্কেলের ‘মেলা’ সিনেমা মুক্তি পাওয়ার কথা। সেই সিনেমা নিয়ে টুইঙ্কেল ছিলেন দারুণ আশাবাদী। কিন্তু অক্ষয় বলে দিলেন, ‘মেলা’ ফ্লপ হবে।’ দুজনে বাজি ধরলেন। হেরে গেলেন টুইঙ্কেল। পরে পারিবারিক সম্মতিতেই বিয়ে হয়!

 

তাকে সমকামী ভাবতেন শাশুড়ি

ডিম্পল ও অক্ষয়ের মজাদার সম্পর্ক নিয়ে একটি উদাহরণ তুলে ধরেন অক্ষয়ের সহধর্মিণী টুইঙ্কেল নিজে। কফি উইথ করণে এসে টুইঙ্কেল জানান যে, অক্ষয় সমকামী! ঘটনাটা ব্যাখ্যাও করেন ডিম্পল কন্যা। ‘বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে তাদের বাড়িতে যখন হাজির হন অক্ষয়, তখন অক্ষয়কে নিয়ে কিছু কথা বলতে চান তার শাশুড়ি ডিম্পল। তবে মেয়ের হবু বরের সামনে বলতে নারাজ ছিলেন তিনি। টুইঙ্কেল জোরাজুরি করায় ডিম্পল বলে বসেন যে, অক্ষয় সমকামী। মেয়ের সঙ্গে বিয়ের আগে অক্ষয়কে নিয়ে এমনই মনোভাব ছিল ডিম্পলের!

 

সবচেয়ে বেশি ত্রাণ তহবিলে অর্থদাতা

শুধু করোনা নয়, দেশের বিপর্যয়ে এর আগেও বহু কোটি দান করেছেন বলিউড দেবদূত অক্ষয় কুমার। ১১৩ অভিনেতা-অভিনেত্রীর মধ্যে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ত্রাণ তহবিলে অর্থ দান করেছেন সুপারস্টার অক্ষয় কুমার। করোনাযুদ্ধে ২৫ কোটি টাকা তিনি পিএম কেয়ার ফান্ডে দান করেছেন। অতি মহামারীর মোকাবিলায় উদারহস্ত অক্ষয় কুমার। কখনো প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে, কখনো বিএমসির ফান্ডে টাকা ডোনেট করছেন। ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির জন্য তিনি এক কোটি ৫০ লাখ টাকা দান করেছিলেন।

 

যে সিনেমাগুলো ফিরিয়ে দেন

পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত অক্ষয় অ্যাকশন হিরো থেকে আজ কমেডি নায়ক। জানেন কি, এ বৈচিত্র্যময় অভিনেতা সবাইকে অবাক করে দিয়ে ৪টি ব্লকবাস্টার সিনেমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন! সেগুলো হলো ‘ভাগ মিলখা ভাগ’, ‘রেস’, ‘বাজিগর’ ও ‘রেডি।

 

ফোর্বসের তালিকায় ভারতীয় একজনই

এ বছর সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া সেলিব্রিটিদের তালিকা প্রকাশ করে ফোর্বস। সে তালিকায় রয়েছেন বিশ্বের ১০০ জন জনপ্রিয় সেলিব্রেটি। সে তালিকায় ভারত থেকে ঠাঁই পেয়েছেন কেবল বলিউড অভিনেতা অক্ষয় কুমার। ১০০ জনের সেই তালিকায় তার স্থান ৫২। অক্ষয় কুমারকে ‘বলিউডের সর্বোচ্চ রোজগেরে স্টার’-এর তকমা দিয়েছিল ফোর্বস।

সর্বশেষ খবর