অবশেষে বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি ও এফডিসির বন্ধ্যত্ব কাটছে। সংস্থা দুটির উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছে এফডিসি কর্তৃপক্ষ। আগামী অর্থবছরে ফিল্ম সিটির উন্নয়নে সরকারের কাছে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে দেড় মাসের মধ্যে এফডিসিতে আসছে বহু প্রতীক্ষিত ক্যামেরা ও এডিটিং মেশিন।
এফডিসির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক লক্ষ্মণ চন্দ্র দেবনাথ জানান, সংস্থার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম হারুনউর রশিদ এপ্রিলে দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই গাজীপুরে বাংলাদেশ ফিল্ম সিটির উন্নয়ন এবং এফডিসির আধুনিকায়ন কাজ শুরুর ত্বরিত উদ্যোগ নেন। এর অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা ক্যামেরা ও এডিটিং মেশিন ক্রয়ের ওয়ার্ক অর্ডার দেন গত মাসে। ফলে এলসি খোলা হয় এবং জুনের মধ্যে তা এসে পৌঁছবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে তিনটি সনি এফ ৫৫ ডিজিটাল ক্যামেরা ও পাঁচ সেট এফসিও অফলাইন-অনলাইন ডিজিটাল এডিটিং মেশিন। এ ছাড়া ডাবিং মেশিন ক্রয়ে অনিয়মের ব্যাপারে তথ্য মন্ত্রণালয়ে করা অভিযোগের তদন্ত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই মেশিনটি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। সবমিলিয়ে চলতি বছরের মধ্যে এফডিসিকে আধুনিক সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
চলচ্চিত্রকারদের অভিযোগ, ২০১১ সালের ১৮ অক্টোবর একনেকের বৈঠকে এফডিসির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প প্রস্তাব পাস হয়। এতে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায় ৫৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। তিন অর্থবছরে তিন কিস্তিতে এই অর্থ বরাদ্দ চূড়ান্ত হলেও এফডিসি কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় সময়মতো কাজ করতে না পারায় প্রথম দুই কিস্তির বেশির ভাগ অর্থ সরকারের কাছে ফেরত যায়। ফলে ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত এর সিকি ভাগও হয়নি। ইতিমধ্যে সরকারের কাছে ফেরত যাওয়া অর্থ রিলিজ ও সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে।
চলচ্চিত্রকাররা বলছেন, ৫৭ বছরে ৩২ বার এফডিসির এমডি বদল হয়েছেন। কিন্তু এই সংস্থার ভাগ্যের বদল হয়নি। কারণ যে এমডিই এসেছেন তিনিই স্বজনপ্রীতি এবং দুর্নীতি করেছেন, সংস্থার উন্নয়নে তাদের নজর ছিল না।
বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে যোগ দিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হারুনউর রশিদ দ্রুত সব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন। এফডিসি ছাড়াও গাজীপুরে বাংলাদেশ ফিল্ম সিটির উন্নয়নে নতুন অর্থবছরে সরকারের কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়েছেন তিনি। এ জন্য গ্রিন বুকে নতুন একটি কর্ম পরিকল্পনা প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। এতে একনেকের বৈঠকে দ্রুত প্রস্তাবটি পাস হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
প্রস্তাবনায় আন্তর্জাতিক মানের ফিল্ম সিটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অর্থসহ সব ধরনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এ তথ্য দিয়ে লক্ষ্মণ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, হলিউডের ইউনিভার্সেল অথবা বলিউডের রামুজি ফিল্ম সিটির আদলে অত্যাধুনিক বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি গড়ে তোলা হবে।
চলচ্চিত্র নির্মাণে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা পেতে চলচ্চিত্রকারদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার ১৯৭৯ সালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ফিল্ম সিটি নির্মাণের জন্য এফডিসিকে ১৫০.১১৭ একর জায়গা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু দীর্ঘ ৩৪ বছরেও সেখানে ফিল্ম সিটি গড়ে ওঠেনি। এখানে হয়নি চলচ্চিত্রের কোনো শুটিং। নিজ দেশে ফিল্ম সিটির জায়গা থাকতেও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে কাজ করতে হচ্ছে বিদেশের মাটিতে। এতে একদিকে দেশের অর্থ যেমন বিদেশে চলে যাচ্ছে তেমনি চরম ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে নির্মাতাদের। ২০১০ সালে সরকার ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ফিল্ম সিটি উন্নয়নের উদ্যোগ নিলেও অজ্ঞাত কারণে শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। এর আগে ২০০২ সালেও একবার উন্নয়ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে তাও ভেস্তে যায়। ফিল্ম সিটির ভূমিকে পিকনিক পার্টির কাছে ভাড়া দেওয়া এবং পুকুরে মাছের চাষ বাবদ এফডিসি যে অর্থ পায় তা দিয়ে কেয়ার টেকারদের বেতন এবং বিদ্যুৎ বিলও পরিশোধ করা যায় না। চলচ্চিত্রকারদের প্রত্যাশা এবার আলোর মুখ দেখবে বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি।