বুধবার, ২৫ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

দেশের স্বার্থে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলে দিন

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের মতবিনিময়

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

‘মালয়েশিয়া হতে পারে দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। এর মাধ্যমেই কাটবে করোনা-পরবর্তী বৈদেশিক শ্রমবাজারের অচলাবস্থা। তাই কোনো গোষ্ঠীর অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে দেশের স্বার্থে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলে দিন। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া সব বিধিবিধান মানতে প্রস্তুত জনশক্তি রপ্তানিকারকরা।’ গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ-বায়রার গণতান্ত্রিক সম্মিলিত জোটের মতবিনিময়ে অংশ নিয়ে জনশক্তি রপ্তানিকারকরা এ আহ্বান জানান।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন বায়রার সাবেক সভাপতি, সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ, সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপারসন এম এস সেকিল চৌধুরী, আটাবের সাবেক সভাপতি মনছুর আহমেদ কালাম প্রমুখ। পাশাপাশি মতবিনিময়ে বায়রার ৫ শতাধিক সদস্যও উপস্থিত ছিলেন।

ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফরে গিয়ে সেখানকার শ্রমিক সংকট নিজেই দেখে এসেছি। শ্রমিকের অভাবে তাদের রাবার প্লান্টেশনেই নষ্ট হচ্ছে, খেতেই নষ্ট হচ্ছে পাম অয়েল। আসলেই মালয়েশিয়ার প্রায় সব সেক্টরে শ্রমিক সংকট প্রকট। তাই বাজার খুললে মালয়েশিয়ায় বিশালসংখ্যক জনশক্তি পাঠানো সম্ভব হবে। সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে আমি চাই দ্রুত বাজার খুলে দেওয়া হোক।’ তিনি বলেন, ‘শ্রমবাজার চালু করা দুই দেশের সরকারের বিষয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে কোন পদ্ধতিতে বাজার খুলবে। যথাসম্ভব উন্মুক্ত থাকার কথা আমরা বলছি। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীও তা চান। এখানে মালয়েশিয়ার সিদ্ধান্তেরও বিষয় আছে। কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে বিভক্ত থাকলে মার্কেট নষ্ট হয়ে যাবে। যত দ্রুত সম্ভব বাজার খুলে দিতে হবে।’ বায়রার সাবেক সভাপতি বেনজীর আহমেদ এমপি বলেন, ‘মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা গত বছর থেকেই চলছে। এ নিয়ে বক্তব্য, বিবৃতি, মানববন্ধন, বৈঠক অনেক হয়েছে। এখন প্রয়োজন শ্রমবাজার চালু করে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো। বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এটাই একমাত্র সমাধান। এ সমাধান হাতে থাকার পরও ছেড়ে দেওয়া দেশের জন্যই হবে দুর্ভাগ্যের। এখন প্রধানমন্ত্রী ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত।’ তিনি বলেন, ‘বলা হচ্ছে সীমিতসংখ্যক রপ্তানিকারক হলে অভিবাসন ব্যয় হবে বেশি। অথচ আন্তর্জাতিক জরিপ বলছে বাংলাদেশের গড় অভিবাসন ব্যয় বর্তমান সময়ে ৪ লাখ টাকার কিছু বেশি। কিন্তু প্রস্তাবিত কাঠামোয় মালয়েশিয়ায় অভিবাসন ব্যয় হবে এর চেয়ে অনেক কম। আসলে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর এসব বক্তব্য নিজেদের স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।’ আয়োজক বায়রার গণতান্ত্রিক জোটের নেতা ও বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন বলেন, ‘দুই দেশের সরকার উদ্যোগ নিলেই মালয়েশিয়া হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় শ্রমবাজার। এখানকার মতো বেতন ও সুযোগ-সুবিধা অন্য শ্রমবাজারে নেই। অথচ দেশের একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এ শ্রমবাজার বন্ধ রাখার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। বাজার বন্ধ রাখাকে দীর্ঘায়িত করতে চাইছে। তারা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারকে বায়রার নির্বাচনের হাতিয়ারে পরিণত করেছে। এখন সরকারের কাছে অনুরোধ- দেশের স্বার্থে মালয়েশিয়ার বাজার খুলে দিন, সেটা যে প্রক্রিয়াতেই হোক, আমরা রাজি। সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়েই আমরা রাজি।’ তিনি বলেন, ‘বায়রার একজন সাবেক সভাপতি আবেদন জানিয়েছেন সীমিতসংখ্যক রপ্তানিকারক দিয়ে শ্রমবাজার চালু না করে বন্ধ রাখা হোক। একজন সাবেক সভাপতি কীভাবে দেশের ও শ্রমিকের স্বার্থের বিরুদ্ধে এভাবে অবস্থান নিতে পারেন! আর জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রের সীমিতসংখ্যকের জটিলতা তো নতুন কোনো বিষয় নয়। এ জটিলতা আগেও ছিল, এখনো আছে। এখনকার এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের চালু শ্রমবাজারগুলোয়ও সীমিত পদ্ধতি চালু আছে। এজন্য বাজার বন্ধ রাখার অপপ্রয়াস দেশের জন্য ক্ষতিকর।’ আটাবের সাবেক সভাপতি মনছুর আহমেদ কালাম বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠী শ্রমবাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলছে। এ খেলা বন্ধ করে অবিলম্বে বন্ধ শ্রমবাজার খুলে দেওয়া প্রয়োজন।’ সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপারসন এম এস সেকিল চৌধুরী বলেন, ‘রেমিট্যান্স আহরণের অন্যতম বৃহৎ খাতের পরিচালক হিসেবে জনশক্তি রপ্তানিকারদের যে স্বীকৃতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পাওয়া দরকার তা এখনো আসেনি। তা আদায়ে সবাইকে এক ছাতার নিচে আসতে হবে। পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে বিভেদ না করে বন্ধ শ্রমবাজার চালু করাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।’

সর্বশেষ খবর