শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

নজরদারিতে ১০০ কাউন্সিলর প্রার্থী

সাখাওয়াত কাওসার

নজরদারিতে ১০০ কাউন্সিলর প্রার্থী

আসন্ন সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের শতাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী নজরদারিতে। অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রতিপক্ষকে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন ভোটের মাঠে। তবে নির্বিঘœ প্রচারণা ও অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে এরই মধ্যে এসব প্রার্থীকে ডেকে সতর্ক করেছে পুলিশ। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরের ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে দুই দফা সংঘর্ষ ঘটায় নড়েচড়ে বসেছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।

দুই সিটি করপোরেশনের অন্তত ২০ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা প্রতিনিয়ত প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীদের হুমকি-ধমকির মধ্যে রয়েছেন। প্রভাবশালী কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনুগত সন্ত্রাসীরা এতে সম্পৃক্ত। অভিযোগ পেয়ে ৫৭৪ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে শতাধিক প্রার্থীকে ডেকে সতর্ক করেছে পুলিশ। এ কারণে ডিএমপির প্রতিটি বিভাগে আলাদা টিম গঠন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ভোটের দিন পর্যন্ত তাদেরকে বিশেষ নজরদারির মধ্যে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে। পুলিশ যাদের সতর্ক করেছে, তার মধ্যে মতিঝিল বিভাগের ১৭, ওয়ারীর ১৫, রমনার ১৮, মিরপুরের ২১, উত্তরার ১৯, লালবাগের ১৪ জন রয়েছেন। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে সক্রিয় এলিট ফোর্স র‌্যাবও। পোশাকি টহলের পাশাপাশি  চলছে গোয়েন্দা কার্যক্রম। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল (অপারেশন) তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে আমরা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে কাজ করে যাচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে র‌্যাবের প্রত্যেক সদস্য প্রস্তুত। যেখানে মনে হবে বেশি ফোর্স রাখা উচিত সেখানেই অতিরিক্ত ফোর্স পাঠানো হবে। প্রতিটি মুহূর্ত আমরা মনিটরিং করছি।’ সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছেন, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে বিশেষ বৈঠকে র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার উত্থাপিত বিভিন্ন তথ্যের মধ্যে ছিলÑ দুই সিটি করপোরেশনের ৫৩ জন কাউন্সিলর নামে বিরুদ্ধে ১৫ থেকে ২০টি করে মামলা রয়েছে। ভবিষ্যতে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা যাতে প্রার্থী হতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব তোলা হয়। তবে নির্বাচন কমিশনের সম্মতি ছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ার নির্দেশ এসেছে নির্বাচন কমিশন থেকে। জানা গেছে, দলীয় প্রভাবশালী কাউন্সিলর প্রার্থীদের হয়ে এলাকায় নীরবে ভোটের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে কয়েক শ সন্ত্রাসী। তাদের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত ও কারাবন্দী অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছে। অনেক ওয়ার্ডে দল মনোনীত প্রার্থীর ওপর নানা চাপ অব্যাহত রেখেছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। তাদের কাউকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার নানা চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে। এসব ঘটনায় প্রার্থীদের অনেকেই সংশ্লিষ্ট থানায় মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ দিচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন থেকে অনেক প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছে। তবু তারা ক্ষান্ত হননি বলে অভিযোগ রয়েছে। ডিএমপির আটটি ক্রাইম ডিভিশনের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রার্থীদের দোরে দোরে গিয়ে নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে অনুরোধ জানাচ্ছে পুলিশ। সেই সঙ্গে কোনো প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার তথ্য পেলেই তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হচ্ছে। সূত্র বলছেন, অভিযুক্ত প্রভাবশালী প্রার্থীদের পক্ষ হয়ে হাসান উদ্দীন জামাল, সোহরাব হোসেন স্বপন, সরোয়ার হোসেন মনা, জাকির হোসেন, খায়রুল, উজ্জ্বল ও রিমন, স্বপন, মুরসালিন, মনির হোসেন, মনা, রানা, মোল্লা মো. আবু কাউসার, সারওয়ার হোসেন বাবু, জামান, মাকসুদ, আনিসুর রহমান, ওমর ফারুক, গোফরান গাজীসহ শতাধিক সদস্য কাজ করছেন। এর মধ্যে মতিঝিলের শাহজাহানপুরের অঙ্কুর, রিভি, রাজু, আজাহার, বাবু, জহির। এ ছাড়া পল্টনের হাবিবুল্লাহ, সুমন, সৈকত, আলাউদ্দিন, লিটন, ইরামিন ও কাজী, তুহিন মুন্সি, নবীর হোসেন শিকদার ও সাইফুল ইসলাম। বি এম ফরহাদ অঙ্কুর, আরিফুল ইসলাম লাবলু, রামপুরার আলোচিত ট্রিপল মার্ডার মামলার আসামি রইছ, শাহাদাত হোসেন, কবির হোসেন, শাহজাহানপুরের পোলট্রি রিপন, সেলিম, রিভি, রামপুরার রনি, মগবাজারের সজীব, আজহার বাবুসহ আরও অনেকে। এর মধ্যে মতিঝিল, শাহজাহানপুর, খিলগাঁওয়ের ভোটের মাঠে অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করছেন হত্যা মামলার পরোয়ানা নিয়ে কানাডা থেকে দেশে ফেরা সোহেল। সোহেলের বিরুদ্ধে এর আগে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে ছাত্রলীগের এক নেতাকে পায়ে গুলি করে হত্যাচেষ্টার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতাকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এভাবে নির্বাচনের মাঠে প্রভাব বিস্তার করতে শতাধিক অস্ত্রধারী ক্যাডার সক্রিয় রয়েছে। তাদের কাছে রয়েছে ভয়ঙ্কর একে-২২সহ বিপুল পরিমাণ ক্ষুদ্র অস্ত্র। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এসব ক্যাডার বাহিনীর তালিকা করে ধরার চেষ্টা করছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ ওরফে ক্যাসিনো সাঈদের ডান হাত হাসান উদ্দীন জামাল এরই মধ্যে এলাকায় সাঈদের স্ত্রী ফারহানা আক্তার বৈশাখীর হয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে কৌশলে তিনি তার কিছু ক্যাডারকে আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী মোজাম্মেল হকের পক্ষেও দিয়েছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. হোসেন ও রতনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটেছে। লালবাগের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড নিয়েও উদ্বিগ্ন সময় পার করছেন লালবাগ বিভাগের পুলিশ সদস্যরা। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) আবদুল বাতেন বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে ডিএমপি। এজন্য অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে আন্ডারওয়ার্ল্ডের তৎপরতার বিষয়টি ও সন্ত্রাসী চক্রের হাতে কী পরিমাণ অস্ত্র আছে তার খোঁজ চলছে। আগে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের অনেক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো যেসব অস্ত্র উদ্ধার হয়নি, অপরাধী গ্রেফতার হয়নি তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

সর্বশেষ খবর