সোমবার, ৯ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত

আক্রান্ত একজন নারী, দুজন পুরুষ এসেছেন ইতালি থেকে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাতিল

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাংলাদেশে প্রথমবার তিনজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। তিনজনের মধ্যে একজন নারী ও দুজন পুরুষ। এই দুজন পুরুষ সম্প্রতি ইতালি থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। আক্রান্তদের দুজনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ ও একজনের মাদারীপুর। তাদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। আক্রান্ত একজনকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এবং দুজনকে উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে আলাদা কক্ষে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আরও দুই ব্যক্তিকে সন্দেহজনক হিসেবে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে।

গতকাল বিকালে রাজধানীর মহাখালীর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ  সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ইতালি থেকে আসা দুজন ভিন্ন পরিবারের সদস্য। তবে তাদের একজন বাসায় আসার পর ওই বাসার এক নারী আক্রান্ত হয়েছেন। জ্বর ও কাশি নিয়ে এই তিন ব্যক্তি শনিবার আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগ করেন। এরপর গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় তারা পজিটিভ প্রমাণিত হন। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তিনজন আক্রান্ত হয়েছে। এতে করে সারা বাংলাদেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে এমন কিছু বলা যাবে না। স্কুল-কলেজ বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। জনসমাগমের মধ্যে না যেতে পরামর্শ দেব। বাসায় থাকাই ভালো। গণপরিবহন ইত্যাদি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেব। প্রত্যেকের মাস্ক পরে ঘুরে বেড়ানোর কোনো দরকার নেই। আক্রান্ত রোগী ও রোগীকে যিনি সেবা দেবেন শুধু তারাই মাস্ক পরবেন।’ করণীয় বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া ও শিষ্টাচার মেনে কাশি বা হাঁচি দেওয়ার (হাঁচি বা কাশির সময় রুমাল দিয়ে মুখ ঢাকা) বিকল্প নেই। এ জন্য গণমাধ্যমসহ দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া আছে। তবে আমরা সব সময় বলেছি, প্রস্তুতির কোনো শেষ নেই। আমরা সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে করোনো রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট করেছি। এখন আইসোলেশনের জন্য আলাদা হাসপাতাল খুঁজে দেখা হচ্ছে, যেন শুধু করোনা রোগীদের সেই হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়। ঢাকার বাইরেও এমন হাসপাতাল খুঁজে দেখা হচ্ছে। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে যদি রোগী আরও বৃদ্ধি পায়, আমরা আশঙ্কা করছি না এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে, কিন্তু যদি রোগী আরও বৃদ্ধি পায়, স্কুল, কলেজ বা কমিউনিটি সেন্টারে যদি হাসপাতাল করার প্রয়োজন হয়, সেই পরিকল্পনা আমাদের নেওয়া আছে।’ তবে সেব্রিনা বলেন, ‘আশঙ্কা করছি না আরও ছড়িয়ে পড়বে।’ আইইডিসিআরের সংবাদ সম্মেলনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। পরে নারী দিবসের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের পর্যাপ্ত সক্ষমতা রয়েছে। সরকার ২৪ ঘণ্টা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। যে কোনো জায়গায় সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তবে সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। এখানে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু নেই।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, সব শেষ তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের ১০৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬ হাজার ১৯৫ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৬০ হাজার ১৯০ জন। আর মারা গেছেন ৩ হাজার ৬০০ জন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। একপর্যায়ে এ ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি (হেলথ ইমারজেন্সি) ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

করোনা মোকাবিলায় চার স্তরের পরিকল্পনা : স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, ‘করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে আমরা চারটি লেভেলে ভাগ করেছি। লেভেল-১-কে অ্যালার্ট লেভেল বলছি। লেভেল-২, যখন কোনো করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাবে, তখন আমাদের কী করতে হবে। কোন পরিকল্পনায় এগোতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। লেভেল-৩, যদি করোনাভাইরাস ব্যাপক আকারে দেশে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে আমাদের কী করণীয়। লেভেল-৪, সার্বিক পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করব সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ গতকাল সকালে রাজধানীর মহাখালীতে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সাসাকাওয়া মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, বিশ্বে ৩ থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। গত ১৯ দিনে এ রোগীর সংখ্যা ১০ গুণ বেড়েছে। ইতালিতে কয়েক দিনে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। কালাম আজাদ বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাস নিয়ে আমাদের প্রস্তুতিও রয়েছে। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

৬ দেশ থেকে আসা যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনে থাকতেই হবে : করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ছয়টি দেশ থেকে বাংলাদেশে আসা যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনে থাকতেই হবে। দেশগুলো হচ্ছে চীন, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ইরান ও থাইল্যান্ড। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহারিয়ার সাজ্জাদ গতকাল এ কথা জানান। এই কর্মকর্তা বলেন, এ ছয়টি দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানারে পরীক্ষা করা হচ্ছে। স্ক্যানার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। একই সঙ্গে অবতরণের পর ‘হেলথ ডিক্লারেশন’ ফরম  দেওয়া হচ্ছে, এখানে তাদের শারীরিক বিষয়সহ বিভিন্ন তথ্য পূরণ করতে হবে। স্বাস্থ্য তথ্য কার্ড  দেওয়া হচ্ছে। এদের শরীরে জ্বর না থাকলেও তাদের বাধ্যতামূলকভাবে নিজ বাড়িতে বা তারা যেখানে থাকবেন,  সেখানে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তবে বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় যদি যাত্রীর শরীরে তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা এর বেশি তাপমাত্রা থাকে, তাহলে তাকে সরাসরি কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে।

জেলা সদরের হাসপাতালে নির্ধারিত বেড : রংপুর স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, প্রতিটি জেলা সদরের হাসপাতালে পাঁচটি করে বেড খালি রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহজনক কাউকে পাওয়া গেলে তাকে সেখানে পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা দেওয়া হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগ বাংলাবান্ধা, হিলি, বুড়িমারীসহ স্থলবন্দরগুলোতে বিশেষ টিম প্রস্তুত রেখেছে। সন্দেহভাজন কাউকে পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়েছেন রংপুর স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক।

আক্রান্তদের দ্রুত আলাদা করার অনুরোধ চীনা দূতাবাসের : করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের এবং আক্রান্তদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ হওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত আলাদা করার অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের ডেপুটি চিফ অব মিশন হুয়ালং ইয়ান। গতকাল ফেসবুক পেজে এক প্রতিক্রিয়ায় এ অনুরোধ করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি করোনাভাইরাস সংক্রমণ (কভিড-১৯) থেকে নিরাপদ থাকতে জনসমাবেশ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন।

অবিশ্বস্ত তথ্য শেয়ার না করার আহ্বান : করোনাভাইরাস নিয়ে অবিশ্বস্ত বা যাচাই করা হয়নি এমন উৎস থেকে তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ। একই সঙ্গে বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল ইউনিসেফ ঢাকা ও নিউইয়র্ক অফিস থেকে যৌথভাবে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সিলেটের সেই প্রবাসী করোনাভাইরাসমুক্ত : সিলেটের শহীদ শামসুদ্দীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুবাইফেরত যুবকের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। গতকাল ঢাকার আইইডিসিআর থেকে তার রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট সিলেটে পৌঁছায়। পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডা. মো. ইউনুছুর রহমান। ওই রোগী জ¦র-সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো স্বাভাবিক রোগে ভুগছিলেন। এ কারণে ওসমানী থেকে তাকে শহীদ শামসুদ্দীন হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইনে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু রক্ত পরীক্ষার ফল ‘নেগেটিভ’ হওয়ায় তিনি এখন পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত। তাকে হাসপাতালে সাধারণ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যে তার বিদ্যমান অসুখের চিকিৎসা দিয়ে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।

উত্তরা ইপিজেডের উৎপাদন ব্যাহতের শঙ্কা : করোনাভাইরাস ছড়ানোয় বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ও উত্তরা ইপিজেডের প্রায় ৮০০ চীনা শ্রমিক নিজ দেশে অবস্থান করা পরিবার-পরিজন নিয়ে রয়েছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। বড়পুকুরিয়ায় উৎপাদন ব্যাহত না হলেও উত্তরা ইপিজেডে চীনা শ্রমিক সংকটে কিছুটা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। উত্তরা ইপিজেড ও বড়পুকুরিয়া খনি সূত্রে জানা গেছে, নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে প্রায় ৪৫০ চীনা নাগরিক কাজ করছেন। এর মধ্যে ৭০ জনের মতো নিজ দেশ চীনে চলে গেছেন। বাংলাদেশে প্রবেশে কড়াকড়ি থাকায় তারা আসতে পারছেন না। ফলে চীনের নাগরিকদের পদগুলো শূন্য রয়েছে। পদ শূন্য থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছেন ইপিজেডের কর্মকর্তারা। ইপিজেড সূত্র জানায়, বর্তমানে সেখানে কর্মরত চীনা শ্রমিকদের অনেকের পরিবারই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে তারা খবর পেয়েছেন। তাই পরিবার-পরিজনের জন্য তারা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে কাজ করছেন। করোনাভাইরাসের কারণে অনেক চীনা নাগরিক লজ্জিত। পারতপক্ষে তারা অন্যদের সঙ্গ এড়িয়ে চলছেন।

কর্ণফুলী টানেলের কাজ বিঘেœর আশঙ্কা : সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পে চীনের ২৯৩ জন নাগরিক কর্মরত আছেন। এর মধ্যে ৭২ জন নববর্ষের ছুটিতে চীনে গিয়েছিলেন। ছুটি শেষে ৪৫ জন ফিরে আসেন। এর মধ্যে ২৮ জনের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন সম্পন্ন হয়েছে এবং তারা কাজে যোগ দিয়েছেন। বাকি ১৭ জন এখনো কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এটুকু বলা যায়, চীনের নাগরিক যারা টানেল প্রকল্পে কর্মরত আছেন, তাদের জন্য এখন পর্যন্ত টানেলের নির্মাণকাজে কোনো ক্ষতি হয়নি বা সময়ক্ষেপণ হয়নি। কাজ যথারীতি এগিয়ে চলেছে। কিন্তু করোনাভাইরাস দীর্ঘায়িত হলে বা বিলম্বিত হলে তখন ব্যাপারটা অন্যদিকে কিছুটা মোড় নিতে পারে। এর পরও পদ্মা সেতুতে যতটা বিলম্ব হতে পারে, কর্ণফুলী টানেলে ততটা নাও হতে পারে। কারণ এখানে কর্মরত চীনা নাগরিকের সংখ্যা খুব বেশি নয়। মাত্র কয়েকজন কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এ জন্য কাজের তেমন কোনো বিঘœ ঘটবে না।’ গতকাল চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গায় নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল (কর্ণফুলী টানেল) পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

নিষেধাজ্ঞা জারি করল অরুণাচল প্রদেশ : নভেল করোনাভাইরাস ঠেকাতে এবার নড়েচড়ে বসল ভারতের অরুণাচল প্রদেশ রাজ্য প্রশাসন। সিকিমের পর অরুণাচল প্রদেশ রাজ্য সরকারও বিদেশি পর্যটকদের প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। শীতের সময় বিদেশ থেকে ভারতে ভ্রমণ করতে আসা বহু পর্যটকই পাহাড়ে বেড়াতে যান। কিন্তু এ মুহূর্তে ভারতে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫। তাই এই মরণ ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতেই আগাম সাবধানতা অবলম্বন করে অরুণাচল প্রদেশ সরকার ওই রাজ্যে ভ্রমণ করতে আসা বিদেশি পর্যটকদের ‘প্রটেকটেড এরিয়া পারমিটস’ (পিএপি) দেওয়া সাময়িকভাবে স্থগিত রাখল। 

ইতালিতে বন্ধ সিনেমা হল, জাদুঘর : করোনাভাইরাস ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপের দেশ ইতালিতে। আর এর জেরে দেশটির জাদুঘর, সিনেমা হল, থিয়েটার মঞ্চ বা যেখানে লোকসমাগম হয়, সেসব স্থান বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। গতকাল ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিওসেপ্পে কোনটের স্বাক্ষর করা এই নির্দেশ জারি করা হয়।

বিশ্ব পরিস্থিতি : বিশ্বব্যাপী ১০৩টি দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬ হাজার ১৯৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬০০ জনে। এ ছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৬০ হাজার ১৯০ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। শুধু চীনের মূল ভূখন্ডেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৬৯৬ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৯৭ জনের। চীনের পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ১৩৪ এবং মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ইতালিতে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৮৮৩ এবং মৃত্যু হয়েছে ২৩৩ জনের। অন্যদিকে ইরানে এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৮২৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১৪৫ জন। জাপানে নোঙর করা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ৬৯৬ যাত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের। জার্মানিতে এই ভাইরাসে ৮০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ফ্রান্সে ৯৪৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ১৬ জন। জাপানে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের। স্পেনে আক্রান্ত ৫২৫ এবং মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ৪৩৮, মৃত্যু ১৯। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত হয়েছেন ২৬৮ জন এবং মারা গেছেন একজন। যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ২০৯, মৃত্যু ২। ইরাকে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ জন, মৃত্যু হয়েছে চারজনের। নেদারল্যান্ডসে ১২৮ জন এবং মৃত্যু ১। অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্ত ৭৭, মৃত্যু ৩। থাইল্যান্ডে আক্রান্ত ৫০ এবং মৃত্যু ১। তাইওয়ানে আক্রান্ত ৪৫ এবং মৃত্যু ১। সান মারিনোতে ২৬ জন আক্রান্ত এবং মৃত্যু ১। ফিলিপাইনে ৬ এবং মৃত্যু ১। ভারতে ৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তবে দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর প্রাণহানি ঘটেনি। এ ছাড়া সুইডেনে আক্রান্ত ১৬১, সিঙ্গাপুরে ১৩৮, নরওয়েতে ১২৭, বেলজিয়ামে ১০৯, হংকংয়ে ১০৮, মালয়েশিয়ায় ৯৩, অস্ট্রিয়ায় ৮১, বাহরাইনে ৮৫, কুয়েতে ৬১, কানাডায় ৬০, গ্রিসে ৬৬, আমিরাতে ৪৫, আইসল্যান্ডে ৫০, ডেনমার্কে ২৭, লেবাননে ২৮, ইসরায়েলে ২৫, চেক রিপাবলিকে ২৬, আয়ারল্যান্ডে ১৯, আলজেরিয়ায় ১৯, মিসরে ৪৮ এবং ভিয়েতনামে ১৭, ওমানে ১৬, ফিলিস্তিনে ১৯, মিসরে ১৫, ফিনল্যান্ডে ১৯, ব্রাজিলে ১৯, ইকুয়েডরে ১৪, পর্তুগালে ১৩, রাশিয়ায় ১৫, ক্রোয়েশিয়ায় ১২, কাতারে ১২, ম্যাকাউয়ে ১০, এস্তোনিয়ায় ১০, জর্জিয়ায় ১৩, রোমানিয়ায় ১৩, আর্জেন্টিনায় ৯, স্লোভেনিয়ায় ১২, আজারবাইজানে ৯, বেলারুশে ৬, মেক্সিকোতে ৭, পাকিস্তানে ৬, সৌদি আরবে ৭, চিলিতে ৭, পোল্যান্ডে ৬, স্লোভাকিয়ায় ৩, পেরুতে ৬, ইন্দোনেশিয়ায় ৪, নিউজিল্যান্ডে ৫, সেনেগালে ৪ ও হাঙ্গেরিতে ৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া লুক্সেমবার্গে ৩, উত্তর মেসিডোনিয়ায় ৩, বসনিয়ায় ৩, ডোমিনিক প্রজাতন্ত্রে ২, মরক্কোতে ২, আফগানিস্তানে ৪, কম্বোডিয়ায় ২, বুলগেরিয়ায় ২, ক্যামেরুনে ২, মালদ্বীপে ২ এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যদিকে আন্দোরা, আরমেনিয়া, জর্ডান, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, মোনাকো, নেপাল, নাইজেরিয়া, শ্রীলঙ্কা, তিউনিসিয়া, ইউক্রেন, ভুটান, কোস্টারিকা, ভ্যাটিকান সিটি, জিব্রালটার, সার্বিয়া ও টোগোতে একজন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর