১৫ নভেম্বর, ২০২২ ১০:০৮

‌‘এইসব ভাবতে ভাবতে লজ্জায় মাথাটা হেঁট হয়ে যাচ্ছে’

শওগাত আলী সাগর

‌‘এইসব ভাবতে ভাবতে লজ্জায় মাথাটা হেঁট হয়ে যাচ্ছে’

শওগাত আলী সাগর

‘প্রয়াস’ হোটেলের অলিমউদ্দিনকে নিয়ে খবরটি পড়ে লজ্জা এবং অপমানবোধ করলাম। অলিমউদ্দিন খাবারের দোকান দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয় ক্যাম্পাসে, শিক্ষার্থীদের তিনি বাকিতে খাবার খেতে দিয়েছিলেন। সেই শিক্ষার্থীরা বকেয়া টাকা পরিশোধ না করে বিশ্বদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে চলে গেছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আবাসিক হলগুলোকে ঘিরে ছোটো ছোটো অসংখ্য খাবারের দোকান আছে। হলে থেকেছেন আর এইসব দোকানে দুই এক বেলা বাকিতে খাবার খাননি- এমন শিক্ষার্থী কমই পাওয়া যাবে। বাড়ি থেকে টাকা আসতে দেরি হলে কিংবা মাসের টাকা কোনো কারণে আগে ফুরিয়ে গেলে এই সব দোকানে বাকি খাওয়াটা স্বাভাবিক নিয়মেই পরিণত হতে দেখেছি। কম পুঁজির এই দোকানদাররা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এই সুবিধাটা দিয়েছেন। আমানত হলের সামনের শামসুর টং (শুনেছি শামসু আর বেঁচে নেই), আর শাহ আলমের ঢাকা হোটেল ছিলো আমার নির্ভরতার জায়গা। অনেক সময়  টাকা পেতে দেরি হলে দুটি দোকানেই বাকিতে খেয়েছি, শামসু কিংবা শাহ আলম কখনোই খাতায় বাকির কথা লিখতেই চাইতো না।

জমি বেঁচে দেড় লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে ৩৪ বছর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খাবারের দোকান দিয়েছিলো অলিমউদ্দিন। ৩৪ বছর দেশের সর্বোচ্চ একটি বিদ্যাপীঠের ছাত্রদের সহায়তা দিয়ে এখন শূন্য হাতে বাড়ি ফিরে গেছেন তিনি। তার দোকানে বাকিতে খেয়ে সেই টাকা  পরিশোধ না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। তাদের কেউ হয়তো প্রশাসনের বড় কর্তা হয়েছেন, শিক্ষক, সাংবাদিক হয়েছেন, সমাজের গণমান্য ব্যক্তি হয়েছেন। তাদের আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে অলিমউদ্দিন নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কী বিশাল ভূমিকা! 
আচ্ছা, পত্রিকায় অলিমউদ্দিনের খবরটা কী তারা পড়েছেন! তাদের মনের মধ্যে কী অনুতাপ বোধ হচ্ছে! কেউ কী অলিমকে খুঁজে ক্যাম্পাসের বকেয়া টাকাটা ফেরত দেয়ার কথা ভাবছেন! অসংখ্য প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এইসব ভাবতে ভাবতে লজ্জায় মাথাটা হেঁট হয়ে যাচ্ছে।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

লেখক: প্রকাশক ও সম্পাদক, নতুন দেশ ডটকম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর