সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ

মধ্যযুগীয় বর্বরতায় মানুষ খুনের লাইসেন্স দেওয়া যায় না

নিজস্ব প্রতিবেদক

গণপিটুনির নামে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় মানুষ হত্যার লাইসেন্স দেওয়া হবে সমাজের যে কোনো মানুষের জন্য আতঙ্ক ও অনিরাপত্তার কারণ। প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হলে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে না। রাজধানীর বাড্ডায় ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনিতে নিহত তাসলিমা বেগম রেণু হত্যা মামলায় সুবিচার নিশ্চিত করতে মামলাটি মনিটরিংয়ের নির্দেশ দিয়ে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাই কোর্ট। গতকাল বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ নির্দেশ ও পর্যবেক্ষণ দেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, রেণু হত্যা মামলা অতিরিক্ত মহানগর ষষ্ঠ দায়রা আদালতে বিচারাধীন। ভিকটিম পালিয়ে যাচ্ছিলেন না। তার হেফাজতে কোনো শিশুকে পাওয়া যায়নি। সে সময় কোনো অভিভাবক সন্তান হারানোর অভিযোগ না করা সত্ত্বেও আসামিরা বেআইনি জনতা গঠন করেন, উসকানিমূলক স্লোগান দিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে বেআইনি অনুপ্রবেশ করেন এবং ভিকটিমকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে নিয়ে আসেন। মৃত্যু নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে কোনোরূপ অপরাধ না করা সত্ত্বেও এ অসহায় মায়ের বাঁচার আকুতিকে উপেক্ষা করে তার শরীরে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে উপর্যুপরি এবং ক্রমাগত আঘাত করেন আসামিরা। ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত করার অভিন্ন উদ্দেশ্য ঘটনাস্থলেই উদ্ভব হওয়ার প্রমাণ রয়েছে।

আদালত বলেন, গণপিটুনির নামে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় মানুষ হত্যার লাইসেন্স দেওয়া হবে সমাজের যে কোনো মানুষের জন্য আতঙ্ক ও অনিরাপত্তার কারণ। প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হলে এরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হবে না। সর্বোপরি দুটি নিরপরাধ শিশুকে মাতৃহারা করার শাস্তি নিশ্চিত হওয়া অপরিহার্য।

সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মামলার রায় ও আদেশ হওয়ার আগে তথা মামলা চলাকালে সাক্ষীদের যথারীতি ও যথাসময়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তদারকির জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ৪৩৯(১) ধারার বিধান অনুযায়ী এ রুল জারি করা হয়েছে, যা মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে। আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার জেলা প্রশাসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। সংবিধানের ১১২ নম্বর অনুচ্ছেদের আলোকে এ মামলা চলাকালে সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত তদারকি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতের পিপি ও তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাই কোর্টের আদেশের অনুলিপি সংশ্লিষ্ট আদালত, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে পাঠানো হয়েছে। ২০১৯ সালের ২০ জুলাই সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় মেয়েকে ভর্তি করতে স্থানীয় একটি স্কুলে যান তাসলিমা বেগম রেণু (৪০)। এ সময় তাকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। ওই রাতেই রেণুর ভাগনে নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনকে আসামি করা হয়। পরে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে গণপিটুনিতে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্তের পর গ্রেফতার করে পুলিশ।

সর্বশেষ খবর