বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

শাবি ছাত্র বুলবুল খুনের নেপথ্যে ছিনতাই : পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতেই খুন হয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী বুলবুল আহমদ। ছিনতাইয়ে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের একজনের কাছ থেকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ছোরা ও বুলবুলের মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতাররা হলেন- শাবিপ্রবির পাশের টিলাগাঁওয়ের গোলাব আহমদের ছেলে কামরুল আহমদ (২৯), মৃত তছির আলীর ছেলে হাসান (১৯) ও আনিছ আলীর ছেলে আবুল হোসেন (১৯)। এর মধ্যে গতকাল বিকালে সিলেট মহানগর হাকিম আদালতে তোলা হলে আবুল হোসেন বিচারক সুমন ভূইয়ার কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জনাববন্দি দেন। এ তথ্য জানিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার এসআই দেবাশীষ দেব বলেন, গ্রেফতার বাকি দুজন থানা হেফাজতে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে তোলার কথা। এদিকে বুলবুল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তার বন্ধু ও সাবেক সহপাঠীরা। গতকাল তার পিতৃনিবাস নরসিংদীতে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়। বেলা ২টায় জালালাবাদ থানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। এরপর তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী গ্রেফতার করা হয় কামরুল আহমদ ও মো. হাসানকে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তারাও হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরে কামরুলের বাড়ি থেকে বুলবুলের ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন সেট ও হত্যায় ব্যবহৃত ছোরা উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে আজবাহার আলী শেখ জানান, সোমবার শাবিপ্রবির পেছনে গাজীকালুর টিলায় আবুল হোসেনসহ চারজন অবস্থান করছিল। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে দুজন চলে যায়। সন্ধ্যার পর বাকি দুজনের সঙ্গে যোগ দেয় কামরুল। গাজীকালু এলাকায় সন্ধ্যার পর ঘুরতে যান শিক্ষার্থী বুলবুল আহমদ ও তার বান্ধবী ঊর্মি। ওই এলাকাটি নির্জন। তাদের সেখানে পেয়ে আবুল হোসেন, কামরুল ও হাসান তাদের কাছে মোবাইল সেট ও টাকা দাবি করে। একপর্যায়ে বুলবুলের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি ও ধস্তাধস্তি হয়। তখন তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ছিনতাইকারীরা বুলবুলের মানিব্যাগ ও ঊর্মির মোবাইল ফোন সেট, ব্যাগ কেন নেয়নি- সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিকরা। জবাবে আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘ঊর্মিকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তিনি বলেছেন ঘটনার সময় তিনি বুলবুলের কাছ থেকে একটু দূরে সরে গিয়েছিলেন। বুলবুলের মানিব্যাগও খোয়া যায়নি। গ্রেফতাররা বলেছেন ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছুরিকাঘাতের পর রক্ত দেখে তারা ভয়ে পালিয়ে যায়।’ ঘটনার পর হাসপাতাল থেকে ঊর্মির চলে যাওয়া এবং কললিস্ট মুছে ফেলার বিষয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্কের কারণে এ খুনের ঘটনা ঘটেছে, এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘ঊর্মি হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাকে পাওয়া যায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, তিনি জানতে পারেন বুলবুলের জানাজা ক্যাম্পাসে হবে। জানাজায় শরিক হতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন। তার চলে আসার পেছনে অপরাধমূলক কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। আমরা ঊর্মির মোবাইল ও কললিস্ট পরীক্ষা করে দেখেছি ঘটনায় জড়িত অভিযোগে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের সঙ্গে ঊর্মির মোবাইল যোগাযোগ ছিল না। তার মোবাইলে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য-উপাত্তও পাওয়া যায়নি।’

পরিবারকে লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের দাবি ৫০ লাখ : নিহত বুলবুলের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার দাবিতে গতকাল বিকালে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভ মিছিল শেষে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম আকাশ বলেন, ‘আমাদের চার দফা দাবির দ্বিতীয়টির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বুলবুলের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু আমরা চাই বুলবুলের পরিবারকে এককালীন ৫০ লাখ ও প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হোক।’

ছাত্রলীগের শোকর্যালি : বুলবুল হত্যার প্রতিবাদে ও অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচার দাবিতে শোকর‌্যালি করেছেন শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। গতকাল দুপুর ১২টায় কালো ব্যাজ ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। শোক র‌্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে গোলচত্বরে এসে শেষ হয়। এর আগে সকাল ১০টায় তিন দফা দাবি জানিয়ে ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা।

বুলবুলের হত্যাকারীদের শাস্তি দাবিতে নরসিংদীতে মানবন্ধন : নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, শাবিপ্রবি ছাত্র বুলবুলের হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার দাবিতে নরসিংদীতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টায় বন্ধুমহল যুব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্যানারে শহরের জেলখানা মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা মোড় প্রেস ক্লাবের সামনে এসে মানববন্ধনে মিলিত হয়। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে বুলবুলের সহপাঠী, স্বজন ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ অংশ নেয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘বুলবুলের হত্যা পরিকল্পিত। একে ছিনতাইকারীর ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তারা বুলবুলকে হত্যা করেনি। হত্যা করেছে পুরো নরসিংদীকে। হত্যা করেছে পুরো ছাত্রসমাজকে। যতক্ষণ পর্যন্ত বুলবুল হত্যার সঠিক বিচার না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।’ একের পর এক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন বুলবুলের বন্ধুরা।

সর্বশেষ খবর