বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
সংসদে পাল্টাপাল্টি তোপ

ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টায় মন্ত্রীরা অভিযোগ বিরোধীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারের মন্ত্রীরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ঢাকতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন বলে দাবি করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, সরকারদলীয় শরিক ও বিএনপির এমপিরা। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী মানুষের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে সমবেদনা জানালেও, মন্ত্রীরা ঠাট্টা, মশকরা করেন। জাতীয় সংসদে গতকাল কভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ সাম্প্রতিক সমস্যায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ জাতিকে জানাতে কার্যপ্রণালি বিধির ১৪৭ বিধির আওতায় আনা সাধারণ প্রস্তাবের আলোচনায় এসব কথা বলেন তারা।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ও দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা ভালো অবস্থায় যাব।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘মন্ত্রীরা ব্যর্থতা ঢাকতে প্রধানমন্ত্রী এবং বঙ্গবন্ধুকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। দেশে অভাব নেই, এটা ঠিক নয়। কিন্তু মন্ত্রীরা এটা স্বীকারই করতে চান না। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে গেছে। এর সঙ্গে সরকারের অনেকে জড়িত। তিনি প্রশ্ন রাখেন, যেসব ব্যাংক ডলারের দাম বাড়িয়েছে সেসব ব্যাংকের এমডিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন।’ সরকারের জ্বালানি নীতির সমালোচনা করে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘শাসনক্ষমতার কেন্দ্রে আছে কিছু ক্ষুদ্র ধনিক ও আমলা গোষ্ঠী। তাদের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে। জ্বালানি তেল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এক কথা বললেন, আর কর্মকর্তারা আরেক কথা বললেন। বৈশ্বিক কারণ আছে এটা ঠিক। কিন্তু নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখা দরকার, নীতি সঠিক কি না। জ্বালানি নীতি মূলত আমদানিনির্ভর। এ কারণে জ্বালানি সংকটের সময় এ খাত মুখথুবড়ে পড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে, তা হলো গরু মেরে জুতো দান।’

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, ‘সত্য স্বীকারে আওয়ামী লীগের ব্যাপক ব্যর্থতা আছে। তাদের উচিত সত্য স্বীকার করে নেওয়া এবং সমাধান বের করা। সংকট মোকাবিলায় সরকারের পরিকল্পনা কী, তা তুলে ধরা। তিনি প্রশ্ন রাখেন, বিপিসির টাকা কোথায় গেল। ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পথে। সেসব ব্যাংকে কেন বিপিসির টাকা রাখা হলো। তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকার জন্য সরকার গুম, খুনসহ যেসব কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি দিচ্ছে তা এক সময় বুমেরাং হবে। চলমান সংকট থেকে বের হতে হলে দুর্নীতি-অপচয় বন্ধ করতে হবে। সরকারকে জবাবদিহির মধ্যে আসতে হবে। কর্তৃত্ববাদী আচরণ পরিহার করতে হবে।’

সরকারের মন্ত্রীদের অতিকথনের সমালোচনা করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘মানুষের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা প্রকাশ করছেন। ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছেন। সেখানে মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য দুঃখ কষ্ট নিয়ে সমবেদনার বদলে ঠাট্টা-মশকরা করছেন। এটা মর্মান্তিক ও দুর্ভাগ্যজনক। আমি এর নিন্দা জানাই। দায়িত্ব পালন যারা করতে পারবেন না, তারা দায়িত্ব ছেড়ে দেন। মানুষকে বাঁচান, প্রধানমন্ত্রীকেও বাঁচান।’

বিরোধী দলের এমপিদের বক্তব্যের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও প্রতিবেশী ভারতে পাচার হওয়ার আশঙ্কাসহ নানা কারণে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। বিশ্বে যখন জ্বালানি তেলের দাম বেশি উঠেছিল সেই সময় বৃদ্ধি করলে লিটারপ্রতি ৬০ টাকা বাড়াতে হতো। তেলের দাম কিছুটা কমার পর দাম সমন্বয় করেছি।

বিরোধী দলের এমপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সারা বিশ্ব এখন অস্থিরতার মধ্যে আছে। কেবল বাংলাদেশ নয়। এ যুদ্ধের প্রভাব প্রতিটি দেশে ছুঁয়ে গেছে। সিঙ্গাপুরও বলছে তাদের এখন তৈরি হতে হবে। আমরা প্রস্তুত আছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সঙ্গে আছেন বলেই সেই প্রস্তুতি আছে। এত ভয় পেলে চলবে আপনাদের? অবশ্য আপনাদের ভয় পাওয়ার কথা। কারণ, আগের সরকার যেভাবে দেশ চালিয়েছে তা সবারই জানা। নার্ভাস হওয়ারই কথা। শেখ হাসিনার হাতে এ বাংলাদেশ নিরাপদ। বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা ভালো অবস্থায় যাব।

বিএনপির এমপি হারুনুর রশিদকে উদ্দেশ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, উনারা নিজেরাই বলছেন কভিড-১৯, বৈশ্বিক অস্থিরতা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ- এসব কারণে এই মূল্যস্ফীতি। কেউ অস্বীকার করছেন না। ৪৮ হাজার কোটি টাকা বিপিসি লাভ করেছে। আপনারা কী চান সরকারি সংস্থা দেউলিয়া হয়ে যাক।

 ৪৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৪৫ হাজার কোটি টাকা সরকারকে দেওয়া হয়েছে দেশ পরিচালনা করার জন্য। আপনাদের বলতে চাই, এতই যখন ফেসবুক থেকে তথ্য নেন, গুজবে কান দেবেন না। প্রধানমন্ত্রী ধীরে ধীরে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের দেশের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। নসরুল হামিদ বলেন, জাতীয় পার্টির ক্ষমতায় থাকতে বিদ্যুতের সিস্টেম লস ছিল ৪৪ শতাংশ। বিএনপির সময়ে ছিল ২২ শতাংশ। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, সিস্টেম লস ৭ শতাংশ।

বিশ্বের সবচেয়ে স্ট্যান্ডার্ড সিস্টেম লস হচ্ছে ৭.৬ শতাংশ। ২০০৯ সালে ১ কোটি গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ ছিল। এখন সাড়ে ৪ কোটি গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ।

 

সর্বশেষ খবর