বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ফকীহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমানের ইন্তেকাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ আলেম ও বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্স সেন্টার (মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশ বসুন্ধরা ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা) উপমহাদেশের অন্যতম শীর্ষ মুরব্বি, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ফকীহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান আর নেই।

তিনি গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত মাদ্রাসাতেই ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ... রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৯৬। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। তিনি এক মেয়ে, দুই ছেলে, নাতি-নাতনি ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ফকীহুল মিল্লাতের ইন্তেকালে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, কওমি মঞ্চ ও খাদেমুল ইসলাম বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংগঠন গভীর শোক জানিয়েছে। বাংলাদেশে ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রবর্তক মুফতি আবদুর রহমান জীবদ্দশায় আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ডের দায়িত্বে ছিলেন। আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর বারিধারা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত বড় মসজিদ প্রাঙ্গণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে বসুন্ধরা এন ব্লকে নির্মিতব্য বসুন্ধরা সেন্ট্রাল মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হবে।

ফকীহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমানের ইন্তেকালে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোক বাণীতে তিনি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

হযরত ফকীহুল মিল্লাত দুই শেসন আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০৮ সালে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ডের চেয়ারম্যান মনোনীত হন। দীর্ঘদিন তিনি সেন্ট্রাল শরিয়াহ বোর্ড ইসলামিক ব্যাংকসের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ অলঙ্কৃত করেন। হযরত ফকীহুল মিল্লাত (রহ.) ১৯২০ সালে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানার অন্তর্গত ইমামনগর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মরহুম চাঁন মিয়া। তিনি খুব অল্প বয়সে নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা ও জামিয়া আহলিয়া মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক লেখাপড়া সমাপ্ত করেন। ১৯৫০ সালে দারুল উলুম দেওবন্দে কওমি মাদ্রাসা পাঠ্যক্রমের সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিস কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেন। তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের ইফতা বিভাগের প্রথম ডিগ্রি অর্জনকারী মুফতি।  ফকীহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান ১৯৬২ সালে উত্তরবঙ্গে যান। সেখানে তিনি ওয়াজ-নসিহত, দীনি শিক্ষা-দীক্ষা ও আদর্শ বিস্তারে স্বকীয় গুণে ইসলামী আদর্শ ও শিক্ষার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটাতে সক্ষম হন। তিনি বহু মসজিদ ও মাদ্রাসা, মক্তব ও হেফজখানা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দেশের উত্তরাঞ্চলীয় প্রায় ১৮টি জেলার সহস াধিক দীনি প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত তানযীমুল মাদারিস আদ্বীনিয়্যা বাংলাদেশ (উত্তরবঙ্গ)-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।   ফকীহুল মিল্লাত ১৯৬৮ সালে আল জামিয়া পটিয়ায় প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সেখানে পুরোদমে জামিয়ার বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একাধারে জামিয়ার প্রধান মুফতি, সহকারী মহাপরিচালক ও শিক্ষা বিভাগীয় পরিচালকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দাওরায়ে হাদিসের সর্বোচ্চ কিতাব বুখারি শরিফের প্রথম খণ্ডের পাঠদান করেন। মূলত এই বছরগুলোই আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার কল্পনাতীত উত্থান ও প্রখ্যাত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপায়িত হওয়ার স্বর্ণোজ্জ্বল সময়কাল। আল জামিয়া পটিয়ায় তার এ অবদান উচ্চ প্রশংসিত। মুসলিম উম্মাহকে সুদভিত্তিক অর্থনীতি থেকে রক্ষা করা এবং ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক অর্থনীতিকে সহজ থেকে সহজ উপায়ে পরিচালিত করার মানসে বিভিন্ন কর্মপন্থা তিনি আপন গবেষণা থেকে উপস্থাপন করেন এবং তা বাস্তবায়িতও হয়। এদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের নামে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ১৯৮৩ সালেই স্থাপিত হয়। হযরত ফকীহুল মিল্লাত (দা.বা.) ওই ব্যাংকের প্রথম শরিয়াহ বোর্ডের সদস্য মনোনীত হন। ইসলামী অর্থনীতির ওপর তার গবেষণালব্ধ বহু কর্মপন্থা ও ফতোয়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে তেমনি মুসলিম উম্মাহে সুদভিত্তিক অর্থনীতির বিকল্প হিসেবে একটি শরিয়াহভিত্তিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠায় অনন্য সহায়ক হয়েছে।

আরব বিশ্ব তথা দুবাই, বাহরাইন, কাতার ইত্যাদি রাষ্ট্র এবং ভারত ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে বড় বড় ইসলামী অর্থনৈতিক সেমিনারে তিনি যোগ দিয়েছেন। এসব সেমিনারে ইসলামী অর্থনীতির ওপর তার গবেষণালব্ধ বিভিন্ন প্রবন্ধ খুবই সমাদৃত হয়েছে।

ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিষয়টি এদেশে বহুল চর্চার জন্য নিজ প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরায় তিনিই সর্বপ্রথম ২০০২ সালে ইসলামী অর্থনীতি ও ইসলামী ব্যাংকিং বিভাগ চালু করেন। বিভাগটি এ পর্যন্ত ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিষয়ে ব্যাপক খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থনীতিকে এদেশের আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসা পড়ুয়াদের মধ্যে বিস্তৃতির জন্য বেশ কয়েকবার আন্তর্জাতিক সেমিনারেরও আয়োজন করেন। হযরত ফকীহুল মিল্লাত (দা. বা.) ১৯৯১ সালে তার শায়খ (রহ.)-এর নেক দোয়া ও সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা এবং দেশের বরেণ্য ওলামায়ে কেরামের পরামর্শক্রমে রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি ব্যতিক্রমধর্মী উচ্চ শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মুফতি আবদুর রহমান বাংলাদেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেম। বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার-প্রসারে তার অসামান্য অবদান রয়েছে। হাজারও ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তার পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হয়। তিনি ১৯৯১ সালে রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার নামে উচ্চতর ধর্মীয় গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর