বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
আইজিপির কঠোর বার্তা

পশুবাহী গাড়িতে চাঁদা চাইলেই শাস্তি

আলাউদ্দিন আরিফ

পশুবাহী গাড়িতে চাঁদা চাইলেই শাস্তি

কোরবানির পশুবাহী নৌযান ও ট্রাকে চাঁদাবাজি বন্ধ, দেশব্যাপী নিরাপত্তা জোরদার, পশুর হাটে নি-িদ্র নিরাপত্তা, চামড়া পাচার রোধ, সড়ক-মহাসড়কে যানজট নিরসন, নৌযান ও ফেরিঘাটে সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনাসহ ঈদের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সমন্বয়ে ভার্চুয়াল সভা করে ১৬টি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে লিখিত নির্দেশনা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসদুজ্জামান খান কামাল। এ ছাড়া গতকাল পুলিশ সদর দফতরে আসন্ন ঈদুল আজহায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজি বন্ধে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলা পুলিশ সুপারদের (এসপি) বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন আইজিপি।

পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক মো. হায়দার আলী খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পশুবাহী গাড়িতে চাঁদা দাবিসহ কোনো অভিযোগ এলেই আমরা কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব। চাঁদাবাজি বন্ধ ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি রোধে পুলিশ সদর দফতর থেকে সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। আইজিপি মহোদয় নিজেও চাঁদাবাজি বন্ধ, চামড়া পাচার রোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ ও জেলার এসপিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন।’ কয়েক দিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে ঈদুল আজহা উপলক্ষে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, শিল্পাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করণীয় নিয়ে ভার্চুয়াল সভা হয়। এতে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব কোরবানির পশু পরিবহন, চামড়া পাচার, মলম পার্টি, জাল টাকা, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত কেন্দ্র করে মহাসড়কে যানজট রোধের বিষয় তুলে ধরেন। সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভারত ও মিয়ানমার থেকে গবাদি পশু প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, শিল্পশ্রমিকদের বেতন-বোনাস- ভাতার বিষয়টি মনিটরিং করতে মন্ত্রণালয়ের ২৩টি কমিটি কাজ করছে। সভায় আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, অনেক রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে। নির্মাণকাজ চলায় ঢাকা-টঙ্গী-গাজীপুর মহাসড়কে যান চলাচল দুর্বিষহ হয়ে পড়বে। টঙ্গী-গাজীপুরের প্রধান সড়ক শুধু ইট দিয় মেরামত না করে টেকসই মেরামত প্রয়োজন। চন্দ্রা-টাঙ্গাইল চার লেন সড়ক পরে দুই লেন হওয়ায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পুব পাশে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া নলকা ব্রিজের কারণে দীর্ঘ যানজট তৈরি হচ্ছে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে একটি অস্থায়ী বেইলি ব্রিজ করার প্রস্তাব রাখেন তিনি। সভায় এসবি-প্রধান বলেন, ২৩৬টি শিল্পকারখানার মালিক শ্রমিকদের মে মাসের বেতন দেননি। এসব শিল্পকারখানার শ্রমিকরা বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলন করতে পারেন। র‌্যাবের প্রতিনিধি বলেন, টোল প্লাজায় টোল আদায়ের কারণে দীর্ঘ যানজট হয়। তাই আগে থেকে অনলাইনে বা ব্যাংকের মাধ্যমে টোল নেওয়ার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেন তিনি। সভায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে বা গবাদি পশুর হাটে ওয়াচ টাওয়ার বসিয়ে বাইনোকুলার ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, পকেটমারসহ দুষ্কৃতকারীদের ওপর নজরদারি রাখতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, লঞ্চ ও ফেরিঘাটে সতর্ক নজরদারি অব্যাহত রাখবে। অজ্ঞান পার্টি-মলম পার্টির দৌরাত্ম্য রোধে অপরিচিত কারও কাছ থেকে কোনো কিছু না খাওয়ার বিষয়ে যাত্রী, বেপারি ও জনসাধারণকে সতর্ক করতে হবে। সভায় সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘সরকারি বন্ধে মহানগর, জেলা-উপজেলা সদর, হাটবাজার ও গ্রোথ সেন্টার এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই রোধে গোয়েন্দা নজরদারিসহ পুলিশ ও র‌্যাবের টহল বাড়াতে হবে। বিদ্যুৎ প্রকল্প, গার্মেন্টসহ বিভিন্ন প্রকল্প প্রতিষ্ঠানে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কোরবানির পশুর হাটে নিরাপত্তা বিষয়ে সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে- ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী পশুর হাটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নজরদারি বাড়াবে ও অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করবে। ইজারাদার, ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। হাটে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও আনসার মোতায়েন রাখা হবে।

পশুবাহী নৌযান ও ট্রাকে চাঁদাবাজি বন্ধ প্রসঙ্গে বলা হয়- ‘দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত কোরবানির পশুবাহী নৌযান ও ট্রাকে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। পশুবাহী যানে হাটের নাম বা গন্তব্য লিখে স্টিকার সংযুক্ত করতে হবে। জোরপূর্বক কোনো হাটে পশু নামাতে বাধ্য করা যাবে না। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতর, বিজিবি, র‌্যাব, এসবি, কোস্টগার্ড, হাইওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ ও সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার কর্মীরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সড়ক-মহাসড়ক ও শহর এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে হাইওয়ে পুলিশ ও আনসার মোতায়েন থাকবে। ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে যানজটের কারণ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে হবে। পুলিশ ও হাট ব্যবস্থাপনা কমিটি পশুর হাটের পাশের এলাকায় যানজট নিরসনে দায়িত্ব পালন করবে। আরিচা, দৌলতদিয়া, মাওয়া, বাংলাবাজারসহ সব ফেরিঘাটে যানবাহন পারাপারের সময় যাতে যানজট সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মাওয়া-বাংলাবাজার রুটে অতিরিক্ত ফেরি রাখতে হবে। বিকল ফেরিগুলো দ্রুত মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করতে হবে। নৌযানে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তা বিষয়ে বলা হয়, ‘ঈদের আগে স্বার্থান্বেষী মহল গুজব বা উসকানি দিয়ে যাতে শ্রমিক অসন্তোষ ঘটাতে না পারে সে বিষয়ে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিল্প এলাকায় অগ্নিকান্ড বা দুর্ঘটনা রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। কাঁচা চামড়া যাতে ঢাকার বাইরে সীমান্ত অভিমুখে যেতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থা কর্তৃক নজরদারি বাড়াতে হবে। কাঁচা চামড়া বেচাকেনাকেন্দ্রিক যাতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি না হয় সেদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ নজর রাখবে। এ ছাড়া ভার্চুয়াল সভায় শিল্পশ্রমিকদের বেতন-বোনাস সময়মতো দেওয়া, নৌপথে চুরি-ডাকাতি রোধে নজরদারি বাড়ানো, নগদ টাকা পরিবহনে পুলিশের সহায়তা দেওয়াসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আইজিপির নির্দেশনা : এদিকে গতকাল পুলিশ সদর দফতরে এক সভায় আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ ঈদুল আজহা কেন্দ্র করে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত বিষয়ে সব মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করেন। সভায় সরকারি বিধিনিষেধ শিথিল অবস্থায় ঘরমুখো মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে হাইওয়ে ও জেলা পুলিশ এবং নৌপথে নৌপুলিশ?কে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে বলেন। কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য বা অভিযোগ ছাড়া কোরবানির পশুবাহী যানবাহন না থামানোর জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া আইজপি প্রধান প্রধান ঈদ জামাতস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন রাখার নির্দেশ দেন। ঈদের ছুটিতে চুরি, ডাকাতিসহ অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশি টহল এবং বিট পুলিশিং কার্যক্রম বাড়ানোর নির্দেশ দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর