২২ আগস্ট, ২০২২ ০৭:১২

‘ক্ষমতা আমাদের অপ্রয়োজনীয় ও অলস করে দিয়েছে’

অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মিঠু

‘ক্ষমতা আমাদের অপ্রয়োজনীয় ও অলস করে দিয়েছে’

আনিসুর রহমান মিঠু (যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক, কুমিল্লা আওয়ামী লীগ)

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট, আমি তখন কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। বিকালের শেষ দিকে খবর পাই ঢাকায় নেত্রীর সমাবেশে হামলা হয়েছে। সন্ধ্যায় কান্দিরপাড় নজরুল এভিনিউতে কোতয়ালী থানা আওয়ামীগ কার্যালয়ে যাই। সেখানে আমি প্রতিদিন বসতাম তখন। 

অফিসে গিয়ে দেখি শতাধিক ছাত্রলীগ নেতা কর্মী টিভিতে গ্রেনেড হামলার সংবাদ দেখছে। তাদের অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিয়ে বললাম রাস্তায় আসতে।

ছড়িয়ে পরলো উত্তেজনা। ছাত্রলীগের ছেলেরা দৌড়ে গিয়ে লিবার্টি চত্বরে বিএনপি কার্যালয়ে ইট পাটকেল মারতে থাকে। উপস্থিত বিএনপি কর্মীরা দশ মিনিটের মতো সময় টিকে থাকতে পেরেছিলো।

ধীরে ধীরে ছাত্রলীগের সকল পর্যায়ের নেতা কর্মীরা কান্দিরপাড় আসতে শুরু করে। মোগটুলী থেকে কবির শিকদারের নেতৃত্বে একটি বড় মিছিল আসে।এক পর্যায়ে আমরা বিশাল মিছিল করি। সে মিছিলের ভাষায় শৈল্পিকতা ছিলো না।

বিএনপির নেতাদের বিভিন্ন মার্কেট ও দোকান ভাংচুর হয়। কিন্তু আমাদের কর্মীরা মিছিল শেষ করে কেউ ঘরে যেতে চাচ্ছিলো না। পুলিশ রাস্তা ছেড়ে দিয়েছিলো পুরাপুরি। গা ঢাকা দিয়েছিল বিএনপি-জামাতের সকল পর্যায়ের নেতা কর্মীরা।

আমি মোবাইলে ফোন করে জননেতা আফজল খান সাহেবকে কান্দিরপাড় আসতে বলি। জনাব আফজল খান এবং বাহার সাহেব (বর্তমান এমপি) দুজনই তখন বিভিন্ন কারণে দল থেকে অব্যহতি প্রাপ্ত ও বহিষ্কৃত ছিলেন।

আফজল খান সাহেব এবং উনার সন্তানরাসহ তাঁর কর্মীরা সেদিন রাস্তায় উপস্থিত ছিলেন। ইমরান খান দোকান ভাংচুর মামলায় আসামিও হয়েছিলেন। আফজল খান সাহেব এক জ্বালাময়ী বক্তব্য রেখে কর্মীদের শান্ত করার পর, আমরা কর্মীদের বাড়ি পাঠাতে পারি।

এর দু/তিন দিন পর পর্যন্ত প্রতিদিনই মিছিল চলতে থাকে। বিএনপি নেতারা সাবধানে চলাচল করেন সে সময়ে। সরকারি দল হয়েও তারা নিরাপত্তাহীন অবস্থায় পরেছিলেন। পুলিশও রাস্তায় টহল দিতো না।

কিন্তু সেদিনও অনেকে অভিমান করে রাজপথে আসেননি। তাদের চিন্তায় ছিলো আমরা যেনো আন্দোলনে সফল হতে না পারি। কিন্তু অনুপস্থিতদের ছাড়াই আমরা সফল হয়েছিলাম কুমিল্লার মানুষ সাক্ষী।

২১ আগস্টের কিছুদিন পর বিভিন্ন মার্কেট মালিকদের সাথে আমাদের বৈঠক ( আমি ও কবির শিকদারসহ সিনিয়র ছাত্র নেতাদের ) তারা আমাদের কাছে নিরাপত্তা কামনা করেন।

২১ আগস্ট উপলক্ষে বিএনপির করা তাদের অফিস ভাংগা এবং হ্যালো কুমিল্লা নামক মোবাইল দোকান ভাংগার দুইটি মামলা হলেও পুলিশ একজন আসামিকেও গ্রেফতার করার সাহস দেখাননি, কারন বিরোধী দল হলেও আমাদের সাংগঠনিক ভীত ছিলো মজবুত।

এতো বছর পর এখন ২১ আগস্ট উপলক্ষে বিভিন্ন সমাবেশ, অনেক লোক সমাগমাগম দেখে খুবই ভালো লাগছে। তবে এ সকল সমাবেশ থেকে আমাদের আমাদের ভূমিকার কথা কেউ বলে না এটুকুই দুঃখ।

রাজনীতিতে সব সময় একই রকম যায় না। কিন্তু বিরোধী দলের সময়ে মাঠে থাকা শতকরা নব্বই জনই কুমিল্লার রাজনীতিতে কোনঠাসা এটাই দুর্ভাগ্যজনক।

এখন সুদিনে পুলিশ প্রশাসন কিশোর গ্যাং সবই পাশে পাওয়া যায়। এদের সাথে নিয়ে সফলতা দেখানোও সহজ। দুর্দিনে এসব ছাড়াই আমরা সফল ছিলাম।

ক্ষমতা আমাদের অপ্রয়োজনীয় ও অলস করে দিয়েছে, না হয় আমরা কাজ কর্মের লোক ছিলাম। তবে মাঝেমাঝে মনে হয় এই বেশ ভালো আছি। নাহয় আমাদের গায়েও হয়তো কালিমা লাগতো!!!!

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর