রবিবার, ২৮ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে প্রতিবেদন

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সর্বাধিক প্রচারিত ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ব্যাপক অগ্রগতির বিবরণ তুলে ধরেছে।

এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার। সেই দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ব্যাপারে আজ আমেরিকানদের কোনো কিছুই অজানা নেই। প্রথমে ব্রিটিশ এবং পরবর্তীতে পশ্চিমাদের শোষণ-নির্যাতনের কবল থেকে বাঙালিরা মুক্তিলাভের পর অর্ধশতকে বাংলাদেশ এমন এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে, মুসলিম অধ্যুষিত হওয়া সত্ত্বেও অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালনের ক্ষেত্রে। বলা হয়ে থাকে, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কার্যকর অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ধর্মের দোহাই দিয়ে মৌলবাদ-সন্ত্রাসে লিপ্তদের মূলোৎপাটনে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং এরই মধ্যে সে প্রমাণও রেখেছেন। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার স্বার্থে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতির প্রশ্নে মুসলিম মৌলবাদ রুখতে শেখ হাসিনা সরকারের ভূমিকার কথা সবাই উল্লেখ করেন। এতে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা ছিল, ২০১৮ সালের নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হলেও শেখ হাসিনার দল ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভে সক্ষম হতো। তবুও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়নি বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল উল্লেখ করেছে, মানবিক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ শুধু পাকিস্তানকেই ছাড়িয়ে যায়নি, নিকট প্রতিবেশী ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশে জন্মহার কমেছে সন্তোষজনক হারে। প্রতি নারী গড়ে ২.০৪ সন্তান নিচ্ছেন। ভারতে এ হার হচ্ছে ২.২২। প্রসবকালে সন্তান মৃত্যুর হারও কমেছে। প্রতি হাজারে ২৫.৬ জনের মৃত্যু হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর তা ছিল ১৪৮.২ জন। মানুষের গড় আয়ু বর্তমানে ৭২.৩ বছর হলেও স্বাধীনতা যুদ্ধের অব্যাহতি পর ছিল ৪৬.৬ বছর। এমন অবস্থায় ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা রিফিউজিকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। জার্নালের মতে, ৫০ বছরের বাংলাদেশ এবং তার নাগরিকরা এখন অনেক বেশি খুশি, স্বাস্থ্যবান, মানসম্পন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত এবং যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি আশাবাদী। অথচ অকারণে হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে মন্তব্য করেছিলেন। উল্লেখ্য, এ মাসের ১০ তারিখে নিউইয়র্ক টাইমসের উপ-সম্পাদকীয়তেও প্রায় একই ভাষায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অদম্য গতিতে এগিয়ে চলার ধারাবিবরণী সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে।

সিনেটর মেনেন্ডেজের শুভেচ্ছা : যুক্তরাষ্ট্র সিনেটে ফরেন রিলেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর (নিউজার্সি-ডেমোক্র্যাট) বব মেনেন্ডেজ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশিদের। মেনেন্ডেজ বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ইউএস কংগ্রেসের দ্ব্যর্থহীন সমর্থনের গর্বিত ইতিহাস রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সিনেটর টেড কেনেডির শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের ঘটনাবলিতে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি প্রসারিত হয়েছিল পাক হায়েনাদের বর্বরতার বিরুদ্ধে। পাকিস্তানিদের দ্বারা বাঙালিরা কীভাবে নিগৃহীত হচ্ছিলেন তাও অবহিত হয় বিবেকসম্পন্ন বিশ্ব। মোট কথা, টেড কেনেডি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের জনমত তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, মানবিক সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যকার বিদ্যমান সম্পর্ক আরও মধুর করতে আমি সচেষ্ট থাকব।’ যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়ন ও কল্যাণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অপরিসীম অবদানের কথাও অবলীলায় স্বীকার করেন এই সিনেটর।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর