শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ধৈর্য ধারণে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

ধৈর্য ধারণে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার

করোনাকালে ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী যে তছনছ চলছে তাতে সবার কাছে এটা প্রতিভাত হচ্ছে যে, কারও কাছে কোনো সম্পদ বা প্রতিপত্তি স্থায়ী নয়। মাহে রমজানে সিয়াম সাধনায় পার্থিব জীবনযাপনের নিত্যতা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও একই মূল্যবোধ জাগ্রত হয়। ধন-সম্পদের প্রাচুর্যে ভরা আরাম-আয়েশ উল্লাস ঐশ্বর্যময় জীবনযাপনে চিরন্তন শান্তি নেই। ভোগে নয় ত্যাগেই মুক্তি। এই উপলদ্ধিরও বিকল্প নেই, কৃচ্ছ্রতা সাধনের মধ্যে রয়েছে স্থায়ী পরিতৃপ্তি ও কল্যাণের নিশ্চয়তা। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ রব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন ‘তোমাদের নিকট যা আছে তা নিঃশেষ হবে এবং আল্লাহর নিকট যা আছে তা স্থায়ী। যারা ধৈর্য ধারণ করে আমি নিশ্চয়ই তাদেরকে তারা যা করে তা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।’ (সুরা আন নাহল। আয়াত ৯৬- ৯৭)।

আল কোরআনের ২৫তম সুরা আল ফোরকানের ৬৩ হতে ৭৭ নং আয়াতসমূহে আল্লাহর বিশেষ ও প্রিয় বান্দাদের ১৩টি গুণ ও আলামত বর্ণিত হয়েছে। প্রথম ছয়টি গুণাবলির মধ্যে আনুগত্যের মূলনীতি এবং পরবর্তী গুণাবলিগুলো গোনাহ ও অবাধ্যতা হতে পরিত্রাণ প্রত্যাশার/প্রচেষ্টার নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে।

আনুগত্যের ছয়টি মূলনীতি : (১) নিজের বিশ্বাস, চিন্তাচেতনা, ইচ্ছা ও আকাক্সক্ষা, আচার-আচরণ ও স্থিরতাকে পালনকর্তার আদেশ ও অভিপ্রায়ের অনুগামী রেখে তার আদেশ-নিষেধ পালনের জন্য সদা উৎকীর্ণ থাকা।

(২) নম্রতাসহকারে চলাফেরা করা চলন-বলন আচার-আচরণে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। গর্বিত অহংকারীর ন্যায় পা না ফেলা। আবার ইচ্ছাকৃতভাবে রোগীদের ন্যায় অতি ধীরেও না চলা। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে না এবং সর্বদাই দুনিয়ার লাভ-লোকসানের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকে, সে সর্বদা দুঃখই ভোগ করে। (৩) কথাবার্তায় নিরাপত্তার সঙ্গে সব সময় সচেতন থাকা উচিত। সালামের জবাব দেওয়া, কারও মনে আঘাত লাগতে পারে, বিরূপ ভাব ও সংক্ষোভের উদ্রেক করতে পারে এমন সংলাপ পরিহার করা উচিত। সুবচন ও সুশীল আচরণ কখনই বিতন্ডার জন্ম দেয় না। (৪) ইবাদতে রাত্রি জাগরণ। যে সময় নিদ্রা ও বিশ্রামের সে সময়ে কষ্টকর হওয়া সত্ত্বেও নামাজে দাঁড়ানোর মতো উত্তম কিছুই নেই। তা লোক দেখানোর জন্য নয় এবং নাম যশের আশঙ্কা এখানে নেই।

(৫) দিবা-রাতে ইবাদতে মশগুল হয়েও নিশ্চিন্ত হয়ে কর্মহীন হয়ে বসে না থাকা। আল্লাহকে ভয় করা, জীবিকা অনে¡ষণ ও তার সাহায্য কামনা করা। (৬) ব্যয় করার সময় অপব্যয় না করা, কৃপণতা ও ত্রুটি না করে আয়-ব্যয়ের মধ্যে সমতা বজায় রাখা। বৈধ ও অনুমোদিত কাজে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করাও অপব্যয়ের অন্তর্ভুক্ত। রসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ব্যয় করতে গিয়ে মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন করা মানুষের বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। যে ব্যক্তি ব্যয়ের সময় মধ্যবর্তিতা ও সমতার ওপর কায়েম থাকে, সে কখনো ফকির ও অভাবগ্রস্ত হয় না।

গোনাহ ও অবাধ্যতা হতে পরিত্রাণ প্রত্যাশার/প্রচেষ্টার সাত নীতিমালা (৭) শিরক সর্ববৃহৎ গোনাহ। দুনিয়ার ভালোমন্দে কাউকে নিয়ন্ত্রক ভাবাও শিরক। (৮) কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা না করা এবং ব্যভিচারের নিকটবর্তী না হওয়া। (৯) তওবা করা। কঠোর অপরাধী যদি তওবা করে এবং বিশ্বাস স্থাপন করে সৎকর্ম করতে থাকে, তবে আল্লাহ তার মন্দ কর্মসমূহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। (১০) মিথ্যা ও বাতিল মজলিশে যোগ না দেওয়া, মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়া। (১১) যদি কেউ মিথ্যা ও বাতিল মজলিশের নিকটবর্তী হয়ে পড়ে তবে গাম্ভীর্য ও ভদ্রতাসহকারে তা এড়িয়ে বা পরিহার করে চলে যাওয়া উচিত। (১২) আল্লাহর আয়াত ও শরিয়তের বিধানাবলি শুধু পাঠ করা যথেষ্ট নয়, শ্রবণশক্তি ও অনুদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের উচিত এগুলো সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করা এবং তদনুযায়ী আমল করা এবং (১৩) নিজ সন্তান-সন্ততি ও স্ত্রীর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা। তাদের আল্লাহর আনুগত্যে মশগুল দেখা।

লেখক : সাবেক সচিব ও এনবিআরের প্রাক্তন চেয়ারম্যান।

সর্বশেষ খবর