মিশরের কায়রো নগরের রাজপথে মিলিয়ন ডলার খরচে গ্রান্ড স্যালুটের মাধ্যমে হাজার বছর আগের মমিগুলো এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে স্থানান্তর করা হয়েছে।
মিশরের মোট ১৮ জন রাজা ও ৪ জন রানির মমি এই শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। মূলত এই মমিগুলোর বাসস্থান পরিবর্তন করে ৫ কিলোমিটার দূরে নতুন জাদুঘরে নেওয়া হয়েছে। এর নাম ‘ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ইজিপশিয়ান সিভিলাইজেশন।' নতুন জাদুঘরে তাদের পৌঁছে দিতেই এই শোভাযাত্রার আয়োজন। শোভাযাত্রায় শাসনকালের ক্রম অনুযায়ী শাসকদের মমি নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিটি কফিনে বাতাস নিরোধকের ব্যবস্থা ছিল।
মমিগুলো ১৮৮১ থেকে ১৮৯৮ সালের মধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছিল। মিশরে এই মমিগুলোকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে এই শোভাযাত্রা উপলক্ষে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। মমি বহনকারী গাড়িগুলো ঘিরে ছিল আরও কয়েকটি মোটরগাড়ি। মমিগুলোর কনভয় মিশরের জাতীয় জাদুঘর (ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম) থেকে তাহরির স্কয়ার দিয়ে একই শহরের ফুস্তাতে অবস্থিত নতুন জাদুঘরে পৌঁছায়।মমিগুলোকে প্রায় ৩ হাজার বছর আগে ভ্যালি অব কিংস এবং দেইর-এল-বাহরির গোপন মন্দিরে শেষ শয্যায় শায়িত করা হয়েছিল। এর মধ্যে অধিকাংশ মমি খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৩৯ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১০৭৫-এর মধ্যে ‘নতুন সাম্রাজ্য’ শাসনকালের। উনিশ শতকে প্রথম মন্দিরগুলো আবিষ্কৃত হয়।
সাধারণদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ ছিল রাজা দ্বিতীয় রামসেসের মমিকে ঘিরে। প্রায় ৬৭ বছর মিশর শাসন করেছেন এই রাজা। আরেকজন রানি হাতশেপসুত, মিশরের একমাত্র নারী ফারাও। কথিত আছে, তিনি রাজকীয় কার্যক্রমে নারীদের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থান করার ঐতিহ্যকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নকল দাঁড়ি পরতেন। কবর খননের পর তাদের মমি নীল নদে বিশেষ নৌকায় করে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর কিছু মমি কাঁচের বাক্সে ভরে দর্শনার্থীদের দেখার ব্যবস্থা করা হয়। বাকিগুলো আলাদাভাবে সংরক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে রাজা দ্বিতীয় রামেসের মমির কিছু অংশ ১৯৭৬ সালে ফরাসি বিজ্ঞানীরা প্যারিসে নিয়ে গোপন সংরক্ষণাগারে রাখেন। এবারও ২০টি মমি প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে। বাকি দুটিকে গোপনে সংরক্ষণ করা হবে।
প্রাচীন মমি নিয়ে এই বিশাল শোভযাত্রা আয়োজনের মাধ্যমে দেশটির ঝিমিয়ে পড়া পর্যটনে প্রাণ ফিরে পাবে। ২০১১ সালে দীর্ঘ সময়ের একনায়ক হুসনি মোবারকের পতনের জন্য বিখ্যাত তাহরির স্কয়ার থেকে শুরু হওয়া ‘আরব বসন্তের’ পর দেশটির পর্যটন খাত অনেক পিছিয়ে পড়েছে।
মমিগুলোকে নতুন জাদুঘরে আমন্ত্রণ জানাতে হাজির হওয়া মিশরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এক টুইটে লিখেছেন, ‘জাদুকরি দৃশ্যগুলো এই মানুষগুলোর গরিমার প্রমাণ।’
বিডি প্রতিদিন/ অন্তরা কবির