বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

একনেকে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১১ হাজার ৪৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকার খরচ করবে ৮ হাজার ২৭১ কোটি ২৩ লাখ, বিদেশি অনুদান ২৬৭ কোটি ১১ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণ ২ হাজার ৯২৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন,            প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণাঞ্চলে আরও একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কথা চিন্তা করছেন। সেই সঙ্গে নদীগুলোকে নিয়মিত খননের আওতায় আনা, বেসরকারি মেরিন একাডেমিগুলোর শিক্ষার মান বাড়ানো এবং দেশের মহাসড়কগুলোতে টোল ব্যবস্থা চালু করার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন নির্দেশনার কথা জানান।

দক্ষিণে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার চিন্তা : পাবনার রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চিন্তা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনার কথা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন, আমরা তো রূপপুরে ভালোই এগোচ্ছি। রূপপুর থেকে আমরা অনেক পাব। তিনি ভাবছেন বা তার চিন্তাতেই আছে, দক্ষিণাঞ্চলে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে। ঠিক কোন জায়গায় হবে, তা বলেননি। হয়তো তার মাথায় আছে। দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি পারমাণবিক প্রকল্প তার মাথায় ঘুরছে। তার মাথায় যেটা ঘোরে, অবশ্যই শিগগিরই এর কাজে নামবেন তিনি।’ মন্ত্রী বলেন, সড়কে টোল আদায়ের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সড়ক থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে টোল আদায় করা হবে। নদীগুলোকে নিয়মিত খননের আওতায় রাখার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের প্রতিটি বিভাগে পর্যায়ক্রমে একটি করে মেরিন একাডেমি স্থাপন করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, ‘কিছু বেসরকারি খাতে মেরিন একাডেমি করা হয়েছে। এগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। এগুলোকে জোরালোভাবে রেগুলেটরির আওতায় আনুন।’ চট্টগ্রামে একটি মেরিন বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে। এর আওতায় মেরিন একাডেমিকে আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতের মেরিন একাডেমিগুলোর মানোন্নয়নের ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি।”

 

একনেকে ১০ প্রকল্প অনুমোদন : একনেক সভায় অনুমোদিত মোট ১০টি প্রকল্পের মধ্যে দুটি সংশোধিত। এর মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশে চারটি মেরিন একাডেমি স্থাপন (পাবনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর) (তৃতীয় সংশোধন)’ প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধন এবং অর্থ বিভাগের ৩ হাজার ৭১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইআইপি)’ প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন আনা হয়েছে। নতুন অনুমোদিত আটটি প্রকল্পের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ৭২৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘কিশোরগঞ্জ (বিন্নাটি) পাকুন্দিয়া-মির্জাপুর-টোক জেলা মহাসড়ককে যথাযথ মানে উন্নীতকরণ’ প্রকল্প ও ৩৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ঢাকা-আরিচা-মহাসড়কের আমিনবাজার, সালেহপুর ও নয়ারহাট নাম স্থানে তিনটি সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ১ হাজার ৭১০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পারমাণবিক নিরাপত্তা তদারকীকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিউক্লিয়ার রেগুলেটরি ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়ন’ প্রকল্প; বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ১ হাজার ৭৬১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১’ প্রকল্প; কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২৫০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে বৃহত্তম রংপুর জেলার সেচ সম্প্রসারণ’ প্রকল্প; স্থানীয় সরকার বিভাগের ১ হাজার ৭২৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি প্রকল্প-৩ (আরইআরএমপি-৩)’ প্রকল্প; পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৫৫৭ কোটি ব্যয়ে ‘শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার পদ্মা শাখানদীর ডান তীরের ভাঙন হতে নওয়াপাড়া এলাকা এবং পদ্মা নদীর বাম তীরের ভাঙন হতে চরআত্রা এলাকা রক্ষা’ প্রকল্প এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ৬৩২ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর-এ পানি শোধনাগার ও গভীর নলকূপ স্থাপন’ প্রকল্প।

‘১০ বছরে শুমারিতে খরচ বেড়েছে অনেক’ : যে কোনো প্রকল্পেরই খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে। সে হিসেবে ১০ বছর আগের শুমারি খরচের সঙ্গে এখনকার খরচের অনেক পার্থক্য আছে বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। গণনাকারীর সংখ্যা, তাদের পারিশ্রমিকসহ নানা খরচ বেড়েছে বলেও জানান তিনি। ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পরিসংখ্যান ব্যুরোর খরচ নিয়ে খোদ পরিকল্পনামন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন। এর পরই খরচ অর্ধেকে নামিয়ে এনে নতুন প্রস্তাব দেওয়া হয়। একনেক বৈঠক শেষে সে প্রসঙ্গেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। মন্ত্রী জানান, ১০ বছর আগের শুমারি খরচ আর এখনকার খরচ এক নয়। এই সময়ে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। আগে গণনাকারী ছিল ৩ লাখ ৭৬ হাজার। এখন তাদের সংখ্যা ৫ লাখ ৬ হাজার। তাদের পারিশ্রমিকও চারগুণ বেড়েছে। উপজেলা পর্যায়ে গণনাকারীদের মোটরসাইকেল দেওয়া হবে। এ ছাড়া জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মকর্তাদের গাড়িও আছে। এর খরচ প্রয়োজন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর