মো. খুরশীদ আলম আমাদের গানের জগতে এমন একজন খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী যে তাঁকে নিয়ে বলা কঠিন কাজ। সত্তরের দশকের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী খুরশীদ আলম। রেডিও-টেলিভিশন-চলচ্চিত্র সবখানেই তিনি অপ্রতিরোধ্য একজন শিল্পী হিসেবে দর্শক মাতিয়ে রাখতেন তাঁর জাদুকরী কণ্ঠ দিয়ে। তাঁর কণ্ঠে ছেলেমানুষী আছে, হাস্যরসাত্মক গানেও তিনি পারঙ্গম। সব সময় তিনি হাসিখুশি একজন মানুষ। তাঁর গানে গভীর স্পর্শ পাওয়া যায়। এক অদ্ভুত কণ্ঠস্বরে তিনি পাঁচ দশক ধরে বাংলা গানকে দর্শকহৃদয়ে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন। খুরশীদ আলমের সঙ্গে আমাদের খুব বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। চ্যানেল আইয়ের যে কোনো ইভেন্ট, যে কোনো অনুষ্ঠানে তিনি নিয়মিত উপস্থিত থাকেন। এই তো সেদিন অভিনেতা আফজাল হোসেন বলছিলেন, খুরশীদ আলম সারাক্ষণ হাসিমুখ নিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলেন। সবাইকে হাস্য কৌতুকে মাতিয়ে রাখেন। সব সময়ই তিনি শিশু। শিশুদের মতোই উচ্ছল তিনি, তাই তাঁর জীবনীশক্তি প্রবল। এ আশি বছর বয়সেই তিনি তারুণ্য ধরে রেখেছেন। শিশুর মতোই হৃদয় তাঁর। আফজাল হোসেন খুরশীদ আলমকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত। খুরশীদ আলম সময় পেলেই চ্যানেল আইতে এসে আমীরুলের রুমে গিয়ে আড্ডা দেন। জিয়াউল ইসলামের রুমে গিয়ে আড্ডা জমান। কিংবা পিটু বা রাজু আলীমের রুমে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দেন, তাঁর স্মৃতিকথা শোনান। মাঝখানে আমার রুমে একটু এলেন। সিরাজের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করলেন। এক অদ্ভুত আনন্দের রেশ নিয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন। কোনো ধরনের আত্ম অহংকার তাঁর নেই। অসম্ভব বিনয়ী মানুষ তিনি। আমরা চ্যানেল আইয়ের পক্ষ থেকে যখন যা বলি তিনি তা হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করেন। আমাদের আবদার তিনি রক্ষা করেন।
চ্যানেল আইয়ের গান দিয়ে শুরু একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। প্রতি মাসে তিনি এক বা দুবার আসেন, গান করেন। তাঁর সঙ্গে আমাদের সেরাকণ্ঠ কিংবা খুদে গানরাজের ছেলেমেয়েদের গান করতে দিই, তিনি তাদের সঙ্গে বিনয় নিয়ে গান করেন। পিতৃ মমতা দিয়ে গ্রহণ করেন। তাদের সহযোগিতা করেন। আমরা অবাক হই তিনি এ আবেগ স্মৃতি কোথায় পান। তাঁর হৃদয় প্রাণাবেগে ভরপুর। কোনো শিল্পী কোনো সমস্যায় পড়লে দ্বিধাহীন চিত্তে তার বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি গান গাইতে ভালোবাসেন। যে কোনো সময় টেবিলকে তবলা বানিয়ে গান শুরু করেন। উর্দু, হিন্দি, বাংলা গান তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাইতে পারেন। আমরা অবাক হই তাঁর এই প্রতিভায়। তাঁর এ গানের পাগলামির মধ্যে শরিক হয়ে আমরাও আনন্দে ভাসতে থাকি। আমাদের সৌভাগ্য যে খুরশীদ আলমের মতো একজন শিল্পীর সান্নিধ্য আমরা পেয়েছি। তিনি আমাদেরই লোক, আমাদের সঙ্গেই থাকেন। যেখানেই যান না কেন একবার এসে চ্যানেল আইতে আমাদের সঙ্গে দেখা করে যান। আমাদের পরম সৌভাগ্য যে তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করেন, আনন্দ দেন। এত বড় একজন গুণী শিল্পীকে আমরা কিইবা শ্রদ্ধা জানাতে পারি। আজ তাঁর জন্মদিন। তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে ভালোবাসার সঙ্গে মনে করছি। খুরশীদ ভাই আরও দীর্ঘ জীবন লাভ করবেন, কারণ এত অদম্য প্রাণশক্তি যার তাঁর জীবন শেষ হয় না...।