সম্মান রক্ষার্থে নিজের বোনকে খুনের অপরাধে এবার ছেলেকে গুলি করে মারার আর্জি জানালেন নিহত পাকিস্তানি মডেল কান্দিল বালোচের বাবা আনওয়ার আজিম।
সম্প্রতি কান্দিলকে শ্বাসরোধ করে খুন করে তার ভাই ওয়াসিম। ধৃত ওয়াসিমের দাবি, পরিবারের সম্মান বাঁচাতেই এই হত্যা। কান্দিলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সমাজে তাদের হেয় করছিল। অনুতাপের ছিটেফোঁটাও নেই ঘাতক ভাইয়ের মনে। পাকিস্তানে এমন অনার কিলিংয়ের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিহতের পরিবার ক্ষমা করে দিলে আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায় খুনি। তবে এবারের ঘটনায় পাকিস্তানের সুর ব্যতিক্রমী। আমজনতা তো বটেই এবার খুনি ছেলের কড়া শাস্তি চায় কান্দিলের পরিবার। সেই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ওয়াসিমের বিরুদ্ধে খুনের মামলা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ সরকার।
গত ১৫ জুলাই মুলতানে নিজের বাড়িতেই কান্দিলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ওয়াসিম। তদন্তকারীদের দাবি, তার আগে মাদক জাতীয় কিছু খাওয়ানো হয়েছিল কান্দিলকে। কিন্তু একই বাড়িতে থেকেও কেন টের পেলেন না পরিবারের অন্যেরা? এই বিষয়ে শুক্রবার সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ খুলেছেন বালোচের মা। জানিয়েছেন, ''সে দিন রাতে আমরাও বাড়িতে ছিলাম। কিন্তু কিছুই টের পাইনি। দুধের মধ্যে এমন কিছু মেশানো হয়েছিল যাতে হুঁশ ছিল না কারোর।'' তিনি বলেন, ''মেয়ে আমার সুখ-দুঃখের ভাগীদার ছিল।''
মেয়েকে হারিয়ে ক্রুদ্ধ বাবার গলাতেও ঝরে পড়েছে ক্ষোভের আগুন। ''সম্মান রক্ষার নামে আমার ছোট্ট মেয়েটাকে শ্বাসরোধ করে মেরেছে ও। ওর ক্ষমা নেই।'' একই সঙ্গে বলেছেন, ''ছেলেটা একটু পাগলাটে। কান্দিলকে নিয়ে বাঁকা মন্তব্য সহ্য করতে পারত না।''
তবে বোনকে খুন করে এখনো তার মধ্যে কোন অনুশোচনা দেখা যায়নি। কান্দিলের জন্য পরিবারের সম্মান ধুলোয় মিশে গেছে বলেই এখনও মনে করেন ওয়াসিম। কান্দিলকে নিয়ে আপত্তি একা ওয়াসিমের ছিল না। বরং রক্ষণশীল পাকিস্তান সমাজে বিতর্কের আর এক নাম হয়ে উঠেছিল কান্দিল বালোচ। কখনও প্রিয় ক্রিকেটারের জন্য নগ্ন নাচের প্রতিশ্রুতি দিয়ে, কখনও বা ধর্মগুরুর সঙ্গে হোটেলের ঘরে সেলফি তুলে কান্দিল চর্চিত ও নিন্দিত। সোশ্যাল মিডিয়ায় নগ্নতা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে পছন্দ করতেন কান্দিল। 'পাকিস্তানের কিম কার্দাশিয়ান' বলে পরিচিত এই মডেল বরাবরই চেয়েছিলেন পাকিস্তানের রক্ষণশীল সমাজের বেড়া ভেঙে ফেলতে। নিজের মতো করে বাঁচতে। নিয়তির নির্মম পরিহাস, এজন্য নিজের ভাইয়ের হাতেই প্রাণ দিতে হলো তাকে।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ