রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

চিরনিদ্রায় শায়িত ব্যারিস্টার রফিক-উল হক

বসুন্ধরা চেয়ারম্যানের শোক

নিজস্ব প্রতিবেদক

চিরনিদ্রায় শায়িত ব্যারিস্টার রফিক-উল হক

খ্যাতিমান আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল হক আর নেই। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর আদ্্-দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তিন দফা জানাজা শেষে বেলা ৩টায় রাজধানীর বনানী কবরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে তাঁর লাশ দাফন করা হয়েছে। রফিক-উল হক এক ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সাবেক এই অ্যাটর্নি জেনারেল সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে দুই প্রধান রাজনৈতিক নেত্রী শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে আলোচিত ছিলেন। নানা সামাজিক কর্মকা-েও নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন ব্যারিস্টার রফিক।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ বিশিষ্টজনেরা। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থানরত রাষ্ট্রপতি এক শোকবার্তায় বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বিপুল অবদান রেখেছেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন অভিজ্ঞ আইনবিদকে হারাল। এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক সংবিধান সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। প্রধানমন্ত্রী একটি মিথ্যা মামলায় তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে তাঁকে গ্রেফতার করার পর জেল থেকে মুক্তির জন্য আইনি লড়াইয়ে এগিয়ে আসায় ব্যারিস্টার রফিকের ভূমিকার কথা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। শোকবার্তায় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, রফিক-উল হকের মৃত্যুতে দেশ একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান আইনজীবী এবং সমাজসেবীকে হারাল। এ ক্ষতি পূরণীয় নয়। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক অকুতোভয় আইনজীবী হিসেবে আজীবন সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। আইন পেশায় তাঁর অবদান জাতি দীর্ঘদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ রাখবে। ১৭ অক্টোবর থেকে আদ্্-দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরে বেলা ১১টায় রফিক-উল হকের প্রথম জানাজা হয় আদ্্-দ্বীন হাসপাতালেই। বাদ জোহর বায়তুল মোকাররমে হয় দ্বিতীয় জানাজা। এর আগে লাশ নেওয়া হয় তাঁর পুরানা পল্টনের বাসায়। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তাঁর লাশে শ্রদ্ধা জানান। পরে দীর্ঘদিনের কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে আনা হয় তাঁর লাশ। বেলা ২টায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে রফিক-উল হকের তৃতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়। তৃতীয় জানাজায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে তাঁর লাশে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। এ ছাড়া শ্রদ্ধা জানানো হয় বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে। এরপর তাঁর লাশ নিয়ে যাওয়া হয় বনানী কবরস্থানে। সেখানে স্ত্রী ফরিদা হকের কবরের পাশেই দাফন করা হয় প্রবীণ এই আইনজীবীকে। জানাজা শেষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর মৃত্যুতে আইনাঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। বিচারব্যবস্থায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। সাংবিধানিক বিষয়ে ছিল তাঁর অপরিসীম দক্ষতা।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা তথা অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। তিনি ছিলেন রাষ্ট্রের ষষ্ঠ প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল)। ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ¯œাতক এবং ’৫৭ সালে দর্শন বিষয়ে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ’৫৮ সালে এলএলবি পাস করেন। ’৬২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে সম্পন্ন করেন বার অ্যাট ল। ’৬৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে এবং ’৭৩ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে আইন পেশা শুরু করেন। বর্ণাঢ্য জীবনে তিনি আইন পেশায় দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর পার করেছেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাজ করেছেন। দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও আইনি বিষয় নিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করেছেন বর্ষীয়ান এই আইনজীবী।

আরও শোক : ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মৃত্যুতে আরও শোক জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। আরও শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলÑজাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় পার্টির মোস্তফা জামাল হায়দার, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম প্রমুখ।

এ ছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাপ, খেলাফত মজলিস, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হারুন-অর রশীদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শফিকুল বাহার মজুমদার টিপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল আলম প্রমুখ শোক জানিয়েছেন। দলমত-নির্বিশেষে সবাই বরেণ্য এই আইনজীবীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর