শিরোনাম
রবিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনাকালে যেমন আছেন তিন কন্যা

আলাউদ্দীন মাজিদ

করোনাকালে যেমন আছেন তিন কন্যা

‘জীবন নিয়ে বেশি উচ্ছ্বাসের কোনো মানে নেই। জীবনটা তো ক্ষণিকের। এখানে আমরা সবাই দুই দিনের যাত্রী। গন্তব্য আমাদের চূড়ান্ত। সেটিই আসল ঠিকানা’-অশ্রুসিক্ত নয়নে বললেন চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচন্দা। সম্প্রতি অভিনয় শিল্পী কবরী ও ওয়াসিমের চিরপ্রস্থানের পর অসুস্থ এই অভিনেত্রী মহামারী করোনাকালে খুব মন খারাপের মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন। শুধু তিনি নন, তাঁর দুই বোন অভিনেত্রী ববিতা ও চম্পাও একই ব্যথায় ব্যথিত। ববিতা বলেন, ‘জীবন এক দিন ফুরিয়ে যাবে, এটিই তো নশ্বর পৃথিবীর অমোঘ বিধান। কিন্তু সব বিদায় তো আর সহজে মেনে নেওয়া যায় না। কবরী আপা আর ওয়াসিম ভাই চলে গেলেন। ফারুক ভাই ও আলমগীর ভাই ভীষণ অসুস্থ। এসব কষ্টের আগুন  হৃদয়কে পোড়ায়।’ চম্পা বলেন, ‘পৃথিবী যতটা ঝলমলে তার চেয়ে বড় বাস্তবতা হলো আমরা কেউই এই ক্ষণিকের আলোর ঘরে চিরস্থায়ী নই। এক দিন সবাইকে অন্ধকারে হারিয়ে যেতেই হবে। এই ভাবনাটা নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারলে জীবন সার্থক হবে।’ করোনাকালে বলতে গেলে তিন বোনই এক বছরের বেশি সময় নিজেদের ঘরবন্দী করে রেখেছেন। তাদের কথায়, এই বৈশ্বিক মহামারীর কবল থেকে নিজে বাঁচতে এবং অন্যদের বাঁচাতে নিয়ম মানার বিকল্প নেই। এই বোধটা সবার মধ্যে জাগ্রত হলে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কমে আসতে বাধ্য। করোনাকালে ঘরবন্দী জীবন কেমন কাটছে? এই কমন প্রশ্নের জবাবে তিন কন্যার কমন জবাব, ‘অবশ্যই ভালো থাকার কথা নয়। প্রথমত, একাকিত্ব, দ্বিতীয়ত, আতঙ্ক। দুই-ই মনটাকে কুরে কুরে খাচ্ছে প্রতিনিয়ত। টিভি আর খবরের কাগজ দেখতে ও পড়তে ভালো লাগে না। শুধু করোনার দুঃসংবাদ। স্বজন ও প্রিয়জন হারানোর অনাকাক্সিক্ষত খবর। মনটা বড় এলোমেলো করে দিয়েছে বিয়োগ বেদনা। করোনা প্রতি মুহূর্তে কেড়ে নিচ্ছে জীবনের পর জীবন। এ অবস্থা দেখতে আর ভালো লাগে না। অভিনেত্রী কবরী করোনার নির্মম ছোবলে চোখের নিমেষে হারিয়ে গেলেন। এই কষ্ট কীভাবে মেনে নেব। কবীর আপা চলে যাওয়ার এক দিনের মধ্যেই নায়ক ওয়াসিম ভাইও চিরবিদায় নিলেন। এদিকে আলমগীর ভাইও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ফারুক ভাই মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে তিন জনই বলে ওঠেন, এমন অবস্থা দেখতে কার ভালো লাগে বলেন। প্রকৃতিকে না বুঝে আমরা অবহেলা করে এসেছি। আসলে প্রকৃতির বিরুদ্ধে গেলে প্রকৃতি এক সময় নিষ্ঠুর হয়ে উঠবেই। এই বাস্তবতা সবাইকে মেনে নিতেই হবে।’ এবার তিন কন্যার মনটা হালকা করতে জানতে চাইলাম, ‘সময় কাটছে কীভাবে?’ অভিনেত্রী সুচন্দার কথায়, ‘আমার শরীরটা খুব ভালো যাচ্ছে না। কয়েক মাস আগে হার্টের বাইপাস সার্জারি হয়েছে। এখনো শরীরটা দুর্বল। তার ওপর করোনায় প্রিয়জন হারানোর কষ্ট ও নানা দুঃসংবাদ মনটাকে কষ্টে ভরিয়ে রেখেছে।’ অভিনেত্রী ববিতা বলেন, ‘বড় একা আমি, আগে কয়েক মাস পর পর কানাডায় প্রিয় পুত্র অনিক এবং আমেরিকা প্রবাসী ভাইদের কাছে ছুটে যেতাম। সুন্দর মজার সময় কাটিয়ে ফিরতাম। করোনার কারণে এখন সেই সুন্দর সময় থেকে আমি ও আমার পুত্র এবং ভাইরা বঞ্চিত। ওদের জন্য ভীষণ চিন্তা হয়। যদিও রোজ ফোনে কথা হয় তারপরও আমরা দেখা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি। এখন বাসায় নিজ হাতে গড়া বাগান আর পাখির রাজ্যে হারিয়ে যাই। কখনো সীমাহীন আকাশ দেখি, ফুল পাখি দেখি, দেখি সৃষ্টিকর্তার রহস্যময় এই পৃথিবী। তারপরও মনে হয় এসব নিয়ে আর কতটা সময় কাটানো যায়? ঘরের চার দেয়ালের বাইরে বের হওয়ার জন্য মন কাঁদে। কিন্তু করোনা তো পায়ে শিকল পরিয়ে রেখেছে। এতে মনটা উদাস থাকে।’ অভিনেত্রী চম্পা বলেন, ‘দম বন্ধ অবস্থায় আছি। সিনেমা বা নাটকের কাজের প্রস্তাব থাকলেও সাহস পাই না। সুস্থ থাকা আর সবাইকে সুস্থ রাখা এটিই এখন একমাত্র চেষ্টা। চম্পা বলেন, এত মন্দের মাঝেও ভালো লাগা হলো আমার অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চয়নিকা চৌধুরীর ‘বিশ্ব সুন্দরী’ ছবিটি সফল হওয়া। ছবিটি দর্শক মন জয় করে নিয়েছে। সুন্দর একটি ছবি নির্মাণের জন্য চয়নিকা দিদি অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখেন। এখন আমাদের তিন বোনের একটিই চাওয়া। তা হলো- ‘এক দিন ভোরে ঘুম ভেঙে যেন দেখি পৃথিবীতে করোনা বলে আর কিছু নেই।’

সর্বশেষ খবর