শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

নওগাঁয় দেশের সবচেয়ে বড় চুনাপাথর খনি

নিজস্ব প্রতিবেদক ও নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁয় দেশের সবচেয়ে বড় চুনাপাথর খনি

দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ চুনাপাথরের খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ (জিএসবি) অধিদফতরের অনুসন্ধানে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বিলাসবাড়ী ইউনিয়নের তাজপুর এলাকায় প্রায় ৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত বিশাল এই খনি আবিষ্কৃত হয়। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। প্রতিমন্ত্রী জানান, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে আর বিদেশ থেকে চুনাপাথর আমদানি করতে হবে না। আর সিমেন্টে বহুল ব্যবহূত এ কাঁচামালটি দেশেই পাওয়া যাওয়ায় কমবে সিমেন্ট তৈরির খরচ। আমাদের নওগাঁ প্রতিনিধির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে, ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর তাজপুরে ২ হাজার ২১৪ ফুট গভীরে একটি কূপ খনন করে খনিটির সন্ধান পেয়েছেন। ২০১৪-২০১৫ সালে বগুড়ার সান্তাহার, তিলকপুর, নওগাঁর বদলগাছী ও জয়পুরহাটের আক্কেলপুর এলাকায় জিএসবির এক ভূ-তাত্ত্বিক জরিপে বদলগাছীর তাজপুরে বড় চুনাপাথর খনির সন্ধান পাওয়া যায়। সেই খনির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কাজ করার জন্য একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয় খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি অনুমোদন করে। ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখে শুরু হয় এর খনন কাজ। ২ হাজার ২১৪ ফুট গভীর করে কূপ খননের মাধ্যমে চালানো হয় এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা অভিযান। সর্বশেষ ১৯ এপ্রিল মাটির স্তর পরীক্ষার জন্য জিএসবি ঢাকায় পাঠায়। বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের মহা-পরিচালক ড. নেহাল উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, তাজপুরে মাটির নিচের স্তর তাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহ ও অর্থনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের অনুসন্ধানে ৩০ সদস্যের একটি অনুসন্ধানী টিম কাজ করে যাচ্ছে। সেখানে একটি কূপ খনন করে প্রায় তিন থেকে চার মাস খনিজ সম্পদের অনুসন্ধান চালানো হয় এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। অবশেষে গতকাল মাটির একটি স্তর পরীক্ষার পর ভূপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ২১৪ ফুট গভীরে এই বড় চুনাপাথর খনির সন্ধান পাওয়া যায়। প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, নওগাঁর বদলগাছীতে আবিষ্কৃত চুনাপাথরের খনি এখন পর্যন্ত দেশের বৃহত্তম চুনাপাথরের খনি। এর আবিষ্কারের ফলে বাংলাদেশকে আর চুনাপাথর আমদানি করতে হবে না। এরই মধ্যে মাটির ৬১ ফুট পর্যন্ত খনন করে চুনাপাথর মিলেছে। ড্রিলিং অব্যাহত রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, খনিটি অনেক পুরু হবে। তবে এই খনিজ সম্পদ বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন সম্ভব কিনা তার ফিজিবিলিটি স্টাডি করে দেখা হবে। এটি কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করব। আশা করছি, দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে চুনাপাথর উত্তোলন করা যাবে। তবে এই খনিজ উত্তোলনে আমরা উন্মুক্ত পদ্ধতিতে যাব না। ভূগর্ভ খননের মাধ্যমে তা উত্তোলন করব। এতে এলাকাবাসীর ক্ষয়ক্ষতি কমবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে যত সিমেন্ট কারখানাগুলোর আমদানিকৃত চুনাপাথরের সবটুকু এ খনি থেকে সরবরাহ করা সম্ভব। আশা করছি, লক্ষাধিক কোটির ওপর টাকার চুনাপাথর ব্যবহার করতে পারব। তাজপুর স্তর তাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহ ও অর্থনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের অনুসন্ধান টিমের টিম লিডার জিএসবি’র প্রধান প্রকৌশলী (ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ) মাহিরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তাজপুরে মূল্যবান সম্পদ পাওয়ার জন্য রিক মেশিন দ্বারা মাটির নিচে ২ হাজার ২১৪ ফুট গভীর করে কূপ খননের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। ১৯ এপ্রিল রাতে মাটির একটি স্তর পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। এদিকে চুনাপাথরের খনি আবিষ্কার হওয়ায় নওগাঁয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা। এর আগে ১৯৬৩ সালে জয়পুরহাটে এমন চুনাপাথরের খনি আবিষ্কৃত হয়েছিল। তবে তা বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ দীঘিপাড়া কয়লা খনি আবিষ্কারের পর নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার তাজপুরে চুনাপাথরের খনিজ সম্পদের সন্ধান পাওয়া যায়। বদলগাছী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা অলি আহম্মেদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এখানে খনিজ সম্পদ পাওয়া গেলে এলাকা তথা দেশ পাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। তবে তিনি উত্তোলন কাজ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের যে ক্ষতি হবে তা পুষিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।

সর্বশেষ খবর