প্রতি বছরের মে মাসে দক্ষিণ ফ্রান্সের শহর কান হয়ে ওঠে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের তীর্থ শহর। কান চলচ্চিত্র উৎসবকে এই মর্যাদায় নিয়ে আসার পেছনে নিরলস কাজ করেছেন দুই সফল পরিকল্পনাকারী থিয়েরি ফ্রমক্স ও গিলেস ইয়াকব। মূলত তাদের নেতৃত্বে গত কয়েক বছরে এই আয়োজন বৈশ্বিক মাত্রা পেয়েছে। ১৩ মে বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় পালে দে ফেস্টিভ্যালস এ দে কোঁগ্র নামক ভবনে শুরু হয় উৎসবের ৬৮তম আসর। এখানে ছিলেন শুধু আমন্ত্রিত অতিথিরা। অস্কারজয়ী অভিনেত্রী জুলিয়ান মুর কান উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। গতবারের মতো এবারও কানের 'মাস্টার অব সিরিমনিস' অর্থাৎ সঞ্চালক ছিলেন ফরাসি অভিনেতা ল্যাম্বার্ট উইলসন। তারপর একে একে প্রতিযোগিতা বিভাগের মূল বিচারক মেঙ্কিান নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক গুইলারমো দেল তোরো, স্প্যানিশ অভিনেত্রী রসি ডি পালমা, ব্রিটিশ অভিনেত্রী সিয়েনা মিলার, মার্কিন অভিনেতা জ্যাক গিলেনহাল, ফরাসি অভিনেত্রী সোফি মার্সো, মালির সুরকার, গায়ক ও গীতিকার রকিয়া ট্রাওর, কানাডিয়ান নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক ও অভিনেতা হাভিয়ার দোলানকে মঞ্চে ডাকা হয়।
কানের ছবি
এবারের উৎসবের সর্বোচ্চ সম্মান স্বর্ণপাম (পাম দ'র) জেতার জন্য প্রতিযোগিতা বিভাগে জমা পড়েছিল ১ হাজার ৮৫৪টি ছবি। সেখান থেকে বাছাই করা হয় ৪২টি ছবি। তার মধ্য থেকে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় স্থান পেল ১৯টি। তালিকায় স্বাগতিকদের ছয়টি থাকলেও নেই ব্রিটিশদের কোনো ছবি। ছবিগুলো হলো- আওয়ার লিটল সিস্টার (কোরে-এদা হিরোকাজো), মার্গারিট অ্যান্ড জুলিয়েন (ভালেরি ডনজেলি), দ্য টেল অব টেলস (মাত্তেও গাররোনে), লাউডার দেন বম্বস (জোয়াকিম ট্রায়ার), মাউন্টেইনস মে ডিপার্ট (জিয়া জাং কে), দ্য অ্যাসাসিন (হো সিয়াও সিয়েন), সন অব সৌল (লেজলো নেমেস), দ্য লবস্টার (ফার্গোস লানথিমস), দ্য সি অব ট্রিস (গাস ফন সেন্ট), অ্যা সিম্পল ম্যান (স্টেফেন ব্রিজ), সিসারিও (ডেনিস ভিলেন্যুভ), ম্যাকবেথ (জাস্টিন কারজেল), ইয়ুথ (পাওলো সরেনতিনো), মাই মাদার (ন্যানি মরেত্তি), ধিপ্যান (জ্যাক অদিয়ার), ক্যারল (টড হায়েন্স), মন রই (মাইওয়েন), ভ্যালি অব লাভ (গুইলুম নিকলোঙ্) এবং ক্রনিক (মাইকেল ফ্রাঙ্কো) । এর মধ্যে আছে আগে স্বর্ণপাম জিতেছেন এমন কয়েকজন নির্মাতার ছবি। এছাড়া ক্ল্যাসিকস বিভাগে আছে কস্তা-গাবরাসের 'জেড' (১৯৬৮), অরসন ওয়েলেসের 'সিটিজেন কেইন' (১৯৪১) এবং 'দ্য লেডি ফ্রম সাংহাই' (১৯৪৭), ওয়েলেসের ওপর প্রামাণ্যচিত্র 'দ্য থার্ড ম্যান' এবং ইনগ্রিড বার্গম্যানের ওপর প্রামাণ্যচিত্র 'ইনগ্রিড বার্ডম্যান, ইন হার ঔন ওয়ার্ডস'।
বিচারকের আসনে
নবীন নির্মাতাদের ছবির বিভাগ ক্যামেরা দ'র-এর জুরি প্রধান ফরাসি অভিনেত্রী সাবিন অ্যাজেমা। কানের প্রতিযোগিতা ও আনসার্টেন রিগার্ড এবং প্রতিযোগিতার বাইরের বিভাগে স্থান পাওয়া ছবিগুলোর মধ্য থেকে নির্বাচন করা হবে সেরা নির্মাতা।
মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের জুরি কান উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে মার্কিন নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক জোয়েল ও এথান কোয়েনের নেতৃত্বে বিচারক হিসেবে স্বর্ণ পাম জয়ী ছবি নির্বাচনে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মোট ৯ জন। তারা হলেন- ফরাসি অভিনেত্রী সোফি মার্সো, ব্রিটিশ অভিনেত্রী সিয়েনা মিলার, স্প্যানিশ অভিনেত্রী রসি ডি পালমা, মার্কিন অভিনেতা জ্যাক গিলেনহাল, মেঙ্কিান নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক গুইলারমো দেল তোরো, কানাডিয়ান নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক ও অভিনেতা হাভিয়ার দোলান এবং মালির সুরকার, গায়ক ও গীতিকার রকিয়া ট্রাওর।
লালগালিচার সুন্দরীরা
জানা গেছে, ১১৬টি দেশের ১২ হাজার প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন এবার। এর মধ্যে অর্ধেকই নারী।
নারী নির্মাতা ইমানুয়েলে বারকটের ছবি দিয়েই পর্দা উঠেছে উৎসবের। 'লা তেত অত' নামের ছবিটির অভিনেত্রী ক্যাথেরিন দেন্যুভের অভিনয় মুগ্ধ করেছে অতিথিদের। গোটা উৎসবজুড়েই নারীদের দিকে থাকবে সবার মনোযোগ। আর লালগালিচায় হেঁটেছে হলিউড, বলিউডের অনেক অভিনেত্রী। তারকাদের মধ্যে কেট ব্ল্যানচেট, নন্দিতা দাস, রোসারিও ডসন, ইরানি অভিনেত্রী গোলশিফতা ফারাহানি, সালমা হায়েক, ক্যাটরিনা কাইফ, ঐশ্বরিয়া রায়, সোনম কাপুর, মডেল কার্লি ক্লস, ডাউজেন ক্রোয়েস, ডায়েন ক্রুজার, গঙ লি, সোফি মার্সো, রুনি মারা, অ্যান্ডি ম্যাকডাউয়েল, সিয়েনা মিলার, জুলিয়ান মুর, জেন সিমুর, এমা স্টোন, শার্লিজ থেরন প্রমুখ।
কানের কিছু মজার ঘটনা
১৪ মে শুরু হয়েছে কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ৬৮তম আসর। ছবির প্রদর্শনী ও বেচাকেনা এবং নানা আলোচনা ও সেমিনারের পাশাপাশি তারকাদের নিয়ে প্রতিদিন ঘটছে নানা ঘটনা। তার মধ্যে এলোমেলো হাওয়ায় এমা। কান উৎসবে প্রতিযোগিতা বিভাগ, আনসার্টেন রিগার্ড, ক্যামেরা দ'র কিংবা প্রতিযোগিতা বিভাগের বাইরের ছবিগুলোর কলাকুশলীরা ফটোকলে অংশ নেন। 'ইরেশনাল ম্যান' প্রদর্শনের পর নিয়ম অনুযায়ী আলোকচিত্রীদের সামনে আসেন পরিচালক উডি অ্যালেন, এমা স্টোন ও পার্কার পসি। সকাল থেকে বয়ে যাওয়া বাতাস অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখে ফেলল এমাকে। একদিকে চুল এলোমেলো হয়ে গেল, অন্যদিকে অস্কার ডি লে রেন্টার ডিজাইন করা কালো রঙা ফ্রককে সামলাতে গিয়ে ভীষণ হিমশিম খেলেন ২৬ বছর বয়সী এই মার্কিন অভিনেত্রী।
বিষয়টি এমার জন্য বিব্রতকর হলেও দর্শক ও অন্যদের ঠিকই হাসিয়েছে।