রবিবার, ৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

চিকিৎসা না পেয়ে দুই জেলায় ৬ মৃত্যু!

প্রতিদিন ডেস্ক

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা না পেয়ে ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সিলেটে এক আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রীসহ চারজন ও চট্টগ্রামে দুজন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদকদের পাঠানো খবর-

সিলেট : সিলেটে গত ৫ দিনে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে মারা গেছেন ৩ জন। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে এবার চার হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন এক আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী। তিনি হলেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কুচাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আখতার হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ বেগম। তিনি বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। গত শুক্রবার দুপুরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে বাসায়ই মারা যান।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহনাজ বেগমের বুকে প্রচ- ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। স্ত্রীকে নিয়ে আখতার হোসেন নর্থ-ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসপাতালে ভর্তি না করে দুটি টেস্ট দিয়ে তাকে বাসায় পাঠিয়ে  দেন। শুক্রবার ভোরে শাহনাজের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিয়ে আবারও নর্থ-ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে ‘সিট খালি নেই’ অজুহাত দেখিয়ে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইবনে সিনা হাসপাতাল ও ‘করোনা হাসপাতাল’ খ্যাত শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কোনো হাসপাতালই তাকে ভর্তি করেনি। অবশেষে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে বাড়িতে নিয়ে আসা হয় শাহনাজকে। দুপুরের দিকে শাহনাজ বাড়িতেই মারা যান।

আখতার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকেও রোগীরা যদি সেবা না পান তবে সিলেটে এত বড় বড় হাসপাতাল থেকে লাভ কী? চিকিৎসাসেবা না দিয়ে যেসব হাসপাতাল রোগীদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে- সেসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে তিনি সরকারের প্রতি দাবি জানান।  এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানান, রোগীদের চিকিৎসাসেবা না দেওয়ায় কয়েকটি হাসপাতালকে লিখিতভাবে সতর্ক করা হয়েছে। চিকিৎসা নিয়ে হয়রানির ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ দিচ্ছেন না। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।

চট্টগ্রাম : শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার পর থেকে দুই ভাইয়ের আইসিইউর জন্য পরিবারের সদস্যরা ছুটেছেন হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। আইসিইউর আশায় করেছেন একের পর এক ফোন। কিন্তু কোনো কিছুর বিনিময়েও জোগাড় করতে পারেননি আইসিইউ। শেষ পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পরপারে পাড়ি দিলেন দুই ভাই মো. শাহ আলম ও শাহ জাহান। শুক্রবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ৮ ঘণ্টার ব্যবধানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান দুই ভাই। জানা গেছে, চার দিনে আগে হাটহাজারী উপজেলা সদরের গোলাম রসুলের দুই ছেলে শাহ আলম ও শাহ জাহান করোনাভাইরাস উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এক পর্যায়ে তাদের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে চিকিৎসকরা তাদের আইসিইউতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটতে থাকেন আইসিইউর আশায়। জোগাড় করতে না পারায় দুপুরে মারা যান শাহ আলম। ভাইয়ের মৃত্যুর ৮ ঘণ্টা পর মারা যান শাহ জাহানও। শাহ আলম সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসী ছিলেন। গত জানুয়ারিতে তিনি দেশে ছুটিতে আসেন। শাহ জাহান একজন ব্যবসায়ী। হাটহাজারীতে তার কাপড়ের দোকান রয়েছে।

সর্বশেষ খবর