সোমবার, ২১ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

পূর্বপরিকল্পিতভাবেই মা বাবা বোনকে হত্যা মেহজাবিনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর কদমতলীতে বাবা, মা ও বোনকে হত্যায় অভিযুক্ত মেহজাবিন ইসলাম মুনকে চার দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য মেহজাবিনের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কদমতলী থানার পরিদর্শক জাকির হোসেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ ছাড়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মো. শফিকুল ইসলাম অরণ্যের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৩১ আগস্ট ধার্য করেছে আদালত। শফিকুল আহত অবস্থায় বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। তাকে পুলিশি পাহারায় রাখা হয়েছে। সুস্থ হলে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে বলে জানিয়েছেন কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর। তিনি বলেন, পূর্বপরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকান্ড ঘটায় মেহজাবিন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকালে কদমতলী থানার মুরাদপুর হাজী লালমিয়া সরকার রোডের ২৭৪/১ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলার বাসায় বাবা-মা-বোনকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করে মেহজাবিন। পরে তিনিই ট্রিপল নাইনে ফোন করে তিনজনকে খুনের বিষয়টি জানান। পরে পুলিশ এসে তাদের লাশ উদ্ধার করে। নিহতরা হলেন, মেহজাবিনের বাবা মাসুদ রানা, মা মৌসুমী ইসলাম ওরফে জোসনা ও ছোট বোন জান্নাতুল ইসলাম মোহনী। এ ঘটনায় নিহত মাসুদ রানার বড় ভাই মো. সাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে মেহজাবিন ইসলাম মুন ও তার স্বামী মো. শফিকুল ইসলাম অরণ্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় মেহজাবিনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকান্ডের দুই দিন আগে স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে মায়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন মেহজাবিন। এসেই তার ছোট বোন জান্নাতুলের সঙ্গে তার স্বামীর পরকীয়া রয়েছে জানিয়ে বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। তার জেরেই তিনি এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। নিহত মাসুদের বড় ভাই মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মাসুদ ২৬ বছর ধরে সৌদি আরব থাকেন। বিয়ের পর থেকে মেহজাবিন ও তার স্বামী শফিকুল টাকা ও সম্পত্তির জন্য মাসুদের স্ত্রী মৌসুমীকে বিভিন্নভাবে জ্বালা-যন্ত্রণা করতেন। মৌসুমী টাকা পয়সা দিতে রাজি না হওয়ার ছয় মাস আগে তাদের হত্যার জন্য পরিকল্পনা করে মেহজাবিন দম্পতি। গত ৩ মাস আগে মাসুদ দেশে ফেরেন। এরপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী চায়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অচেতন করে। পরে বাবা, মা ও বোনকে ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডিসি শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, ছোট বেলা থেকেই মেহজাবিন ও তার বোনকে মা মৌসুমী দেহ ব্যবসায় বাধ্য করান। এ ছাড়া বাবা মাসুদ আরেকটি বিয়ে করে সংসার গড়েন। এসব ক্ষোভ থেকেই মেহজাবিন তাদের খুন করেছেন বলে জানিয়েছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, টাকা পয়সা ও সম্পত্তির ক্ষোভ থেকে হত্যা করা হয়েছে।

আমরা সব বিষয় সামনে রেখে তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছি। ইতিমধ্যে মেহজাবিনের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। আমরা রিমান্ডে হত্যাকান্ডের আদ্যোপান্ত জানার চেষ্টা করব। জানা গেছে, এর আগে মেহজাবিন তার গৃহশিক্ষককে হত্যা করে ১ মাস ২২ দিন জেল খাটেন। ২০১৬ সালের দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওই মামলায় মেহজাবিন ছাড়াও তার মা মৌসুমী এবং খালা আসামি। বর্তমান ওই মামলায় তারা জামিনে রয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর