শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জেলা জজ ও সচিবদের পদমর্যাদা সমান হলো

আহমেদ আল আমীন

রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) ১৬ নম্বর ক্রমিকে সরকারের সচিবের সঙ্গে অবস্থান করবেন জেলা জজ ও সমমর্যাদার বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাগণ। বর্তমানে জেলা জজের অবস্থান জেলা প্রশাসকের সঙ্গে তালিকার ২৪ নম্বরে। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল নিষ্পত্তি করে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ এ রায় দেয়। গতকাল এই রায় প্রকাশ করে সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইট। ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি এ বিষয়ে রায় দেয় আপিল বিভাগ। গতকাল সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। রায়ে বলা হয়, সংবিধান যেহেতু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন, সেহেতু রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের শুরুতেই সাংবিধানিক পদাধিকারীদের গুরুত্ব অনুসারে রাখতে হবে। অতিরিক্ত জেলা জজ ও সমমর্যাদার বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের রাখতে হবে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের ১৭ নম্বরে। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, প্রধান বিচারপতিকে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের ৩ নম্বর ক্রমিকে স্পিকারের সঙ্গে রাখা উচিত। বর্তমানে প্রধান বিচারপতির অবস্থান ৪ নম্বরে। একইভাবে আপিল বিভাগের বিচারপতিকে তালিকার ৭ নম্বরে এবং আট নম্বরে হাইকোর্টের বিচারপতিদের সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেলকে রাখতে বলা হয়েছে। তালিকার ১২ নম্বরে সংসদ সদস্য, কম্পট্রোলার এবং অডিটর জেনারেল ও ন্যায়পালকে, ১৫ নম্বরে পিএসসি চেয়ারম্যানকে রাখতে বলা হয়েছে। এই অভিমত দিয়ে আদালত আশা প্রকাশ করেছে, সরকার এর আলোকে পদক্ষেপ নেবে। রায়ে বলা হয়, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ, নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও প্রধান বিচারপতি যথাক্রমে এই তিন অঙ্গের প্রধান। এ কারণে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স এমনভাবে তৈরি করতে হবে, রাষ্ট্রের এই তিন অঙ্গের মধ্যকার সমমর্যাদা যেন প্রতিফলিত হয়। রায়ে আদালত অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম তুলে ধরে রায়ে বলা হয়, এসব দেশের সঙ্গে আমাদের দেশের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের পার্থক্য রয়েছে।

প্রধান বিচারপতির অবস্থানের বিষয়ে রায়ে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে স্পিকার ও প্রধান বিচারপতির পদমর্যাদা একসঙ্গে চতুর্থ ক্রমিকে ছিল। তখন দ্বিতীয় ক্রমিকে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও তৃতীয় ক্রমিকে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছিল। পরে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ বিলুপ্ত করা হলে প্রধানমন্ত্রীকে দ্বিতীয় ক্রমিকে রাখা হয়। স্পিকারকে আনা হয় তৃতীয় ক্রমিকে। কিন্তু প্রধান বিচারপতিকে রাখা হয় চতুর্থ ক্রমিকে। এতে প্রধান বিচারপতির পদমর্যাদার অবনমন করা হয়েছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদক্রমে স্বাধীনতা পদক, একুশের পদক এবং মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণের কারণে যেসব মুক্তিযোদ্ধা বীরউত্তম  খেতাব  পেয়েছেন, তাদেরও যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা সমীচীন বলে রায়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়েছে। ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স-এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে একটি রিট দায়ের করেন।

অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে ওই সময় তিনি প্রেষণে ছিলেন কোর্ট অব সেটেলমেন্টের সদস্য। বর্তমানে তিনি শরীয়তপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর জেলা জজদের পদমর্যাদা সচিবদের নিচে দেখানো কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না—তা জানতে চেয়ে রুল দেয় হাইকোর্ট। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি এক রায়ে ৮টি নির্দেশনা দেয় হাইকোর্ট। নির্দেশনা অনুসারে নতুন তালিকা তৈরি করতে সরকারকে ৬০ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আদালত রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের সুযোগ দেয়। শুনানি শেষে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন নিষ্পত্তি করে রায় দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা ছিলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (বর্তমানে প্রধান বিচারপতি), বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। ৬২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি লিখেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন। তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বেঞ্চের অন্য সদস্যরা।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন বিশেষভাবে নিযুক্ত আইনজীবী আবদুর রব চৌধুরী ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। হাইকোর্টে আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, আবদুল মতিন খসরু ও মো. আসাদুজ্জামান।

সর্বশেষ খবর