সুমন আহমেদ পেশায় বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা। এ বছরের ২৫ জুন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সুস্থ হওয়ায় ৫ জুলাই হাসপাতাল তাকে ছাড়পত্র দেয়। পরবর্তীতে ১৪ জুলাই পুনরায় জ্বর আসায় ওই হাসপাতালে নিয়ে এলে দেখা যায় তিনি আবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এবার জ্বরের সঙ্গে নাক-মুখ দিয়ে রক্ত আসছে। টেস্টে আবারও ডেঙ্গু টেস্ট পজেটিভ হয়েছে।
সুমন আহমেদের ছোট ভাই রিয়াজ আহমেদ বলেন, এর আগে চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যাই ভাইকে। ১০ দিন পার না হতেই আবার জ্বরের সঙ্গে নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হওয়া শুরু হয়। টেস্টে রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক জানিয়েছেন প্রথমবার ডেঙ্গুর এক ধরনের সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এবার আরেক সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, এ বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এরকম তিনজন রোগী আমার কাছে চিকিৎসা নিয়েছে। এ ধরনের রোগীর ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই রোগী ও স্বজনদের সতর্ক থাকতে হবে। তবে ডেঙ্গু রোগী কমাতে চাইলে মশক নিধনের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নাই। তিনি আরও বলেন, হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মশার বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। জমাট বাঁধা পানিতে মশা লার্ভা ছাড়ার সুযোগ পায়। মশার উৎস ধ্বংসে জোর দিতে হবে। ডেঙ্গু রোগী আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে তবে যে কোনো সময় বাড়তে পারে।
গত ১৮ জুলাই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মাহবুবা ইয়াসমিন (২২)। সাত দিন পরে সুস্থ হওয়ায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয় তাকে। এর ১২ দিন পার হতেই আবার জ্বর আসতে শুরু করে মাহবুবার। এভাবে এক দিন পার হতেই তীব্র জ্বরের সঙ্গে শুরু হয় বমি। পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে তার ডেঙ্গু জ্বরের প্রয়োজনীয় টেস্ট করতে বলে। মাহবুবার বাবা মহিবুল হোসেন বলেন, টেস্টের রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক জানিয়েছেন মাহবুবা প্রথমবার ডেঙ্গুর এক সেরোটাইপে আক্রান্ত হয়েছেন। পরেরবার অন্য সেরোটাইপে আক্রান্ত হয়েছেন। এক সময় প্লাটিলেট এবং প্রেসার নামতে থাকলে আইসিইউতে নিতে হয় মাহবুবাকে। দুই দিন আইসিইউতে রাখার পরে কিছুটা উন্নতি হওয়ায় পরবর্তীতে ওয়ার্ডে দেওয়া হয়।
সারা দেশে প্রতিদিন নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। এর মধ্যেই রাজধানী দাপিয়ে বেড়ানো এডিসের ‘এজিপটাই’ মশার লার্ভা পড়ছে দেশের বেশ কিছু জেলায়।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৫৯৭ জন : স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৯৭ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৭৬১ জন এবং অন্য বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩৬ জন। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে গিয়াসউদ্দিন (৪০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভোর সাড়ে ৬টায় মারা যান তিনি। তার বাড়ি চাঁদপুরে। এ ছাড়া বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) আরও এক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃতের নাম মো. মনির হোসেন (৩৪)। তার বাড়ি বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার রুকুন্দি গ্রামে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অভিযান : গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড থেকে ১১৩ নম্বর সড়ক পর্যন্ত এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসকরণ ও বিশেষ পরিচ্ছন্নতায় চিরুনি অভিযান চালানো হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত : লার্ভা নিধনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে চলমান ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ১১৮টি বাড়ি পরিদর্শন করা হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও খবর-
বরিশাল : বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) আরও এক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃতের নাম মো. মনির হোসেন (৩৪)।
বরগুনা : বরগুনায় ৮ জুলাই থেকে ২২ আগস্ট বেলা ১০টা পর্যন্ত ২৬৪ জন ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগী বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল, আমতলী, বেতাগী ও পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে চিকিৎসা শেষে গতকাল বেলা ১০টা পর্যন্ত ২৩১ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৪ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় ৪৯০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে।
কুমিল্লা : গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ২৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন। এ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৯২০ জন রোগী ভর্তি হলেও বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছে ৭৩ জন। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন ৮৪৭ জন।
সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আলমগীর গাজী (১৪) নামের এক মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকাল ৫টার সময় খুলনার গাজী মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার শ্রীকলা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
বগুড়া : বগুড়ায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। বগুড়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ জন জেঙ্গুজ¦রে নতুন করে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে।