মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

শিশু শিল্পী থেকে অভিনয়শিল্পী

শিশু শিল্পী হিসেবেই বড় কিংবা ছোট পর্দায় অভিষেক ঘটে, জনপ্রিয়তার পথ ধরেই এক সময় হয়ে যান নায়ক-নায়িকা। নায়ক-নায়িকা হয়েও দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে যান বা এখনো যাচ্ছেন এমন কয়েকজন তারকার কথা তুলে ধরেছেন-আলাউদ্দীন মাজিদ

শিশু শিল্পী থেকে অভিনয়শিল্পী

দিঘী

প্রার্থনা ফারদিন দিঘী। ২০০৬ সালে কাজী হায়াত পরিচালিত কাবুলিওয়ালা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে শিশু শিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিষেক তার। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আগে গ্রামীণফোনের একটি বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে সবার নজরে আসেন দিঘী। কাজী হায়াৎ পরিচালিত কাবুলিওয়ালা দিঘী অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র। প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেই ২০০৬ সালে শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন দিঘী। তারপর আরও দুটি চলচ্চিত্রে দক্ষ অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ শিশু চলচ্চিত্র শিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেন। প্রায় ১৪টি ছবিতে শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয়ের পর প্রায় আট বছর বিরতি দিয়ে চলতি বছর আবার অভিনয়ে ফিরেছেন নায়িকা হয়ে। সম্প্রতি তিনি শেষ করেছেন ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’ ছবির কাজ। আগামী মাস থেকে শুরু করবেন দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘তুমি আছো তুমি নেই’ ছবির কাজ। এ ছাড়া তার হাতে আরও অনেক ছবির প্রস্তাব রয়েছে।

শাবানা

আফরোজা সুলতানা রত্না। ১৯৬২ সালে শিশু শিল্পী হিসেবে ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে অভিষেক। পরে ১৯৬৭ সালে ‘চকোরী’ চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে অভিনয় শুরু করেন। চিত্র পরিচালক এহতেশাম  তার নাম শাবানা দেন। ষাট থেকে নব্বই দশকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন এই অভিনেত্রী। ২৯৯টি ছবিতে অভিনয় করেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে অভিনয়ের জন্য নয়বার ও প্রযোজক হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০১৭ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন।

তিশা

নুসরাত ইমরোজ তিশা। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী এ অভিনেত্রীর শুরুটা বিটিভির ‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতা দিয়ে। ১৯৯৫ সালে তিনি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। চার বন্ধু মিলে গঠন করেছিলেন গানের দল ‘অ্যাঞ্জেল ফোর’। শিশু শিল্পী হিসেবে ‘সাত প্রহরের কাব্য’ নাটকে অভিনয় করেন ১৯৯৮ সালে। তখন বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর। তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ২০০৩ সালে প্রচারিত আরসি কোলার বিজ্ঞাপন। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ক্যারাম ১ম পত্র, ৬৯ নাটকগুলো দিয়ে আলোচনায় আসেন। অসংখ্য জনপ্রিয় নাটকে অভিনয় করে এক সময় নিজেকে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির এক নম্বর নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি প্রথম সিনেমায় অভিনয় করেন ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’-এ। ‘হালদা’, ‘টেলিভিশন’, ‘অস্তিত্ব’, ‘ডুব’, ‘মেন্টাল’ সিনেমাগুলোতে তার অভিনয় প্রশংসিত হয়। ২০১৬ সালে ‘অস্তিত্ব’ সিনেমার জন্য ‘সেরা অভিনেত্রী’ হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেন।

পূজা

পূজা চেরী। ছোটবেলায় জাকির হোসেন রাজুর ‘মনের ঘরে বসত করে’তে শাকিব খানের ছোট বোনের চরিত্রে অভিনয়। শিশুশিল্পী হিসেবে আরও অভিনয় ভালোবাসার রঙ, তবুও ভালোবাসি, অগ্নি, ভালোবাসতে মন লাগে, কৃষ্ণপক্ষ, বাদশা-দ্য ডন-এ। এ ছাড়া তার আলোচিত বিজ্ঞাপন ‘হুইল পাওয়ার হোয়াইট’। নায়িকা হিসেবে অভিষেক হয় ‘নূর জাহান’ দিয়ে। এ ছাড়া পূজা অভিনীত ‘পোড়ামন-২’, ‘দহন’ ও ‘প্রেম আমার টু’ ছবিগুলো মুক্তি পেয়েছে।

সুচরিতা

সুচরিতা শিশু শিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে প্রথম কাজ করেন। তার নাম ছিল বেবী হেলেন। ১৯৭০ সালে শিশু শিল্পী হিসেবে মুস্তাফিজের ‘বাবলু’ তার প্রথম ছবি। নায়িকা হিসেবে প্রথম অভিনয় করেন ১৯৭২ সালে আজিজুর রহমানের ‘স্বীকৃতি’ ছবিতে। এক সময় প্রথম শ্রেণির নায়িকা হিসেবে স্থান গড়ে নেন। তার চমৎকার শারীরিক অবয়ব এবং ফটোজেনিক চেহারা তাকে শক্ত ভীত গড়ে দেয়। দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি।

বেশ কিছু বিকল্প ধারার চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন সুচরিতা।

 

সালমান শাহ

শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। ১৯৮৬ সালে আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত ‘পাথর সময়’ টিভি নাটকে শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। এরপর আরও প্রায় আটটি নাটকে নায়ক চরিত্রে ও কিছু বিজ্ঞাপন চিত্রে অভিনয়ের পর ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ চলচ্চিত্রে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন। জনপ্রিয় এই নায়ক সর্বমোট ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং সবকটিই ছিল ব্যবসাসফল।

 

তারিন

তারিন জাহান। ১৯৮৫ সালে জাতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিভা অন্বেষণ ‘নতুন কুঁড়ি’তে অভিনয়, নাচ এবং গল্প বলাতে প্রথম হন। তখন থেকেই তিনি শিশু শিল্পী হিসেবে ছোট পর্দায় কাজ শুরু করেন। ১৯৮৮ সালে শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ধারাবাহিক নাটক সংশপ্তকে শিশু চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি প্রথম নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন তৌকীর আহমেদের সঙ্গে ‘কাঁঠাল বুড়ি’ নাটকে। যেটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট চ্যানেল এটিএন বাংলায় প্রচারিত প্রথম নাটক। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন এবং করছেন।

 

ঈশিতা

রুমানা রশীদ ঈশিতা। অভিনেত্রী, পরিচালক এবং লেখক। তিনি ১৯৮৮ সালে জাতীয় মেধাবী প্রতিযোগিতা ‘নতুন কুঁড়ি’তে শিশু শিল্পী হিসেবে পুরস্কার অর্জন করে খ্যাতি পান। ইমদাদুল হক মিলনের রচনায় ও ফখরুল আবেদীনের পরিচালনায় ‘দুজনে’ ছিল তার প্রথম অভিনীত নাটক।

এরপর থেকে বর্তমান পর্যন্ত অসংখ্য নাটকে জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিসেবে অভিনয় করেছেন এবং করছেন।

 

শাওন

মেহের আফরোজ শাওন। বিটিভির ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠানটি দিয়ে তার পথচলা শুরু। ছোটবেলা থেকে নাচ, গান দুটোতেই পারদর্শী। ১৯৮৯ সালে শিশু শিল্পী হিসেবে তুরস্কে গিয়ে রেডিওতে গান করেন তিনি। নব্বই দশকে ক্যারিয়ার শুরু করা অন্য তারকার মতো তিনিও নতুন কুঁড়ি বিজয়ী। তার প্রথম টিভি নাটক ‘জননী’।

এরপর একে একে অভিনয় করেন অসংখ্য দর্শকনন্দিত নাটকে। শাওন প্রথম সিনেমায় অভিনয় করেন ‘শ্রাবণ মেঘের দিনে’। তার অভিনীত ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’ ও ‘আমার আছে জল’ ছবিগুলো বেশ দর্শক নন্দিত।

তাসকিন

তাসকিন রহমান। ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর ভিলেন হিসেবে পরিচিতি পেলেও তার শুরুটা বিটিভি দিয়ে। ১৯৯০ সালে ‘শীতের পাখি’ নাটকে অভিনয় করেন। অনেক প্যাকেজ নাটকেও তাকে শিশু শিল্পী হিসেবে দেখা গেছে। ‘নতুন কুঁড়ি’র পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী তিনি। শিশু শিল্পী হিসেবে দীলিপ সোমের ‘হৃদয় আমার’ ছবিতে অভিনয় করেন। ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এ অভিনয়ের আগে অভিনয় তানিম রহমান অংশুর ‘আদি’তে। নায়ক হিসেবে দেখা গেছে ‘বয়ফ্রেন্ড’ সিনেমায়। আরও মুক্তি পেয়েছে ‘যদি একদিন’ ও ‘সুলতান’।

সামনে মুক্তির কাতারে আছে ‘শান’, ‘মিশন এক্সট্রিম’ ও ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবিগুলো।

সর্বশেষ খবর