৬ মে, ২০২২ ১১:৪৩

‌‘‘যে গান কানে যায় না শোনা সে গান যেথায় নিত্য বাজে”

ডা. মাহবুবর রহমান

‌‘‘যে গান কানে যায় না শোনা
সে গান যেথায় নিত্য বাজে”

ভ্যান গগের শিল্পকর্ম

সংগীত হলো এমন একটি মাধ্যম যা লিরিক এবং সুরের উপর ভর করে জীবন্ত হয়ে ওঠে। অন্য ভাষাভাষী মানুষেরা লিরিক না বুঝলেও সুর বিশ্বজনীন। কিন্তু পেইন্টিং বা চিত্রশিল্পের ক্ষেত্রে সে সমস্যা নেই। পেইন্টিং এর একটিমাত্র ভাষা এবং তা বিশ্বজনীন। ফলে দুনিয়ার যে কোনো প্রান্তে চিত্রকলার প্রদর্শন হলে যেকোনো মানুষ তার রূপ রস গ্রহণে সক্ষম। চিত্রকলা সভ্য সমাজ ও সংস্কৃতির আধুনিকতম প্রকাশ। এর একটি প্রত্যক্ষ চোখ ধাঁধানো রূপ যেমন আছে তেমনি আছে অন্তর্লোকে এক গহীন অনুভূতি উদ্রেক করবার ক্ষমতা। দেশের বাইরে যখনই যাবার সুযোগ ঘটে মন কেবলই খুঁজে বেড়ায় তাকে। এক অপরিসীম সৌন্দর্য তৃষ্ণা ধাবিত করে। ফলে কোনো এক সময়ে নিজেকে আবিষ্কার করি সেই শব্দহীন এক শিহরিত ভুবনে। 

এবারের আমেরিকা যাত্রায় অবধারিতভাবে সেই চিরদুঃখী কিন্তু চিরসুন্দর ভ্যান গগের দুয়ারে হানা। ওয়াশিংটন ডিসি শহরের কেন্দ্রে চলছে ভ্যান গগের রূপসাগরে নিমজ্জন।শিরোনাম “Van Gogh: The Immersive Experience: Washington’’। ভ্যান গগের জীবন ও শিল্পকর্ম নিয়ে এক বিস্ময়কর ঐন্দ্রজালিক ভার্চুয়াল মিউজিয়াম!

এর আগেও প্যারিস শহরে অনুরূপ একটি প্রদর্শনী দেখেছিলাম। প্রথম দর্শনের একটি বিস্ময় ও পবিত্রতা থাকে। প্যারিসের ক্ষেত্রেও তেমন হয়েছিল। তবে ওয়াশিংটনের এই প্রদর্শনীর মাত্রা এবং পরিধি ভিন্নরকম বিধায় নির্দ্বিধায় ভ্যান গগের দুঃখের সাগরে ডুব দিলাম।

রবীন্দ্রনাথের মাত্র ৮ বছর আগে ১৮৫৩ সালে নেদারল্যান্ডস এর একটি নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম ভিনসেন্ট ভ্যান গগের। ভাগ্যচক্রে নিয়তির অমোঘ নির্দেশে মাত্র ৩৭ বছরে তাঁরই সৃষ্ট কালো কাকেরা ঈশান কোণে তাঁকে উড়িয়ে নিয়ে চলে যায়। প্যারিসের উপকণ্ঠে Auvers-sur-Oise গ্রামে আজো সেই কালো কাকদের দেখা যায়!

ক্ষুদ্র জীবনের এই মোহময় স্বপ্নের ঘোরে ৩৭টি বছর কেটে যায় দারিদ্র্য অনাহার আর ভালোবাসাহীনতায়। তবে শিল্প সৃষ্টির অদম্য প্রয়াস চালু ছিল জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। জীবনের শেষ দুই বছরে প্রতি ৩৬ ঘণ্টায় একটি করে মাস্টারপিস পেইন্টিং সৃষ্টি করে গেছেন। এত যাঁর জনপ্রিয়তা এত যাঁর শিল্পমূল্য তিনি বেঁচে থাকতে মাত্র একটি পেইন্টিং বিক্রি করতে পেরেছিলেন। অথচ এখন তাঁর একেকটি পেইন্টিং বিক্রি হয় শত শত মিলিয়ন ডলারে।

মানুষের দুঃখ বেদনা, সহমর্মিতা ছাড়িয়ে তাঁর শিল্পবোধ প্রকৃতির গভীর সৌন্দর্যকে নিংড়িয়ে রঙ-তুলির আঁচড়ে মূর্ত করেছিলেন তিনি। তাঁর বিখ্যাত পটেটো ইটার্স, হাউজ ইন আরলেস, অলিভস ব্লসম, স্টারি নাইট, সানফ্লাওয়ার সিরিজ, গমক্ষেতের সিরিজ, আইরিসের সিরিজ, ডা. গ্যাসেট, আত্মপ্রতিকৃতি সিরিজসহ প্রায় ৯০০ পেইন্টিং এবং ১১০০ ড্রয়িং ও স্কেচ আজো শিল্পবোদ্ধা মানুষের অমূল্য খোরাক হয়ে কালোত্তীর্ণ হয়ে আছে। 
৪ মে, ২০২২। মেরিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর