সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

সিনেমা হল কোথায়?

ঈদে মুক্তির দৌড়ে প্রায় এক ডজন ছবি

আলাউদ্দীন মাজিদ

সিনেমা হল কোথায়?

গলুই ছবিতে শাকিব-পূজা

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির হিসাব অনুযায়ী দেশে এখন সিনেমা হল আছে অর্ধশতেরও কম। এই স্বল্পসংখ্যক সিনেমা হলে কয়টি ছবি মুক্তি দেওয়া সম্ভব? এই প্রশ্ন রেখে নির্মাতারা বলছেন, ঈদে যদি এই ৫০টির মতো সিনেমা হলে বিগ বাজেটের একটি ছবিও মুক্তি পায় তাহলে মুনাফা  দূরে থাক মূল টাকাই ফেরত আনা সম্ভব নয়।

ঈদ মানেই নতুন ছবি মুক্তির মৌসুম। আর ঈদকে ঘিরে এবার মুক্তির দৌড়ে আছে এক ডজনের  মতো ছবি। এসব বড় বাজেটের ছবির বেশির ভাগই করোনা মহামারির কারণে প্রায় দুই বছর ধরে আটকে আছে। তাই ছবির নির্মাতারা ব্যবসার প্রধান মৌসুম ঈদে ছবি মুক্তি দিয়ে মুনাফার মুখ দেখতে আগ্রহী। কিন্তু এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সিনেমা হলের স্বল্পতা।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির হিসাব অনুযায়ী দেশে এখন সিনেমা হল আছে অর্ধশতেরও কম। এই স্বল্পসংখ্যক সিনেমা হলে কয়টি ছবি মুক্তি দেওয়া সম্ভব? এই প্রশ্ন রেখে নির্মাতারা বলছেন, ঈদে যদি এই ৫০টির মতো সিনেমা হলে বিগ বাজেটের একটি ছবিও মুক্তি পায় তাহলে মুনাফা দূরে থাক মূল টাকাই ফেরত আনা সম্ভব নয়।

চলচ্চিত্রকার অনন্ত জলিল ইরানের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণ করেছেন বিশাল বাজেটের ছবি ‘দিন দ্য ডে’। করোনার কারণে প্রায় দুই বছর ধরে ছবিটি তিনি মুক্তি দিতে পারেননি। এবার স্থির করেছেন আসন্ন ঈদেই ছবিটি তিনি মুক্তি দেবেন। আর মনস্থির করার পর যখন দেখলেন সিনেমা হলের সংখ্যার দৈন্যদশা আর প্রচুর ছবি ঈদে মুক্তির দৌড়ঝাঁপে আছে তখনই তিনি শঙ্কিত হয়ে পড়লেন, কারণ ছবিটি তিনি কয়টি সিনেমা হলে মুক্তি দিতে পারবেন। হাতে গোনা সিনেমা হলে মুক্তি দিলে তো নিশ্চিত ভয়ংকর লোকসানের কবলে পড়বেন। তাই সংবাদ সম্মেলন করে নিজের এই  উদ্বেগের কথা জানান তিনি। প্রযোজকদের কাছে অনুরোধ করেন ঈদে যেন আর কোনো ছবি মুক্তি দেওয়া না হয়। কিন্তু তার এই অনুরোধ কে কতটা রক্ষা করতে পারবেন তা বলা কঠিন। অনন্তর মতো সব প্রযোজকেরই কিন্তু একই হতাশা আর দুশ্চিন্তা।

প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, দেশে প্রায় ৬০টির মতো সিনেমা হল চালু আছে। ঈদে মৌসুমি সিনেমা হল হিসেবে আরও ২০টির মতো সিনেমা হল খুলতে পারে। এতে ঈদে দেশে ৮০টির মতো সিনেমা হল পাওয়া যেতে পারে। এখন কথা হলো নির্মাতারা সিনেমা হলের সংখ্যা বুঝে কে ছবি মুক্তি দেবে আর কে দেবে না তা তাদের বিবেচনার বিষয়। এটি ঠিক এত স্বল্পসংখ্যক সিনেমা হলে বেশি ছবি মুক্তি দিতে গেলে সিনেমা হল ভাগ হয়ে যাওয়ার কারণে প্রযোজকদের ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যায়। জানা গেছে, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে প্রায় ২৭টি জেলায় সব সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ছবি প্রদর্শনের স্থান কমে যাওয়ায় উদ্বেগে পড়েছেন নির্মাতারা। নির্মিত ছবি বা ছবি নির্মাণ করে কোথায় প্রদর্শন করবেন তারা। গত দুই বছরে সিরাজগঞ্জের চালার ঐতিহ্যবাহী সাগরিকা, শেরপুরের কাকলী, রাজশাহীর উপহার, ঢাকার রাজমণি, রাজিয়াসহ  দেশের অনেক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ এক যুগ আগেও দেশে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২ শতাধিক। তিন বছর আগেও এ সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০০।

চলচ্চিত্রবোদ্ধা, গবেষক ও সাংবাদিক অনুপম হায়াৎ বলেন, দেশীয় চলচ্চিত্রের জন্য এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। এভাবে চলতে থাকলে সহসাই একদিকে ছবি নির্মাণে নির্মাতাদের উৎসাহ হারানো অন্যদিকে ছবির অভাবে অবশিষ্ট চালু সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়েই যাবে। কারণ লোকসান গুনে আর কত সিনেমা হল খোলা রাখা যায়? এ অবস্থার উত্তরণে সরকার এবং চলচ্চিত্রের নীতিনির্ধারকরা বসে দেশীয় চলচ্চিত্রশিল্পকে বাঁচাতে দ্রুত করণীয় ঠিক করে নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, বেশ কিছুদিন আগে সরকার সিনেমা হল নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ১০০০ কোটি টাকার ঋণ প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। যে ঋণ প্রদান দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও বাস্তবায়িত হয়নি। দ্রুত এই বন্ধ্যত্ব কাটানো দরকার।

এদিকে বেশ কয়েক বছর ধরে সিনেমা ও সিনেমা হল বাঁচাতে সরকারি উদ্যোগের কথা কেবল শোনাই যাচ্ছে। ২০১৮ সালে প্রেক্ষাগৃহের আধুনিকায়নে ‘দেশব্যাপী সিনেমা হল ডিজিটালাইজেশন’ প্রকল্পের জন্য সরকারের পক্ষ  থেকে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের  ঘোষণা দেওয়া হয়। তথ্য মন্ত্রণালয়, বিএফডিসি ও চলচ্চিত্রের সমিতিগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে ওই বছরের মে মাসে একটি সভা করা হয়। পরে তথ্য মন্ত্রণালয়  থেকে আরও কয়েকটি ভাগে প্রকল্পটির জন্য কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সংশোধনীসহ বেশ কয়েকবার প্রকল্পের বাজেট তথ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। কিন্তু আকস্মিকভাবে বন্ধ হয়ে যায় সেই প্রকল্প। প্রকল্পের সদস্য সচিবের দায়িত্বে থাকা বিএফডিসির টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের পরিচালক আইয়ুব আলী বলেন, সরকারের ওই প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। এখন সিনেমা হল আধুনিকায়নে নতুন প্রকল্প হিসেবে হল মালিকদের স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেবে সরকার।

এদিকে ঈদে মুক্তির দৌড়ে শামিল রয়েছে এমন যেসব ছবির নাম শোনা যাচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হলো- ‘দিন দ্য ডে’, ‘শান’, ‘গলুই’, ‘অন্তরাত্মা’, ‘অপারেশন সুন্দরবন’, ‘বিদ্রোহী’, ‘আনন্দ অশ্রু, ‘সাহসী যোদ্ধা’, ‘তালাশ’, ‘ক্যাসিনো’, ‘বীরত্ব’, ‘ঢাকা ২০৪০’, ‘প্রেম প্রীতির বন্ধন’ প্রভৃতি। এখন দেখার বিষয় সিনেমা হল সংকটে ঈদে আসলে কয়টি ছবি মুক্তি পায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর