শিরোনাম
শনিবার, ২৯ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

এরশাদবিহীন জাতীয় পার্টির কী হবে

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

এরশাদবিহীন জাতীয় পার্টির কী হবে

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বার্ধক্যজনিতসহ নানান রোগে ভুগছেন। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে

(সিএমএইচ) ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিই) চিকিৎসাধীন। চলাফেরা অনেক আগেই বন্ধ হয়েছে। হাসপাতালের বরাতে ছোটভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের জানিয়েছেন, এইচ এম এরশাদের গতকাল ৪০ শতাংশ শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ সন্ধ্যায় এইচ এম এরশাদকে হাসপাতালে দেখতে যান। তিনি জানান, ক্রমে সুস্থ হয়ে উঠছেন এরশাদ। এদিকে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়তে পারলেও বার্ধক্যজনিত কারণে পার্টির হাল ধরার অবস্থায় নেই সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। এ অবস্থায় নেতা-কর্মীদের মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, এইচ এম এরশাদের ব্যক্তি ইমেজের ওপর প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির কী হবে। অবশ্য পার্টির সাংগঠনিক কাঠামোকে চাঙ্গা রাখতে গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে ইতিমধ্যেই পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন এরশাদ। তিনিও দলের সাংগঠনিক ভিত্তি সচল রাখতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগোচ্ছেন। নেতা-কর্মীরাও তাকে সহযোগিতা করছেন। জানতে চাইলে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনেকেরই মনে প্রশ্ন এইচ এম এরশাদের অবর্তমানে জাতীয় পার্টি কীভাবে চলবে। আমার মত, এইচ এম এরশাদের নির্দেশিত পথে পার্টির প্রতিটি নেতা-কর্মীর মতামতের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিকভাবে চলবে জাতীয় পার্টি। তিনি বলেন, এইচ এম এরশাদ আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি সাবেক এই রাষ্ট্রপতির দেওয়া দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার। ভবিষ্যতে পার্টির নেতা-কর্মীরা যতদিন চাইবেন ততদিনই আমি এই দায়িত্ব পালন করব।  জানা যায়, জি এম কাদেরকে এই দায়িত্ব দেওয়ার পরপরই পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ নিষ্ক্রিয় রয়েছে। দলকে সহযোগিতা না করে নানাভাবে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন তারা। কিছু নেতার অসহযোগিতা ভালো চোখে দেখছেন না মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও। পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, এরশাদের ব্যক্তি ইমেজের ওপর ভিত্তি করে দলটি দাঁড়িয়েছে। আমরা এখন তার দিকেই তাকিয়ে আছি। সাবেক এই রাষ্ট্রপতির শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করছি না। আমরা চাই এইচ এম এরশাদ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে আবার লাঙ্গলের হাল ধরবেন। পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, জাতীয় পার্টি অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ এই পর্যায়ে এসেছে। আমি বিশ্বাস করি দলটি যে কোনো পরিস্থিতিতে স্বকীয়তা নিয়ে অবশ্যই টিকে থাকবে। দলের প্রাণ কর্মী-সমর্থকরাই পার্টিকে বাঁচিয়ে রাখবে। এদিকে গত সপ্তাহে টানা চার দিন বিভাগীয় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ শুনেছেন পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। অনুপস্থিত জেলা নেতারা যৌক্তিক কারণ না দর্শাতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুন বলেন,  টানা চার দিনের কর্মসূচি জাতীয় পার্টির ইতিহাসে প্রথম হয়েছে। নেতা-কর্মীরা যেসব অভিযোগ করেছেন তা আমলে নিয়ে কাজ করতে পারলে জিএম কাদের দলের হাল ভালোভাবেই ধরতে পারবেন। আমরা আশা করছি, আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়ার মধ্যদিয়ে জাতীয় পার্টির এই কর্মসূচি শেষ হবে। মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বলছেন, এরশাদের নির্দেশ মানেই জাতীয় পার্টির নির্দেশ। এটা মানতে সবাই বাধ্য। যারা মানবে না, তারা দলের শুধুই সুবিধাভোগী। তারা দল ছাড়লেও কোনো ক্ষতি হবে না, বরং পার্টির জন্য ভালোই হবে। এদিকে জাতীয় পার্টির কয়েকজন এমপি বরাবরই বলে থাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই তাদের সংসদে এনেছেন। প্রধানমন্ত্রীও নির্বাচনের সময় মহাজোটের সমাবেশে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের নৌকায় তুলে নেবেন বলে জানিয়েছেন। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, এরশাদের অবর্তমানে জাতীয় পার্টির কী হবে?

সর্বশেষ খবর