১৭ জানুয়ারি, ২০১৯ ১২:৫৪

অতিথি পাখিদের কিচির-মিচির কলতানে মুখর পাহাড়

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

অতিথি পাখিদের কিচির-মিচির কলতানে মুখর পাহাড়

রাঙামাটির হ্রদ-পাহাড় এখন মুখরিত অতিথি পাখিদের কিচির-মিচির কলতানে। শীত প্রধান দেশগুলো থেকে এসেছে রং-বেরংয়ের নানা প্রজাতির পাখি। আর এসব পাখির ভিড় জমছে সবুজ পাহাড়ে। 

ভোর হলে কুয়াশার বুক চিরে ডুবো চরে বসে দেশি-বিদেশি পাখির মিলন হাট। শুরু হয় কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জলে পাখিদের খুঁনসুঁটি। কখনো হ্রদের বুকে ডুব সাঁতার, কখনো আবার ঝাঁক বেধে আকাশের নীলে ওড়াওড়ি। আর যখন সন্ধ্যার আকাশে গোধূলির সোনালি রঙ ছড়িয়ে পরে, তখনি শুরু হয় পাখিদের মিছিল। কিচির-মিচির ছন্দের তালে সাঁড়ি বেধে ফিরে যায় পাহাড়, বন ও বাঁশ ঝাড়ের অস্থায়ী নিড়ে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ের দল বেঁধে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি। শীতের প্রকোপ যত বাড়ছে, অতিথি পাখির আগমনও তত বাড়ছে। আর এসব পাখির একটাই ঠিকানা রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদ ঘেষে বেড়ে উঠা বৃক্ষগুলো। শীতের মৌসুমী পাখি আর দেশীয় শালিক-টিয়া ও বাদুরের জন্যে শহরের ডিসি বাংলো এলাকার বৃক্ষগুলো যেন অভয়াশ্রম। বাংলোর পিছনে হ্রদের উপর গাছগুলোতে শত শত অতিথি পাখির কলতানে মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি একাকার হয়ে মিশে গেছে। প্রায় প্রতিদিন ওরা আসছে প্রকৃতির টানে দূর-দূরন্ত থেকে। পাহাড়, বন আর স্বচ্ছ জলধারা অতিথি পাখিকে বেশি আকর্ষণ করে। শীত এলেই রাঙামাটি ডিসি বাংলো এলাকার গাছগুলোতে দেখা মিলে হাজারো অতিথি পাখি। সুদূর সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন শীত প্রধান দেশ থেকে পাহাড়ে এসেছে ফ্লাইফেচার, জলকুট, পর্চাড, জলপিপি, পাতারী, গার্নিগি, পাস্তামূখী, নর্দানপিন্টেলসহ নানা প্রজাতির পাখি। অতিথি পাখীদের সাথে যোগ দিয়েছে দেশীয় সরালি, ডাহুক, পানকৌরি, বক, বালিহাঁস সহ নানা প্রজাতির পাখি। পাখির কলকাকলিতে মুখর এই অভূতপূর্ব সৌন্দয্য উপভোগ করতে ডিসি বাংলো এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন প্রকৃতি প্রেমিরা। 

প্রতিবারের মত এবারও শীতের শুরুতেই পাহাড়ি অঞ্চলে অতিথি পাখি এসেছে চোখে পরার মত।

তথ্য সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র রাঙামাটি শহর এলাকা নয়। অতিথি পাখির দেখা মিলছে জেলার সুবলং, লংগদু, কাট্টলী, মাইনিমুখ, সাজেক, বাঘাইছড়ি, হরিণা, বিলাইছড়ি ও বরকলে। বিভিন্ন দেশ হতে আসা এসব পাখির কলরবে কানায় কানায় ভরে গেছে নদীর তীর ও জলে ভাসা চরগুলো। 

তাছাড়া প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকার ডুব চর ও নদীর পাড়ে যেসব পাখি বেশি দেখা যায় এর মধ্যে রয়েছে- পাতিহাস, ডাহোক, কালাম, বক, ছোট সরালি, বড় সরালি, টিকি হাঁস, মাথা মোটা টিটি, চোখাচোখি, গাং চিল, গাং কবুতর, চ্যাগা ও জল মোরগ, বইধরসহ বিভিন্ন নাম না জানা অনেক পাখি। অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত পাহাড়ি অঞ্চল।

এব্যাপারে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেন, প্রতিবছর উত্তরের শীত প্রধান সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া ও নেপাল থেকে হাজার হাজার অতিথি পাখি এদেশে আসে। এ সময় সাইবেরিয়া ও হিমালয়ের উত্তরে শুরু হয় প্রচণ্ড শীত ও তুষারপাত। তাই ওখানে পাখিরা থাকতে পারে না। নিজেদের বাঁচাতে এরা ডানায় ভর করে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশসহ সংলগ্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চলে আসে। দেশের হাতেগোনা যে কয়েকটি এলাকায় এরা ক্ষণস্থায়ী আবাস গড়ে, তার মধ্যে অন্যতম পার্বত্যাঞ্চল। 

তিনি আরও বলেন, মূলত অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের প্রথম দিকেই রাঙামাটি ডিসি বাংলোর গাছগুলোতে তাদের আসতে দেখা যায়। আবার মার্চের শেষদিকে আবার ফিরে যায় আপন ঠিকানায়। এরা আমাদের দেশের অতিথি। তাদের নিরাপত্তা দেওয়া সবার দায়িত্ব-কর্তব্য। পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রয়েছে। পাখি নিধনের প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনত কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

তাছাড়া পাখি শিকার বন্ধের জন্য সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর