আশির শেষদিকে অর্থাৎ নব্বই দশক শুরুর পর ব্যান্ড গানের জনপ্রিয়তা এতই বেড়ে যায় যে, সে সময় আমাদের চলচ্চিত্রেও ব্যান্ডের জনপ্রিয় তারকাদের দিয়ে প্লেব্যাক করানো শুরু হয়। সেসব কালজয়ী চলচ্চিত্রের গানের জনপ্রিয় ব্যান্ডশিল্পীদের নিয়ে আয়োজন সাজিয়েছেন- পান্থ আফজাল
তপন চৌধুরী
সোলস ব্যান্ডের অন্যতম ভোকালিস্ট তপন চৌধুরী ব্যান্ডকালে শিল্পীদের মধ্যে প্রথম প্লেব্যাকে কণ্ঠ দেন। তিনি সবচেয়ে বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। প্লেব্যাকে তপন চৌধুরীর যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আমজাদ হোসেনের চলচ্চিত্র ‘ভাত দে’র মাধ্যমে। এ ছবিতে ‘কত কাঁদলাম’ শিরোনামের গানে কণ্ঠ দেন তিনি। এরপর প্রায় ৩০০ প্লেব্যাকে কণ্ঠ দিয়েছেন। তাঁর জনপ্রিয় প্লেব্যাকের মধ্যে রয়েছে ঢাকা ৮৬ ছবির ‘পাথরের পৃথিবীতে কাচের হৃদয়’, জীবনসঙ্গী ছবির ‘তুমি কেমনে এত নিঠুর হইলা’ ইত্যাদি।
আইয়ুব বাচ্চু
প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। তাঁর ক্যারিয়ারে রয়েছে অনেক হিট গান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আম্মাজান চলচ্চিত্রের ‘আম্মাজান’, ‘তোমার আমার প্রেম’ এবং ‘স্বামী আর স্ত্রী বানাইছে কোন মিস্ত্রি’, সাগরিকা ছবির ‘আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে’, লুটতরাজ ছবির ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’, ব্যাচেলর চলচ্চিত্রের ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি’, তেজির ‘এই জগৎ সংসারে তুমি এমনি একজন’ ইত্যাদি। প্রতিটি গানই তুমুল জনপ্রিয় এবং এখনো শ্রোতাদের মুখে মুখে ফিরে।
জেমস
প্লেব্যাকের দুনিয়া জয় করে নেন। তিনি শুধু বাংলাদেশের চলচ্চিত্রেই প্লেব্যাক করেননি, ভারতীয় চলচ্চিত্রেও প্লেব্যাক করেছেন। তাঁর প্লেব্যাক করা সেরা কিছু গান হচ্ছে- মনের সাথে যুদ্ধ ছবির ‘আসবারকালে আসলাম একা’, ওয়ার্নিং ছবির ‘এত কষ্ট’, দেশাই দ্য লিডার ছবির ‘পতাকাটা খামচাতে আসে যদি’, সুইটহার্ট ছবির ‘বিধাতা’, সত্তা ছবির ‘তোমার প্রেমেতে অন্ধ’সহ অনেক গান সবার মাঝে তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। হিন্দি ভাষায় তাঁর জনপ্রিয় গান হচ্ছে- গ্যাংস্টার ছবির ‘ভিগি ভিগি’, লামহে ছবির ‘চাল চালে আপনি ঘর’, লাইফ ইন এ মেট্রো চলচ্চিত্রের ‘আলবিদা’ ও ‘রিস্তে’।
বিপ্লব
প্রমিথিউস ব্যান্ডের লিড ভোকালিস্ট বিপ্লব। তিনি বেশ কিছু চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন। তাঁর গাওয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় গান- ‘আব্বাজান’ ছবির ‘আব্বাজান’ গানটি। এ ছাড়া আরও সেসব জনপ্রিয় গান রয়েছে- মাটির ফুল ছবির ‘এই বুকেতে কষ্ট’, ‘ভালোবাসা সর্বনাশা’, আব্বাজান ছবির ‘দুনিয়ারে দুনিয়া’, চাঁদের মতো বৌ ছবির ‘ধোয়া ধোয়া’, মিলন হবে কতদিনে ছবির ‘জীবন শুধু জীবন’ ইত্যাদি।
হাসান
আর্ক ব্যান্ড তারকা হাসান। তিনি চলচ্চিত্রের প্লেব্যাক নিয়ে বরাবরই ছিলেন অনাগ্রহী। তিনি অনেক প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন।
তিনি একটিমাত্র প্লেব্যাকে কণ্ঠ দিয়েছেন- সেটাও জোর যার মুল্লুক তার চলচ্চিত্রের ‘একই আকাশ নীড়ে’ গানটি। আলাউদ্দিন আলীর মতো সম্মানিত সুরকার ও সংগীত পরিচালক তাঁকে বারবার অনুরোধ করলে তিনি সেই অনুরোধ ফেলতে পারেননি। এটির পর তিনি আর প্লেব্যাকে কোনোটা দেননি।
মাকসুদ
প্রথম প্লেব্যাকে কণ্ঠ দেন অঞ্জলি ছবিতে। দারাশিকো পরিচালিত এ ছবিতে তিনি গেয়েছেন ‘তোমাকে দেখলে একবার’ শিরোনামের তুমুল জনপ্রিয় গানটি। এ ছাড়াও এ ছবিতে তাঁর গাওয়া জনপ্রিয় একটি গান ছিল, সেটা হলো- ‘লোকে বলে পাগলামি আমি বলি ভালোবাসা’ গানটি। এরপর তিনি মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘ডিসকো ড্যান্সার’ ছবিতে ‘ডিসকো ড্যান্সার’ নামে একটি গান এবং মজিবুর রহমান পরিচালিত আইনের হাত ছবিতে ‘পিরিত রতন’ শিরোনামের একটি গান করেন।
আজম খান
উচ্চারণ ব্যান্ডের আজম খান। যাকে বলা হয় বাংলা ব্যান্ডের গুরু বা সম্রাট। তিনি চলচ্চিত্রের বেশ কিছু গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। এমনকি অভিনয়ও করেছেন শাহীন সুমনের ‘গডফাদার’ ছবিতে মাফিয়া সম্রাট চরিত্রে। তাঁর গাওয়া প্লেব্যাকের মধ্যে রয়েছে- ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলালে দুলাল’ গান দুটি।
সুমি
চিরকুট ব্যান্ডের সুমি গান করেছেন আয়নাবাজি ছবিতে ‘দুনিয়া’, আইসক্রিম ছবিতে ‘ভালো থাকা মন্দ থাকা’, ডুব ছবিতে ‘আহারে জীবন’, ভয়ংকর সুন্দর ছবিতে ‘এই শহরের কাকটাও জেনে গেছে’ এবং বিউটি সার্কাসের ‘বয়ে যাও নক্ষত্র’ গানটি।
অন্যান্য প্লেব্যাক সিঙ্গার যারা
বাংলা ব্যান্ডের অন্যতম ভোকালিস্ট ও অর্ণব অ্যান্ড ফ্রেন্ডসের শায়ান অর্ণব বেশ কিছু বাংলা সিনেমায় গান করেছেন। করেছেন সংগীত পরিচালনাও। তিনি মনপুরা ছবিতে ‘আমার সোনার ময়না পাখি’ গানটি গেয়েছেন। তিনি কাজ করেছেন জাগো, আয়নাবাজি, আন্ডার কনস্ট্রাকশনসহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে। অর্থহীন ব্যান্ডের সুমন ঊনপঞ্চাশ বাতাস ছবিতে ‘প্রথম’ শিরোনামে গান গেয়েছেন। একসময়ের ওয়ারফেজ ব্যান্ডের গিটারিস্ট ও ভোকালিস্ট বালাম প্রিয়তমা ছবিতে ‘ও প্রিয়তমা’, রাজকুমার ছবিতে ‘আমি হব রাজকুমার’ গানটি গেয়েছেন।