মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

এত অবৈধ অস্ত্রের উৎস কী

ইউপি নির্বাচনে অবাধ ব্যবহারে খুনোখুনি, উৎকণ্ঠা আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরেও

আলাউদ্দিন আরিফ

এত অবৈধ অস্ত্রের উৎস কী

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অনেকটা অবাধে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করে গুলি-পাল্টা গুলিতে কমপক্ষে ১৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের কারণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়ানক অবনতি হতে পারে। তাই দ্রুততার সঙ্গে অবৈধ অস্ত্রের উৎস, পরিবহনকারী, বিক্রেতা ও ক্রেতাসহ সব কারবারিকে চিহ্নিত করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিদেশের অস্ত্র কারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের ওপরও চাপ প্রয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ইউপি নির্বাচনে ব্যবহার হওয়া এত অবৈধ অস্ত্রের উৎস কী তা চিহ্নিত করতে হবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারত ও মিয়ানমারে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ছোট ছোট কারখানায় তৈরি হয় অত্যাধুনিক অস্ত্র। ভারতের বিভিন্ন এলাকায় কারবারিদের নিজ বাড়ি বা ভাড়া করা বাসায় লেদ মেশিন বসিয়ে তৈরি করা অস্ত্র দেশি-বিদেশি চক্রের হাত ঘুরে চলে আসছে বাংলাদেশে। এসব অস্ত্র এবার ব্যবহার হচ্ছে ইউপি নির্বাচনে আধিপত্য বিস্তার, দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। তাই পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিকে (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) অবৈধ অস্ত্রের উৎস, চোরাচালানি ও ব্যবহারকারী নির্মূলে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সেটা সম্ভব না হলে ভবিষ্যতে এর চড়া মূল্য দিতে হবে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে অবৈধ অস্ত্র আসে মূলত ভারত, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কা থেকে। ভারতের বিহার রাজ্যের মুঙ্গের, ঝাড়খন্ড, মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও মালদহসহ বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্রের বেশ কিছু ছোট ছোট কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় অস্ত্র তৈরি করছে মুঙ্গেরে বন্ধ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন অস্ত্র কারখানায় কাজের অভিজ্ঞতা থাকা চৌকশ কারিগররা।

বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় ভারতে অস্ত্র তৈরির কমপক্ষে ৩০টি কারখানা রয়েছে। যেখানে তৈরি হওয়া অস্ত্র চলে আসে বাংলাদেশে। ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের কমপক্ষে ২০টি পয়েন্ট দিয়ে অনেকটা অবাধে এসব অস্ত্র দেশে ঢুকছে। আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত ও আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসীদের হাত ঘুরে এসব অস্ত্র চলে যাচ্ছে রাজনৈতিক দল আশ্রিত মাস্তানদের হাতে। যা দিয়ে নির্বাচনসহ বিভিন্ন সময়ে খুন-খারাবির ঘটনাও ঘটছে।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) সাবেক একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন,  হোলি আর্টিজান হামলাসহ দেশে জঙ্গিরা বড় বড় হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলোর মূল উৎস ছিল ভারতের মুঙ্গের। সেখানকার অস্ত্র দেশি-বিদেশি চক্রের মাধ্যমে জঙ্গিদের হাতে পৌঁছে যায়। ওই কর্মকর্তা বলেন, বিহারের রাজধানী পাটনা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বের শহর মুঙ্গের। কয়েক দশক ধরেই মুঙ্গের পরিচিত হয়ে উঠেছে বেআইনি অস্ত্র তৈরির জন্য। ভারতের বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী ছাড়াও তাদের তৈরি অস্ত্রের বড় একটি অংশ চলে আসে বাংলাদেশে। সেখানে স্থানীয় প্রযুক্তিতে একে-৪৭-এর আদলে ভয়ানক অস্ত্রও  তৈরি হয়। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত থেকে মুঙ্গেরের দূরত্ব খুব বেশি নয়। মুঙ্গের থেকে মালদহ হয়ে এসব অস্ত্র ঢুকে যায় বাংলাদেশে।

মুঙ্গের জেলা পুলিশ সুপার কিছুদিন আগে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মুঙ্গেরের বিভিন্ন কারখানা থেকে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। অস্ত্রের চাহিদা বেড়েছে। অস্ত্রের লাইসেন্স প্রক্রিয়ায় জটিলতার কারণেও অনেকে অবৈধ অস্ত্র কারবারিদের কাছ থেকে বন্দুক-পিস্তল কিনছে। পুলিশের চাপের মুখে মুঙ্গের থেকে অনেক বেআইনি অস্ত্র কারবারি এখন পশ্চিমবঙ্গ আর ঝাড়খন্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় চলে গেছে।’ বিজিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, ‘গত কয়েক বছরে কলকাতার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু অস্ত্র কারখানার হদিস পেয়েছে সেখানকার পুলিশ। সাধারণত আবাসিক বাড়ি ভাড়া নিয়ে লেদ  মেশিন বসিয়ে এসব কারখানা চালু করা হয়েছে। কারখানাগুলোর জন্য উচ্চ বেতনে কারিগর আনা হয় মুঙ্গের থেকে। তারা ফরমায়েশ অনুযায়ী অস্ত্র সরবরাহ করেন।

বিহার পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত মহানির্দেশক দেবকি নন্দন গৌতম একসময় মুঙ্গেরের পুলিশ সুপার ছিলেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘১৯৮৬ সালে মুঙ্গেরের দিয়ারা এলাকায় একটা সার্চ অপারেশন চালিয়ে একে-৪৭ এর প্রায় ১০০ কার্তুজ উদ্ধার করেছিলাম। ওই একে-৪৭ সেই বছরেই চেকোশ্লোভাকিয়ায় তৈরি হয়েছে। এক বছরের মধ্যেই সেগুলো পাওয়া যায় মুঙ্গেরে। যা সেখানকার স্থানীয় কারখানায় তৈরি করা। বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা আলাপকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে মুঙ্গেরে অস্ত্র তৈরির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘ইংরেজ সরকার ১৮৭৮ সালে যে অস্ত্র আইন তৈরি করে সেখানে মুঙ্গেরসহ বিহারের বেশ কয়েকটি শহরে ২০ জনকে নিজেদের বাড়িতে অস্ত্র তৈরির ছাড়পত্র দিয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতার পরে ১৯৪৮ সালে নতুন অস্ত্র আইনেও ১০৫ জনকে বন্দুক তৈরির লাইসেন্স দেওয়া হয়। যার মধ্যে ৩৭ জন লাইসেন্সধারী ছিল বন্দুক তৈরির জন্য। এই বেসরকারি নির্মাতারা ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের সময় পয়েন্ট ৪১৯ বোরের মাস্কেট রাইফেল তৈরি করতেন সেনাবাহিনীর জন্য। প্রায় ১০ একর এলাকাজুড়ে মুঙ্গেরে বন্দুক তৈরির কারখানা আছে, যেখানে ১২ বোরের সিঙ্গেল আর ডবল ব্যারেল বন্দুক তৈরি হয়। মুঙ্গেরের কিছু কারখানা পরে বন্ধ হয়ে যায়। ওইসব কারখানায় দেড় হাজারের বেশি কারিগর কাজ করতেন। তারা পরে ছোট ছোট কারখানা করে বা বিভিন্ন অবৈধ কারখানায় অস্ত্র তৈরি শুরু করেন এবং বংশানুক্রমে তা চালু রাখেন। মুঙ্গেরের চুরওয়া, বরহদ, নয়াগাঁও, তৌফির দিয়ারা, মস্তকপুর, শাদিপুর- এসব গ্রামে অবৈধ বন্দুক তৈরির কারখানা রয়েছে কুটির শিল্পের মতো। এসব অবৈধ কারখানাতে তৈরি হওয়া পিস্তল, রিভলবার, রাইফেল চলে আসে বাংলাদেশে। ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেছে, ‘নবাব মীর কাশিম আলী মুর্শিদাবাদ থেকে রাজধানী সরিয়ে নেন মুঙ্গের। সঙ্গে তার অস্ত্রাগারও নতুনভাবে তৈরি হয় সেখানে। নবাবের অস্ত্রাগারে কাজ করতেন চৌকশ কারিগররা। সেই কারিগরি বিদ্যা পরবর্তী প্রজন্ম উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে যায়। তাদের পরবর্তী প্রজন্ম অস্ত্র তৈরির কাজ করে চলেছেন।’ শুধু ভারতেই নয় বাংলাদেশের ভিতরও কিছু অবৈধ অস্ত্রের কারখানার সন্ধান পেয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। ইতিপূর্বে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় অস্ত্র তৈরির দুটি কারখানার সন্ধান পায়। ওইসব কারখানায় লম্বা বন্দুক, কাঁটা বন্দুক এবং শুটারগান তৈরি হতো বলে র‌্যাব জানায়। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ এবং নাইক্ষ্যংছড়িতেও অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানা পাওয়া যায়। পুলিশ ও র‌্যাব বাংলাদেশে অবৈধ অস্ত্র প্রবেশের যেসব রুট চিহ্নিত করেছে তার মধ্যে রয়েছে, ‘যশোরের বেনাপোল ও চৌগাছা সীমান্ত, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, সাতক্ষীরার শাঁকরা ও ভোমরা, মেহেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ও ভোলাহাট, লালমনিরহাটের বুড়িমারী, সিলেটের ডাউকি, কুমিল্লা সীমান্ত, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া। অবৈধ অস্ত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এম খুরশীদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে আমরা সবসময় তৎপর আছি। পুলিশের সব ইউনিটের অভিযান অব্যাহত আছে। এরপরও আমরা প্রতি মাসের শেষ সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে অবৈধ অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দিয়ে সেটা কার্যকর করছি।’ অবৈধ অস্ত্রের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার এম. মাহাবুব আলম বলেন, বাংলাদেশে বেশিরভাগ অবৈধ অস্ত্র আসে যশোর ও রাজশাহীর গোদাগাড়ী সীমান্ত দিয়ে। ভারতে বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট কারখানায় এসব অস্ত্র তৈরি হওয়ার তথ্য আমরা পেয়েছি। এসব অস্ত্রের গায়ে ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া’ লেখা থাকে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা ব্যক্তিদের জবানবন্দি থেকে জানতে পেরেছি ইদানীং সিলেট সীমান্ত হয়ে কিছু অস্ত্র আসছে। এসব অস্ত্র ভারতের মিজোরাম রাজ্যের বিভিন্ন কারখানায় তৈরির তথ্যও আমরা পেয়েছি।’ র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী দুটি দেশ থেকে অভিনব বিভিন্ন কৌশলে অবৈধ অস্ত্র আসছে এটা সত্য। বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, স্থানীয়ভাবে অস্ত্র তৈরি ও মেরামত করার কারখানার সন্ধান আমরা পেয়েছি। সেগুলোর বিষয়ে আমাদের অভিযান ও নজরদারি অব্যাহত আছে। পাশাপাশি আমরা এসব অবৈধ অস্ত্রের কারবারি, ক্রেতা, বিক্রেতাসহ সবার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। আমাদের নিজস্ব গোয়েন্দা নেটওয়ার্কসহ যখনই কোনো সূত্রে খবর পাই তখনই আমরা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করে থাকি।’ অবৈধ অস্ত্রের উৎস ও চোরাচালান প্রতিরোধ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবির পরিচালক (অপারেশনস) লে. কর্নেল হাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা যখনই অস্ত্র বা মাদকের কোনো কারখানার সন্ধান পাই বিএসএফ-বিজিবির মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মেলনসহ বিভিন্ন সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে প্রতিকার চাই। আমাদের নিজস্ব গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের মাধ্যমেও আমরা সীমান্তবর্তী এলাকায় অস্ত্রের কারখানা সম্পর্কে খবরাখবর রাখছি। যখই বিশ্বস্ত কোনো তথ্য আমরা পাই; সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিএসএফের কাছে তথ্য তুলে ধরে প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে বলি। একই সঙ্গে অবৈধ অস্ত্রের চোরাচালান বিষয়ে সীমান্তে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে।’ বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ আলী শিকদার (অব.) বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজনীতিতে এখন মূল্যবোধ অনেকটাই কমে গেছে। রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে দুর্বৃত্তদের হাতে। এখন কেউ ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান বা এমপি হতে পারলেই মনে করে পাঁচ বছর তার সামনে সম্পদ অর্জনের অগাধ সুযোগ। আর যে কোনো মূল্যে সেই সুযোগ হাসিল করতে পেশিশক্তি, অর্থের শক্তি এমনকি ধর্মীয় অনুভূতিও ব্যবহার করা হচ্ছে। স্বার্থান্বেষীরা নির্বাচনে জয়ের জন্য অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করবে এটা অস্বাভাবিক নয়। ইউপি নির্বাচনে আমাদের দেশে অতীতেও সহিংসতা হয়েছে; তবে এবার সহিংসতার মাত্রা ভিন্ন। নির্বাচনী সহিংসতায় ব্যাপক হারে গোলাগুলি হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘একটু পেছন থেকে বলতে গেলে, দেশে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার শুরু হয় সামরিক সরকারের আমলে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর মানুষের মধ্যে একটা প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছিল যে, এখান থেকে পরিত্রাণ পাব, কিন্তু এখন দেখি সেই প্রত্যাশাও নেই। এখন দেখা যাচ্ছে এটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে, দুর্নীতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। রাজনীতি যারা করেন তারা যে কোনো উপায়ে সম্পদ অর্জনের পন্থা বেছে নিচ্ছে। এখান থেকে তৈরি হচ্ছে দ্বন্দ্ব সংঘাত। তারাই অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করছে। এসবের অস্ত্রের উৎস ও রুট চিহ্নিত করে পুলিশসহ প্রশাসনকে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা সম্ভব না হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমাদের বিপুল প্রাণহানি দেখতে হবে।’ সাবেক আইজিপি ও কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ বলেন, বিশ্বের সবচাইতে লাভজনক ব্যবসার একটি অবৈধ অস্ত্রের কারবার। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৈধ এবং অবৈধ অস্ত্রের একটি ব্যবহার আমরা দেখে আসছি। এ সময় সাধারণত প্রয়োজন অনুসারে সরকারি সিদ্ধান্ত হয় বৈধ অস্ত্র থানায় জমা দেওয়ার। আরেকটা বিষয় হলো, অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রায়শই আমরা দেখি পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে অস্ত্র উদ্ধারের প্রতিযোগিতা হয়, কে কত বেশি অস্ত্র উদ্ধার করতে পারে। আর অস্ত্র চোরাচালানের জন্য যে রুটগুলো ব্যবহার হয় সেখানে গোপনে ও প্রকাশ্যে নজরদারি বাড়ানো জরুরি। আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ওইসব এলাকায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। নূর মোহাম্মদ আরও বলেন, গত কিছুদিন থেকে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা আমরা দেখছি। যে এলাকাগুলো নির্বাচনে সহিংসতাপ্রবণ বা যেখানে শঙ্কা থাকে, যেমন কিছু এলাকা থাকে বহু বছর থেকেই সহিংসতাপ্রবণ; বলা যায় নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কিছু এলাকা। সেখানে বিগত দিনে পরিস্থিতি কী ছিল তা পর্যালোচনা করে সেই এলাকাটিকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে নির্ধারণ করে শক্ত পুলিশিং ব্যবস্থা নিতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে সিনিয়র কর্মকর্তাদের নিবিড় তদারকি করা জরুরি। পাশাপাশি জনসাধারণকে সচেতন ভূমিকা রাখা জরুরি। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর